প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে টুনটুনিকে খেতে দেয় রাতুল। রাতুল টুনটুনিকে খুব ভালোবাসে। ওদের দু'জনের মধ্যে খুব ভাব। সময় পেলেই রাতুল টুনটুনির সঙ্গে কথা বলে। ওকে গান শোনায়। টুনটুনিও অল্প
কয়েকদিনের মধ্যে রাতুলের ভক্ত হয়ে উঠে। রাতুলকে দেখলেই সে লাফাতে থাকে। লেজ নেড়ে কাছে ডাকে। এক কথায় টুনটুনি আর রাতুল দু'জন দু'জনার বন্ধু হয়ে ওঠে।
রাতুলের কাকা বিদেশ যাওয়ার সময় টুনটুনিকে রাতুলদের বাসায় রেখে গেছে। বিদেশ থেকে ফিরে এসে আবার নিয়ে যাবে। কিন্তু টুনটুনির সঙ্গে রাতুলের যে ভাব জমে গেছে তাকে নিয়ে গেলে রাতুল খুব কষ্ট পাবে। এটা নিয়ে মাঝে মধ্যেই কথা হয় রাতুলের মা-বাবার মধ্যে। তাই রাতুলের মা একদিন রাতুলকে বলে-
টুনটুনি বনের পাখি। ওরা কখনো পোষ মানে না। ওরা কারো বন্ধু হয় না।
দেখবে সুযোগ পেলেই উড়ে যাবে।
কিন্তু মায়ের কথা বিশ্বাস হয় না রাতুলের। পাখিটির নাম টুনটুনি রেখেছে রাতুলের বাবা। তাই সে সব কথা বাবাকে গিয়ে বলে দেয়। বাবা রাতুলের সব কথাতেই মাথা নাড়ে। তাই রাতুল বাবার ঘর থেকে চলে আসে টুনটুনির কাছে। বারান্দার এক কোণায় খাঁচার ভেতর টুনটুনির থাকার জায়গা। সে রাতুলকে দেখেই লেজ নাড়তে থাকে। রাতুল টুনটুনিকে
বলে- কী রে টুনটুনি? সুযোগ পেলেই নাকি তুই চলে যাবি? মা কিছুই জানে না। তুই আমার ভালো বন্ধু না?
রাতুলের কথা শুনে টুনটুনি আবারও লেজ নাড়তে থাকে। লাফাতে থাকে।
পাখি তো আর কথা বলতে পারে না। তাই রাতুল বুঝে নেয় লেজ নেড়ে সে
'না' করছে।
পরের দিন ২৬ মার্চ। সকাল সকাল স্কুলে যায় রাতুল। স্কুলের অনুষ্ঠানে সে
স্যার-ম্যাডামদের মুখে স্বাধীনতার গল্প শোনে। শোনে বাঙালিদের পরাধীনতার গল্প। গল্প শুনে মন খারাপ হয়ে যায় রাতুলের। সে বিষণ্ন মনে বাসায় ফিরে আসে। পড়ার টেবিলে বইয়ের ব্যাগটি রেখে দেয়। তারপর সোজা চলে যায় টুনটুনির কাছে। সে টুনটুনিকে খেতে দেয়।
মোবাইলে গান শোনায়। অনেকক্ষণ টুনটুনির সঙ্গে কথাও বলে। তারপর খাঁচার দরজা খুলে টুনটুনিকে বেড় করে নিয়ে আসে। টুনটুনির কপালে একটি চুমো দিয়ে বারান্দার গ্রিলের ভেতর দিয়ে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেয় টুনটুনিকে। ছাড়া পেয়ে টুনটুনিও ডানা মেলে উড়তে থাকে খোলা আকাশে। রাতুল আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে টুনটুনিকে দেখতে থাকে। এক সময় অদৃশ্য হয়ে যায় টুনটুনি। রাতুলের চোখ তখন পাশের বহুতল ভবনের ছাদের দিকে। ছাদের উপর লম্বা বাঁশের মাথায় পত, পত করে উড়ছে একটি লাল-সবুজের পতাকা।
নিজের রুমালে চোখ মুছে হাসিমাখা মুখে রাতুল এসে বসে মায়ের কোলে। আর মায়ের গলা জরিয়ে ধরে বলে-
জান মা, আজ আমাদের টুনটুনিরও স্বাধীনতা দিবস।