সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত

কুয়েটে রাজনীতি বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত

দাবি মেনে না নেওয়ায়' উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে বর্জনের ঘোষণা

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

খুলনা অফিস
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকবে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিন্ডিকেটের সভায় মঙ্গলবার ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেমকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মঙ্গলবার ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এদিকে, বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের ফটকের চারপাশে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীকেও। তবে কোনও ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। দুপুরে প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিকসহ সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ছাড়তে দেখা গেছে। খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন, বুধবার বেলা ১টা পর্যন্ত তাদের আল্টিমেটাম ছিল। এ সময়ের মধ্যে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। সকাল ৯টা থেকে কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দাবিতে কুয়েট চিকিৎসাকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। ওই চিকিৎসাকেন্দ্রের দোতলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ। মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি সেখানে আছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের শাহাদুজ্জামান শেখ। 'হামলার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয়' এদিকে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই দাবি করে ছাত্রদল কুয়েট শাখা। একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন থেকে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া। তিনি বলেন, 'ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ও ছবি, ভিডিও ফুটেজ পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সে অনুযায়ী মঙ্গলবারের এই অনাকাঙ্‌িক্ষত ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ, ইফাজ ও ইউসুফ নামের তিনজন ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে। ছাত্রদল নেতা বলেন, 'সেই মিছিলের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কতিপয় মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিতে তেড়ে গিয়ে হামলা করেন। ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী, তাদের ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। এর জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সেই মিছিলকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে (যুবদল) ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাঁদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাঁদের নেই।' সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদল নেতারা বলেন, ওই সহিংসতায় ছাত্রদলের সমর্থকেরা কেবল ভুক্তভোগী বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং যেহেতু কুয়েটে ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনা 'ছাত্রদলের হামলা' শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হবে সর্বৈবভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ। ছাত্রদল নেতারা দাবি করেন, ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু না হলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জ্বীবিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত বলে তারাসহ আরও কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করেন 'সাধারণ শিক্ষার্থী' ব্যানারের পেছনে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক-বাহক ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা ও ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ওই 'মব' মিছিলটির আগের ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিশাল ব্যানার টানানো হয় এবং মিছিল থেকে বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের উলিস্নখিত সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরে কোনরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যক্কারজনক সহিংসতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'ছাত্রদলের হামলা' বলে পুরো ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যত বেশি তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে, তত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ন্যক্কারজনক এই ঘটনার সত্য রূপ পুরোই ভিন্ন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, সহসভাপতি হাবিবুল বাশার ও সাফি ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ স্থানীয় খুলনার ছাত্রদলের নেতারা। প্রসঙ্গত, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তারপর থেকেই ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেদিন রাতে ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি; মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়া; ২৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা এবং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ।## গলায় ফাঁস নেওয়া জবি শিক্ষার্থী আহাদকে বাঁচানো গেল না যাযাদি ডেস্ক গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার দুদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আহাদ হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আহাদ চট্টগ্রাম জেলার সিতাকুন্ড উপজেলার মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বায়েজিদ আলী বলেন, ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আহাদ। বুধবার সেখানেই তার মৃতু্য হয়। গত সোমবার পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় একটি ভাড়া মেস থেকে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় আহাদকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল, পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে আইসিইউ বেড খালি না থাকায় নেওয়া হয় ম্যাক্সএইড হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে এমআরআই সুবিধা না থাকায় আহাদকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে সেখানে তাকে 'ক্লিনিক্যালি ডেড' ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে পরিবারের অনুমতি নিয়ে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। আহাদের সহপাঠী ফিন্যান্স বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আল শাহরিয়ার শাওন বলেন, 'আহাদ ভাই কোনো প্রেম ঘটিত বিষয়ে জড়িত ছিলেন না। উনি ক্যারিয়ার নিয়ে ডিপ্রেশনে ছিলেন। চাকরি ও পড়াশোনা নিয়ে সবসময় চিন্তা করতেন। এসব কারণেই উনি হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।' অধ্যাপক বায়েজিদ আলী বলেন, 'সোমবার আহাদের ব্যাচের পাঁচটি কোর্সের মধ্যে তৃতীয় কোর্সের পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষা দিতে এসে সে পরীক্ষা কক্ষে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। সে তখন বলে যে তার ঘুম হয় না, পেট ফাঁকা লাগে, কিছু খেতে পারে না। তখন তাকে আমরা শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার ব্যায়াম করানোর ব্যবস্থা করি। সে সুস্থ বোধ করলে এক্সাম দিতে যায় এবং পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে কোর্স শিক্ষককে জানায়। ওইদিন বাসায় গিয়ে সে রুম বন্ধ করে রাখলে তার রুমমেটরা দরজা খুলে দেখে গামছা পেঁচিয়ে সে ঝুলে আছে। তার পা দুটো মাটি ছুঁয়ে ছিল বলে জানতে পারি। শুনেছি ছেলেটা ্তুওভার থিংকিং্থ সমস্যায় ভুগছিল, চাকরি বাকরি নিয়ে টেনশন করত।'##