বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

নানা ভাষার ঐকতানে একুশ উদযাপন

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নানা ভাষার ঐকতানে একুশ উদযাপন

'আমি বাংলায় গান গাই' পরিবেশন করলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া বিদেশি শিক্ষার্থীরা; দুই বাঙালি শিল্পীর কণ্ঠে বিখ্যাত 'জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল' ধরা দিল চাকমা আর বাংলা ভাষায়। এভাবে শুক্রবার দেশি-বিদেশি নানা ভাষার ঐকতানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এবং শহীদ দিবস উদযাপন করল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি ঢাকা বিভিন্ন বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিরাও এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আয়োজনে বাংলা আর চাকমা থেকে শুরু করে ছিল আফ্রিকা হাউসা-সোহায়েলি, দক্ষিণ ভারতের মালয়ালাম আর রুশ ভাষায় গান, কবিতা আর নৃত্যের পরিবেশনা।

প্রথমে পদযাত্রাসহ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সামনে স্থাপন করা অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন, ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, কূটনৈতিক কোরের ডিন ও ঢাকায় মরক্কোর রাষ্ট্রদূত মাজিদ হালিম এবং ইউনেস্কো বাংলাদেশের প্রতিনিধি সুসান ভাইজসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।

আলোচনা পর্ব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে কূটনৈতিক কোরের ডিন রাষ্ট্রদূত মাজিদ হালিম, ঢাকায় ইউনেস্কো প্রতিনিধি সুসান ভাইজ ও ফরেন সার্ভিস একাডেমির মহাপরিচালক ইকবাল আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতসহ শহীদরা মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সাস্কৃতিক শোষণের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজস্ব পরিচয়, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরা রক্ষার জন্য রক্ত ঝরিয়েছেন। একুশে ফেব্রম্নয়ারির চেতনা পরবর্তী সময়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকল আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হয়েছে ১৯৭১ সালে আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতায়।'

চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের এই সময়ে প্রযুক্তির পরিসরে বাংলাকে রক্ষায় উদ্যোগী হতে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী এবং উদ্যোক্তাদের ভূমিকা নেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, '২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট বিপস্নব ও তরুণদের প্রাণোৎসর্গের বিনিমিয়ে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এবং সাংস্কৃতিক শোষণসহ সব ধরনের বৈষম্য দূর করার বিরল সুযোগ তৈরি হয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে পৃথিবীর নানা প্রান্তে জানা-অজানা অসংখ্যা মানুষ যে নিরন্তর ভূমিকা রেখে চলেছে, একুশে ফেব্রম্নয়ারি তাদেরকে স্মরণের সুন্দর মুহূর্ত।

বিলুপ্তপ্রায়-সহ সব ধরনের ভাষা রক্ষায় ভূমিকা নেওয়ার উপর গুরুত্ব দিয়ে ঢাকায় ইউনেস্কো প্রতিনিধি সুসান ভাইজ বলেন, ইউনেস্কোর ধারণা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে ৮৩২২ ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ভাষা ব্যবহার হয়। তের শ ভাষা হয়ত বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির পথে।'

এবারের স্স্নোগান হচ্ছে: 'আমার ভাষারও গুরুত্ব আছে'। তার মানে, সবগুলো ভাষাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশেও বিলুপ্তপ্রায় ভাষা রয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।"

সাংস্কৃতিক আয়োজনে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি' পরিবেশন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। হ্যারি বেলাফন্টির বিখ্যাত 'জ্যামাইকান ফেয়ারওয়েল'-গানটির বাংলা ও চাকমা সংস্ককরণ পরিবেশন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণে থাকা আফ্রিকার পাঁচ শিক্ষার্থী পরিবেশন করেন পরিবার ও সমাজে নারীদের ভূমিকা নিয়ে হাউসা ভাষায় 'মাতা কুদুমতারে' গানটি। এরপর কেনিয়ার আরেকটি গান গেয়ে শোনান তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সামিয়া ইশরাত রনি তার মেয়ে লীলাবতীকে সঙ্গে নিয়ে আবৃত্তি করেন কবি আবু জাফর ওবায়দুলস্নাহর কবিতা 'কোনো এক মাকে'।

ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীরা গেয়ে শোনান 'সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি'। 'মা গো ভাবনা কেন' পরিবেশন করেন মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৪০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা গেয়ে শোনান 'লোকে বলে, বলে রে ঘর বাড়ি বালা নাই আমার'-সহ কয়েকটি লোকসংগীত। অ্যাক্রোবেট আর সুরের মিশেলে ঐতিহ্যবাহী চীনা নৃত্য 'শাও' পরিবেশেন করেন দেশটির শিল্পীরা। মালয়ালাম গেয়ে শোনান ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তা অ্যান মেরি। সবশেষে ইন্দোনেশিয়া আর রুশ নৃত্য ছিল পরিবশেনায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে