দুষ্ট রাতুল। শুধু শুধুই গাছপালাদের কষ্ট দেয়। এই পাতা ছিঁড়বে, ডাল ভাঙবে কখনো আবার ছুরি দিয়ে আঘাত করবে গাছের সারা শরীরে। রাস্তায় চলাফেরা করার সময়ও তার একই কাজ। কোনো গাছপালা দেখলেই হলো। হুট করে টান দিয়ে ভেঙে ফেলবে গাছের ডাল। আর সারাপথ সেই ডাল দিয়ে খেলতে থাকবে। এতেই নাকি সে খুব আনন্দ পায়। আম্মু তাকে কত করে যে বুঝালেন! কিন্তু কোনো কাজ হলো না। কিছুতেই বুঝলো না সে। আগের মতোই সে গাছপালাদের কষ্ট দিতে থাকল।
একদিন আম্মু রাতুলকে ডেকে বললেন, 'তুমি যে গাছপালাদের এত কষ্ট দিচ্ছ। তুমি কি জানো গাছ আমাদের কত আপন? গাছ আমাদের সবার বন্ধু। গাছ না থাকলে আমরা প্রাণীরা কেউ বাঁচতাম না। তুমিও না। জানো? গাছ আমাদের কত উপকার করে? গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। এই যে তুমি শ্বাসগ্রহণ করছ, এটাকে বলে অক্সিজেন। যা আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি জোগায়। গাছ আমাদের প্রতিনিয়ত এ অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছে। আর এ অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে আছি। এ অক্সিজেন যদি না পেতাম তাহলে আমরা ও প্রাণীরা কেউ বাঁচত না। বাঁচতে না তুমিও। অন্যদিকে, আমরা যে নিঃশ্বাস ত্যাগ করি, যাকে বলা হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। এই কার্বন ডাই-অক্সাইড আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গাছ আমাদের ত্যাগকৃত এই ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আর আমাদের বাঁচতে সাহায্য করে। যদি গাছ এই কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ না করত তাহলেও আমাদের কত যে অসুবিধায় পড়তে হতো! এই ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে ফের আমাদের দেহেই প্রবেশ করত। এতে কী হতো! আমরা তখন অসুস্থ হয়ে পড়তাম নিশ্চিত। হয়ত মারাও যেতাম অসুস্থ হয়ে। তাহলে ভেবে দেখ, গাছ আমাদের কত্ত আপন! আমাদের কত ভালো বন্ধু গাছপালারা! আর তুমি সেই গাছপালাদের শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছ। এত আপন ও প্রিয় বন্ধুদের কেউ কি কষ্ট দেয়, বলো?'
রাতুলের চোখ ছলছল করে উঠল। এবার সে তার ভুল বুঝতে পারল। বলল, 'স্যরি আম্মু, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনো গাছপালাদের কষ্ট দেব না। কিন্তু আম্মু, এতেই কি আমার এ ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হবে? গাছপালারা যে আমার ওপর অভিমান করে আছে তার কী হবে?'
আম্মু বললেন, 'এখন থেকে বেশি বেশি গাছপালাদের সেবা করবে। যত্ন নেবে। তাহলেই দেখবে তাদের সব অভিমান তারা ভুলে যাবে আর তারা তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।'
রাতুল তাই করল যেমনটি আম্মু বলেছেন। সে যত্ন নিতে লাগল গাছপালাদের। ছোটছোট চারাগাছে ঠিক মতো পানি দেওয়া, কোনো গাছ ঠিকমতো দাঁড়াতে না পারলে তার জন্য শক্তিশালী খুঁটির ব্যবস্থা করাসহ নানাভাবে সে যত্ন নিতে লাগল। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে রাতুল বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফলের গাছ রোপণ করতে লাগল। সত্যিই অল্প ক'দিনের মধ্যেই গাছেদের অভিমান ভাঙল এবং তারা রাতুলের বন্ধু হয়ে গেল।