বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

যুবকদের জন্য 'সর্বজনীন' সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব

সংবিধান অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ আইন উপদেষ্টার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার পক্ষে উপদেষ্টা আসিফ যত দিন ডেভিলরা থাকবে তত দিন অভিযান :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
যুবকদের জন্য 'সর্বজনীন' সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব

যুবসমাজের জন্য সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তারা জানান, এতে দেশের প্রতিরক্ষায় যুবসমাজ অংশ নিতে পারবে। মঙ্গলবার ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সংক্রান্ত অধিবেশনে তারা এ প্রস্তাব দেন। অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সিভিল মিলিটারি কোঅপারেশন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা প্রশ্ন করেছিলেন। সিভিল প্রশাসনের অফিসাররা ডিভিশন পর্যায়ে যে ওরিয়েন্টেশন করেন, এই ওরিয়েন্টেশনগুলা করা সম্ভব কি না? যাতে সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক বাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর বোঝাপড়া আরও বাড়ানো যায়। একটা প্রশ্ন ছিল আমাদের যুবসমাজের জন্য একটি ইউনিভার্সেল মিলিটারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নিয়ে। যেখানে যুবসমাজের যারা আছেন তারা মিলিটারি ট্রেনিং পেতে পারেন এবং দেশের প্রতিরক্ষায় তারা অংশ নিতে পারেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, তারা নিজ নিজ জেলায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে চান। রিমোট জায়গায় বা চরাঞ্চলে যেখানে হয়তো বেশি পরিমাণ ফোর্স দরকার বা লজিস্টিক নিয়ে যেতে হবে, এই ধরনের এলাকায় তারা অভিযান পরিচালনা করতে চান। সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল। বাংলাদেশ নেভির কাছে প্রশ্ন ছিল, জাটকাবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে বা আমাদের নদীতে যে সম্পদ আছে সেই সম্পদ রক্ষায় তারা আরও ওতপ্রোতভাবে কীভাবে সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারেন সে বিষয়ে।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি চিন ন্যাশনাল ফন্ট যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে তার কারণে কয়েকটি জেলায় পর্যটন শিল্প ব্যাহত হচ্ছে। এ পর্যটন শিল্প ব্যাহত হওয়ার কারণে সেখানকার ইয়াং জেনারেশন কাজ হারাচ্ছে, চাকরি হারাচ্ছে এবং তারা সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ করতে পারি সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল।

যেসব জেলায় অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলো কীভাবে ধ্বংস করা যায় সে বিষয়ে প্রশ্ন ছিল বলে জানান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ।

তিনি বলেন, 'আমি আমার সমাপনী বক্তব্যে বলেছি জেলা প্রশাসক হিসেবে আগামী দিনে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যেমন আমি বলেছি প্রায় ১৪০০ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, যেগুলো ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে লুট হয়েছিল। আড়াই লাখ গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। সেগুলো তাদের জেলাতে কোনো না কোনো জায়গায় আছে। সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে পড়তে পারে এবং তারা ব্যবহার করতে পারে। আমি উলেস্নখ করেছি স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরা বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হচ্ছে এবং কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা দেশকে একটা অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারে তাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।'

রমজান মাসে সরকারকে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য তাদের (ডিসি) নিজ জেলায় যেন কম রাখতে পারেন সে জন্য চেষ্টা করতে হবে। বিদু্যতের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, সেটা যাতে মোকাবিলা করা যায়, কৃষকরা যাতে সেচের উপকরণ এবং কৃষি উপকরণ সময়মতো পান সেসব বিষয় নিয়ে বলেছি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, 'আমি বলেছি, সাধারণ মানুষের তিনটি প্রত্যাশা এবং এই প্রত্যাশাগুলা আকাশচুম্বী নয়। প্রথম বলেছি, জীবন ও জীবিকার জন্য তারা নিরাপদে চলাফেরা করতে চান এবং রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চান। দ্বিতীয়তে বলেছি, দ্রব্যমূল্য তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যেন থাকে। এটার বাস্তবায়ন তারা দেখতে চান। আর তিন নম্বরটা বলেছি যে, সার্ভিস বা সেবা সরকারের কাছে তাদের পাওয়ার কথা। সেটা যেন কোনো সমস্যা ছাড়া, কষ্ট ছাড়া, কোনো ঝামেলা ছাড়া তারা পেতে পারেন। আমি বলেছি,মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক যারা আছেন মানুষের জন্য তারাই সরকার। কাজেই যে সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান করার কথা সেগুলো তাদেরকেই করতে হবে।'

