সম্মান দানের মালিক আল্লাহ্‌

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ০৩ মে ২০২০, ১০:৪৭

যাযাদি রিপোর্ট

বান্দাকে সম্মান দান করার ক্ষমতা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের হাতে। তিনি যাকে খুশি সম্মান দান করেন এবং যাকে খুশি তার হাত থেকে সম্মান কেড়ে নেন। তাই ইমানদার মুমিন মুসলমান সম্মান প্রাপ্তির জন্য শুধুমাত্র তাঁরই ভরসা করেন। এ প্রসঙ্গে সূরা আল ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'বল, হে আল্লাহ্‌ ! তুমি সমুদয় রাজ্যের মালিক, যাকে ইচ্ছে রাজ্য দান কর আর যার থেকে ইচ্ছে রাজ্য কেড়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছে সম্মানিত কর আর যাকে ইচ্ছে অপদস্থ কর, তোমারই হাতে সব রকম কল্যাণ, নিশ্চয়ই তুমি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।' পবিত্র কোরআনে মহান আলস্নাহ কাফিরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করে সম্মান প্রাপ্তির প্রত্যাশা না করার জন্য কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে বলেন, 'যারা মুমিনদের পরিবর্তে অবিশ্বাসীদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করেন, তারা কি ওদের কাছে সম্মান আশা করেন? না, সকল সম্মানের মালিক আলস্নাহ। (সূরা আন-নিসা: আয়াত : ১৩৯) এ ব্যাপারে সতর্ক করে সূরা বাকারার প্রথমেই (২:১৪ নং আয়াতে) আলোচিত হয়েছে যে, মুনাফিকরা কাফেরদের কাছে গিয়ে বলত, 'আমরা তো প্রকৃতপক্ষে তোমাদের সাথেই আছি। \হমুসলিমদের সাথে আমরা তো হাসি-ঠাট্টা করি।' অর্থাৎ, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা করলে সম্মান পাওয়া যাবে না। কারণ, এটা আলস্নাহর এখতিয়ারাধীন এবং তিনি সম্মান কেবল তাঁর অনুসারীদেরকেই দান করে থাকেন। তিনি অন্যত্র বলেছেন, কেউ সম্মান চাইলে জেনে রেখ, সমস্ত সম্মান আলস্নাহরই জন্য। (সূরা ফাত্বির ৩৫:১০) তিনি আরও বলেন, 'সম্মান তো আলস্নাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের জন্যই, কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:৮) অর্থাৎ, তারা মুনাফিক ও কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে সম্মান কামনা করত। অথচ এটা হলো লাঞ্ছনা ও অপমানের পথ; ইজ্জত ও সম্মানের পথ নয়। এ আয়াতে কাফের ও মুশরিকদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য স্থাপন করাকে নিষিদ্ধ করে এ ধরনের আচরণে লিপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার উৎস ও মূল কারণ বর্ণনা করে একেও অযথা অবান্তর প্রতিপন্ন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'তারা কি ওদের কাছে গিয়ে ইজ্জত-সম্মান লাভ করতে চায়? তবে ইজ্জত-সম্মানতো সম্পূর্ণভাবে আলস্নাহরই মালিকানাধীন। কাফের ও মুশরিকদের সাথে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখা এবং অন্তরঙ্গ মেলামেশার প্রধান কারণ, তাদের বাহ্যিক মানমর্যাদা, শক্তি-সামর্থ্য, ধনবলে প্রভাবিত হয়ে হীনমন্যতার শিকার হয় এবং মনে করে যে, তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় তাদেরও মানমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। আলস্নাহ্‌তায়ালা তাদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডন করে বলেন, তারা এমন লোকদের সাহায্যে মর্যাদাবান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছে, যাদের নিজেদেরই সত্যিকারের কোনো মর্যাদা নেই। তাছাড়া যে শক্তি ও বিজয়ের মধ্যে সত্যিকারের ইজ্জত ও সম্মান নিহিত, তা তো একমাত্র আলস্নাহ্‌তায়ালারই মালিকানাধীন। অন্য কারো মধ্যে যখন কোনো ক্ষমতা বা সাফল্য পরিদৃষ্ট হয়, তা সবই আলস্নাহপ্রদত্ত। অতএব, মানমর্যাদা দানকারী মালিককে অসন্তুষ্ট করে তাঁর শক্রদের থেকে ইজ্জত হাসিল করার অপচেষ্টা সত্যিকার অর্থেই বড় বোকামি। উমর রাদিয়ালস্নাহু আনহু বলেছেন, 'যে ব্যক্তি বান্দাদের (মাখলুকের) মর্যাদাবান হওয়ার বাসনা করে আলস্নাহতায়ালা তাকে লাঞ্ছিত করেন'। [বাইহাকী, শু'আবুল ইমান; ৭৪২১] সুতরাং আয়াতের মর্ম এই যে, কাফের, মুশরিক, পাপিষ্ঠ ও পথভ্রষ্টদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে মর্যাদা ও প্রতিপত্তি অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টা করা অন্যায় ও অপরাধ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আরও হুশিয়ার করে আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'এবং ইতোপূর্বে তিনি কোরআনে তোমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, যখন তোমরা শুনবে আলস্নাহ্‌?র আয়াতকে অস্বীকার করা হচ্ছে কিংবা বিদ্রম্নপ করা হচ্ছে, তাদের সাথে তোমরা বস না, যতক্ষণ না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আলস্নাহ্‌? মোনাফেক ও যারা ইমানকে প্রত্যাখ্যান করে সবাইকে জাহান্নামে একত্রিত করবেন।' (সূরা নিসা আয়াত ১৪০) 'আর নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তিনি কিতাবে নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শোন আলস্নাহ্‌?র আয়াতসমূহ অবিশ্বাস করা হচ্ছে ও সেগুলোকে বিদ্রম্নপ করা হচ্ছে তখন তাদের সঙ্গে বসে থেক না যে পর্যন্ত না তারা অন্য কোনো প্রসঙ্গে প্রবেশ করে, নিঃসন্দেহ তাহলে তোমরাও তাদের মতো হবে। নিঃসন্দেহ আলস্নাহ্‌ মুনাফিকদের ও অবিশ্বাসীদের সম্মিলিতভাবে একত্রিত করতে যাচ্ছেন জাহান্নামে।' এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো, অন্যায় বা পাপের বৈঠকে অংশ নেওয়াটা পাপ কাজে অংশ নেওয়ার শামিল। যদি অংশগ্রহণকারী চুপচাপ বসেও থাকে। এছাড়া বাক-স্বাধীনতার ধুয়া তুলে দ্বীনের পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে দেওয়া যাবে না। সূরা নিসা'র ১৪১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- 'তারাই মুনাফিক, যারা তোমাদের সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং অমঙ্গলের প্রতীক্ষা করে। যদি তোমরা, আলস্নাহ্‌?র পক্ষ থেকে বিজয় লাভ কর তারা বলে : 'আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? কিন্তু যদি অবিশ্বাসীরা বিজয়ী হয়, তারা তাদের বলে, 'আমরা কি তোমাদের জন্য সুবিধা অর্জন করি নাই? এবং আমরা কি তোমাদের মুমিনদের বিরুদ্ধে পাহারা দিই নাই? কিন্তু শেষ বিচারের দিনে আলস্নাহ্‌? আমাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করবেন এবং আলস্নাহ্‌? কখনই মুমিনদের উপরে কাফিরদের বিজয়ের পথ রাখবেন না।' (৪:১৪১) এ আয়াতের শেষাংশে মুমিনদের আশাবাদ দেওয়া হচ্ছে যে, ইতিহাসের কালপরিক্রমায় সত্য-মিথ্যার মধ্যকার যুদ্ধে যত উত্থান-পতনই ঘটেছে, পরিণতি মুমিনদের পক্ষেই গেছে। আলস্নাহ কখনোই মুমিনদের ওপর কাফেরদের বিজয় দেননি।