রাজশাহীর পদ্মায় বর-কনেসহ নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার অভিযানে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কনেসহ নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন। দমকল বাহিনী, বিজিবি, নৌ-পুলিশ ও বিআইডাবিস্নটিএ'র ডুবুরি দল যৌথভাবে এই উদ্ধার অভিযান চালায়।
নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সকালে চারঘাট থেকে মনি খাতুন (৩০) নামের এক নারী, দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একলাস আলী (২২) ও আড়াইটার দিকে রতন আলী (৩০) নামের দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশেই এই দুইজনের লাশ ভেসে উঠে। পরে বিকেল ৪টার দিকে ডুবুরিরা পানির নিচ থেকে শামীম হোসেন (৩৫) ও তার মেয়ে রশ্মি খাতুন (৭) এর লাশ উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জন। ডুবে যাওয়া নৌকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান নৌ পুলিশের ওসি।
নিখোঁজরা হলেন- পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০), কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন (১৩) এবং খালা আঁখি খাতুন (২৫)।
শনিবার সকালে কনের চাচা শামিমের স্ত্রী মনি খাতুনের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে পাওয়া যায় তার আত্মীয় একলাস আলীর লাশ। এরপর পাওয়া গেছে কনের ভগ্নিপতি রতন আলীর লাশ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই রতনের মেয়ে মরিয়মের (৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। আর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন রতনের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে দমকল বাহিনী, বিজিবি ও নৌ-পুলিশ রাত থেকেই উদ্ধার অভিযান চালায়। সকালে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিআইডবিস্নটিএ'র একটি ডুবুরি দল। তারা যৌথভাবে উদ্ধার কাজ চালায়।
তিনি বলেন, এই নৌকা ডুবির ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সকাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়াও পদ্মাপাড়ে নিখোঁজ ও হতাহতের অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নিহতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আহতের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার বলেও জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।
তদন্ত কমিটির প্রধান আবু আসলাম বলেন, দুই নৌকায় ধাক্কা, নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া ও ওই সময় ঝড়-বাতাসের কারণে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এতে তারা নড়াচড়া করলে নৌকায় পানি উঠে যায়। এছাড়াও এক নৌকা থেকে আরেক নৌকায় লাফিয়ে উঠায় দুটি নৌকাই ডুবে যায়। তবে সে সময় ওই দিক দিয়ে একটি বালুবাহী বোর্ড যাচ্ছিল। তারা অনেককে উদ্ধার করেছে। বাকিরা সাঁতার কেটে পাড়া উঠে গেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চরখিদিপুর ও শ্রীরাপুর এলাকার মাঝ পদ্মায় বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে ৩৬ জন যাত্রী নিয়ে দুটি নৌকা ডুবে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের যাত্রী নিয়ে পবা উপজেলার খানপুর থেকে ডাইঙ্গেরহাট যাচ্ছিল নৌকা দুটি। রাতেই দমকল বাহিনী, বিজিবি ও নৌপুলিশ উদ্ধার অভিযান চালায়। খবর পেয়ে সিটি মেয়র ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
দুই মাস আগে চরখানপুরের মৃত ইনছার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রুমনের (২৫) সঙ্গে পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে নিখোঁজ কনের নাম সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০) রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। শুক্রবার বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে কনের বাড়ি ফিরছিলেন তারা।