যুব সমাজের সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যে চিফ অফ জেনারেল স্টাফ উনি বলেছেন- আমাদের আনসার ভিডিপির মাধ্যমে প্রত্যেক উপজেলায় প্রত্যেক ইউনিয়নে একটা করে কোম্পানি অলরেডি ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। এটাকে আরও ব্যাপক আকারে করা যায় কি না সে বিষয়ে একজন ডিসি অনুরোধ করেছিলেন। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার, আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা চিন্তা করতেই পারি এবং আমরা জানিয়েছি এটা যদি সরকার নির্দেশনা দেয়, তাহলে জনগণের সিদ্ধান্তই সরকারের সিদ্ধান্ত। নির্দেশনা পেলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এটা করতে প্রস্তুত- বলেন আব্দুল হাফিজ।

এখন অপারেশন ডেভিল হান্ট ছাড়া আরও কোনো অপারেশন চালানোর নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট হয়েছিল। তার মানে, যে অস্ত্র লুট হয়েছিল তার তিন-চতুর্থাংশের বেশি উদ্ধার হয়েছে। আমি মনে করি, এটি বিরাট সাফল্য। ৬ লাখ গুলির মধ্যে আড়াই লাখ এখনো উদ্ধার হয়নি। তার মানে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে চলমান যে অভিযান আছে তার মাধ্যমে উদ্ধার করা সম্ভবপর হবে।

কুকি চিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি কুকি চিনের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযান, সেটা চলছে। এ পর্যন্ত কুকি চিনের বিরুদ্ধে অভিযান করতে গিয়ে আমাদের সাত সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন। এ অভিযান চলবে তারা নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, নরসিংদীর ছয়টি ইউনিয়ন ও চরাঞ্চল দুর্গম। সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেসব জায়গায় স্পেশাল অপারেশন দরকার।

এসময় কোস্টগার্ডের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, গত কিছুদিন ধরে ইলিশের সরবরাহ বাজারে বেড়ে গেছে। মানুষ ইলিশ খেতে পারছে বা রপ্তানি হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে কোস্টগার্ডের অপারেশনের কারণে।

সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, নৌবাহিনীর সহকারী প্রধান (অপারেশন্স) রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, বিমান বাহিনীর সহকারী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবিধান অনুযায়ী কাজ করার

নির্দেশ আইন উপদেষ্টার

এদিকে, জেলা প্রশাসকদের আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্র্ব‌তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আইন, নীতিমালা ও সংবিধানে যা আছে, সেটি মেনে চললে জনগণের সেবা আর কল্যাণ দেওয়া ছাড়া জেলা প্রশাসকদের আর কোনো কাজই নেই। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।

আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের মেধাবী মানুষেরা জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন বা প্রশাসনে আসেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে। রাষ্ট্রের এত বড় একটি রিসোর্সকে গত ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণকে অত্যাচার করার জন্য, নিপীড়ন করার জন্য এবং তাদের অপকর্ম জায়েজ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কথাবার্তায় তাঁর মনে হয়েছে, তাদের যদি ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো হয়, জনগণকে সেবা করার জন্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য, ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা প্রদান করার জন্য এবং সেই সক্ষমতাও তাঁদের আছে। কিন্তু ওই রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাটা থাকে না।

আসিফ নজরুল বলেন, 'আমরা আশা করব ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, কোনো দিন যেন প্রশাসন ক্যাডারের যে অসীম সম্ভাবনাময় শক্তি রয়েছে, এটিকে যেন জনগণকে নিপীড়নের কাজে না লাগিয়ে, সংবিধান অনুযায়ী জনগণের সেবা করার কাজে যেন লাগানো হয়। এটাই আমার প্রত্যাশা থাকবে।'

জনগণকে সেবা দিতে আপনারা কী ফর্মুলা দিয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'এখানে ফর্মুলার ব্যাপার নেই। আইনে যা আছে, নীতিমালায় যা আছে, সংবিধানে যা আছে, সেটা মেনে চললে জনগণের সেবা আর কল্যাণ দেওয়া ছাড়া ওনাদের (ডিসি) আর কোনো কাজই নাই। সুতরাং আমাদের শুধু একটা কথাই যে আপনি আইন অনুযায়ী চলেন, বিবেক মতো চলেন। তাদের যে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে।'

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে

করার পক্ষে উপদেষ্টা আসিফ

এদিকে, ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অথবা প্রশাসক (পূর্ণকালীন) নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো পরিচালনা করার বিষয়ে খুব দ্রম্নতই সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন কি জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, 'দেখেন, এটি (স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি না থাকা) আমাদের প্রতিদিনের সমস্যা। কর্মকর্তাদের অধিকাংশকেই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার সংস্থায় কাজ করতে হচ্ছে। তাঁদের থেকে প্রতিদিনই শুনতে হচ্ছে যে "প্রশাসক দেন কিংবা নির্বাচন দেন।"'

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, 'বিভাগীয় কমিশনাররা কোনো না কোনো সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে আছেন, জেলা প্রশাসকদেরও জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে একজন কর্মকর্তার যখন দুই-তিনটা দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, তখন একজনের পক্ষে কোনোটাই ঠিকভাবে পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই জায়গা থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার মাধ্যমে সেখানে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আসা উচিত।'

এ বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, এ বিষয়ে সর্বশেষ জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সভায় আলোচনা হয়েছে। আলোচনা এখনো চলমান। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। তবে খুব দ্রম্নতই কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে, হয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অথবা প্রশাসক (পূর্ণকালীন) নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো পরিচালনা করা হবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিলে ভালো হয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ?'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অবশ্যই ভালো হয়।...কিন্তু আমার ব্যক্তিগত চিন্তা দিয়ে তো আর সিদ্ধান্ত হবে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে আসবে।'

যত দিন ডেভিলরা থাকবে

তত দিন অভিযান চলবে

দেশে যত দিন 'ডেভিলরা' থাকবে, তত দিন যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান 'ডেভিল হান্ট' চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার সকালে এক কর্ম অধিবেশন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের পরদিন ৮ ফেব্রম্নয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভা হয়। সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এদিন জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'ডিসিদের কিছু প্রশ্ন ছিল। আমরা সেগুলোর জবাব দিয়েছি। আমাদের বড় আশা ছিল, দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। দুর্নীতি কমাতে না পারলে উন্নতি হবে না। দুর্নীতি আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা।'

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিসিদের সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'আলোচনা হয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে পরিস্থিতির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।'

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ডিসিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কোনো কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ ছাড়া পুলিশের মারণাস্ত্র ও ছররা গুলির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ডিসিরা সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সদস্য বাড়ানোর কথা বলেছেন। তাঁরা নৌ পুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও শিল্প পুলিশে জনবল বাড়াতে বলেছেন। এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

'আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতি আছে'

প্রাথমিকে শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা যোগদানের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবির প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহানুভূতিশীল। এসব প্রার্থীদের নিয়োগ বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে। মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ কথা বলেছেন।

ডিসি সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, 'তাঁদের (আন্দোলনকারীরা) বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রায় হয়েছে। যেটিতে তাঁরা ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে আপিল করা হয়েছে। যেহেতু এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয় তাই প্রশাসনিকভাবে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই।'

তাদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, 'যখন ফল ঘোষণা করা হয়েছে তখন শুধু মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে ফল ঘোষণা করেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েই ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে তাঁরা মনে করছেন আইনি কাঠামোতেই কাজগুলো করা হয়েছে। সে হিসাবে তাঁরা (আন্দোলনকারী) যেটা চাচ্ছেন তাদের সঙ্গে সহানুভূতি রয়েছে। কারণ সরকার মনে করছে আইনসম্মতভাবেই করা হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে