বুধবার ছাত্রদলের উদ্যোগে 'গণ-অভু্যত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগৃহীত
অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে থেকে 'সুযোগ-সুবিধা নিয়ে' নতুন দল গঠনের 'কৌশল' চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তারা চেষ্টা করছেন অতিদ্রম্নত কিছু কাজ শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার। কিন্তু এর মধ্যেই কতগুলো সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। সেই সন্দেহটা হচ্ছে যে, আদৌও নির্বাচনের ব্যাপারে এরা আন্তরিক কিনা।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের উদ্যোগে 'গণ-অভু্যত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি' শীর্ষক এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছাত্রদল ঢাকা মহানগরের সদস্য সংগ্রহ, ফরম বিতরণ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রমে নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণ করে উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কঠোর সমালোচনা করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা যিনি আছেন তিনি বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের লোকরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে তারা অংশ নিতে পারবে। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে, তারা নিজেদের স্বার্থে ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়। তাহলে কি আমরা মনে করব- তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছে?'
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনি অবিলম্বে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপরে আছে, সেই আস্থাও থাকবে না।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমি যখন প্রথম বলেছিলাম যদি এই অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষতা হারায় তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন বলেছিলাম- তা এখন প্রমাণ হচ্ছে। তখন একজন (উপদেষ্টা) বলেছিলেন- আমি এক এগারোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা এক এগারোর ভুক্তভোগী, এক এগারো যারা সৃষ্টি করেছিল তারা টিকতে পারেনি জনগণের কাছে। আবারও হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, যদি আবার কেউ সেই এক এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে আবার একদলীয় শাসন ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।'
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের জ্ঞান চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, 'আমাদের শুধু আন্দোলন, শুধু সংগঠন- এসব করলেই চলবে না, আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই জ্ঞানচর্চাটা করতে হবে। জ্ঞানচর্চাই হবে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে মূলমন্ত্র। তা না হলে আমরা এগুতে পারব না। যারা মেধাবী তাদের সামনে আনতে হবে। এই বিষয়টা যদি আমরা ছাত্রদলের মধ্যে চালু করতে পারি নিঃসন্দেহে ছাত্রদল হবে শক্তিশালী সংগঠন।'
বর্তমান প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, 'এই লড়াইটা নিয়ে আমরা এখন একটা ক্রান্তিকালের লড়াইয়ে এসে পৌঁছেছি। এই লড়াইয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য, টলারেন্স এবং মেধার চর্চা করা। আর সাইবার ওয়্যার, সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাইকে সক্রিয় হতে হবে।'
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ছাত্র বিষয়ক রকিবুল ইসলাম বকুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, উত্তরের মোস্তফা জামান, ছাত্রদলের পূর্বের সভাপতি সোহাগ ভূঁইয়া, উত্তরের সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণের সভাপতি শামীম মাহমুদ ও পশ্চিমের সভাপতি রবির খান বক্তব্য রাখেন।