ডিসি সম্মেলন

গণ-অভু্যত্থানে নিহতরা 'জুলাই শহীদ' নামে স্বীকৃতি পাবেন

গুরুতর আহতরা মাসিক ভাতা পাবেন ২০ হাজার টাকা, অঙ্গহানি হয়েছে তারা পাবেন ১৫ হাজার

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জুলাই অভু্যত্থানে নিহতরা জুলাই শহীদ ও আহতরা জুলাই যোদ্ধা নামে স্বীকৃতি পাবেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনদিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত তৃতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ফারুক-ই-আজম বলেন, জুলাই অভু্যত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা জুলাই শহীদ নামে খ্যাত হবেন। এই নিরিখে তাদের পরিবারগুলো সনদ ও পরিচয়পত্র পাবেন। জুলাই অভু্যত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তারা জুলাইযোদ্ধা নামে খ্যাত হবেন। তারা এই নিরিখে সনদ ও পরিচয়পত্র পাবেন এবং অন্যান্য যেসব সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি তারা ভাতাও পাবেন। তিনি আরো বলেন, যারা জুলাই অভু্যত্থানে শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন সঞ্চয়পত্রের নিরিখে। এরমধ্যে এই অর্থ বছরেই তাদের সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আগামী অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে বাকি ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের নিরিখে পাবেন। জুলাই অভু্যত্থানে আহতের তিনটি ক্যাটাগরি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যারা এ-ক্যাটাগরিতে (গুরুতর) আহত, তারা এককালীন ৫ লাখ টাকা পাবেন এবং ২০ হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাতা পাবেন। বি-ক্যাটাগরিতে যারা (এক অঙ্গহানি হয়েছে) তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন, সঙ্গে ১৫ হাজার করে টাকা মাসিক ভাতা পাবেন। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন মাত্রায় তারা প্রশিক্ষণ পাবেন। তারা সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি পাবেন। কোটার ভিত্তিতে নয়, অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে। আর আহত হয়েছিলেন তারা চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে গেছেন তারা সি-ক্যাটাগরির আহত (কম গুরুতর)। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি বা অন্য কিছুতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পাবেন। তবে তারা কোনো টাকা বা ভাতা পাবেন না। জুলাই অধিদপ্তর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, জুলাই অধিদপ্তর করার কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে, এই সপ্তাহে অধিদপ্তর হয়ে যাবে। অধিদপ্তর হওয়ার নিরিখে একটি নীতিমালাও হয়েছে। এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে। রাজনৈতিক সরকার যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে জুলাই অধিদপ্তরের অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে! এমন আশঙ্কা কি করেন? জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা তো সরকারিভাবে এই জুলাই অধিদপ্তর করেছি। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার যারাই নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারা তো জুলাই অভু্যত্থানের চেতনা নিয়েই আসবেন। আমরা মনে করি তারাও রক্ষা করবেন। তারা দেশ-জাতিকে মুক্তির জন্য, বৈষম্যমুক্ত করতে জুলাই অভু্যত্থানে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি আরো বলেন, জুলাই অভু্যত্থানে যারা শহীদ তাদের তালিকা পেয়েছি জানুয়ারির ১৬ তারিখে। সেই রাতের ৩টায় আমরা গেজেট করে তা প্রকাশ করেছি। তালিকাটাও তৈরি হচ্ছে খুব দ্রম্নত। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আহতদের তালিকা ক্যাটাগরিজ করা হচ্ছে। তালিকাটা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আসা মাত্র তাৎক্ষিনক সেটা আমরা গেজেট প্রকাশ করবো। সুতরাং এখানে নতুন করে ঢুকানো বা বাদ দেয়ার সুযোগ থাকবে না। আহতরা দাবি তুলেছেন যে, ক্যাটাগরি তুলে দেবার জন্য। সেব্যাপারে কোনো উদ্যোগ বা চিন্তা মন্ত্রণালয় করছে কি-না? জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, না এরকম কোনো তথ্য নেই। সেরকম কোনো পরিকল্পনা আপাতত জানা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করছে। তারা তাদের কাজ শেষ করে আমাদের জানালে আমরা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নিবো। শুরুর দিকে যারা আহত ছিলেন, আহত হয়ে, অসুস্থ হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের অনেকে ডকুমেন্টস রাখেননি বা সংগ্রহ করেননি। এমনদেরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগের কথা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, 'ডিসিরা অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন- এদের ব্যাপারে জেলায় জেলায় মুক্তিযোদ্ধারা খুবই সোচ্চার। এদের দ্রম্নত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। এটাতে তারা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চান। আমরা বলেছি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) পুনর্গঠন করা হয়েছে। জামুকার যে আইন ছিল সেটাতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞার নিরিখে এই সংশোধনী আসছে। সংশোধনী আসার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদও পুনর্গঠিত হবে।' অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নেওয়া এই বীরপ্রতীক বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুনর্গঠিত হলে প্রতিটি জেলায় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করব। যাদের আমরা শনাক্ত করতে পারব- তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।' 'এসি ২৫-এর নিচে চালালেই বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন ' এদিকে, এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির নিচে চালালেই বিদু্যৎ বিচ্ছিন্নের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। সোমবার ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিদু্যৎ বিভাগের নির্দিষ্ট টিম বিষয়টি পর্যবেক্ষণে কাজ করবে। কোথাও নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সে এলাকায় লোডশেডিং করা হবে। তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ায় বিদু্যৎ ও জ্বালানির মূল্য পরিশোধে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা রমজানে বিদু্যৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার সবরকম আয়োজন নিয়েছি। উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, শীতকালে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যতের চাহিদা থাকলেও গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদাটা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সেচ ও এসির ব্যবহার বা কুলিং লোড। সেচ যেহেতু খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই তাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব। কিন্তু এসির যে ব্যবহার, এটা যদি পরিমিত আকারে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ সাশ্রয় হয়। তিনি বলেন, ধর্ম উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন প্রত্যেকটা মসজিদে তারাবির সময় এসি ২৫ ডিগ্রিতে ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিসেও এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এসি ব্যবহারের এ নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে বিদু্যৎ বিভাগের একটি টিম কাজ করবে। ক্ষেত্রবিশেষে বিদু্যৎ বিচ্ছেদও করা হতে পারে। সেখানে শহর বা গ্রাম বিবেচনা করা হবে না। ঘোষণা দিয়েই লোডশেডিং করা হবে।## 'জুনে একসঙ্গে আসতে পারে আইএমএফ ঋণের কিস্তি' এদিকে, দুটি শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিলম্বিত আইএমএফ এর ঋণ প্যাকেজের চতুর্থ কিস্তির সঙ্গে পঞ্চম কিস্তির অর্থ জুন মাসে একসঙ্গে ছাড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সোমবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি সেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে' আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের পরের দুই কিস্তি ছাড় করার সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমরা তাদের বলেছি, এত শর্ত একসঙ্গে মানা যাবে না। তারাও সাজেস্ট করেছে, আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি জুন মাসে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করার।' আইএমএফের কাছ থেকে এই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। সেগুলো হল অর্থনীতির বহির্চাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ভঙ্গি আরও সঙ্কুচিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কথা ছিল, তৃতীয় পর্যালোচনা শেষ করে ৫ ফেব্রম্নয়ারি এর বোর্ড সভার পর ১০ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় করবে আইএমএফ। তবে সেই সভা ১২ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ফলে চতুর্থ কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টিও বিলম্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে আইএমএফ মিশন। ওই সফর শেষে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছিল, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে আগের ঋণের বাইরে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার দিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা। এ ঋণ আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বরে আইএমএফ মিশনের সফর শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজনৈতিক পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্র্ব‌তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি উলেস্নখযোগ্য মাত্রায় ধীর হয়ে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছেই। অর্থপাচার বিশেষ করে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ বের হওয়া চাপে পড়েছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। পাশাপাশি রাজস্ব আয় কমার বিপরীতে সরকারি ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। এগুলোর চাপ পড়েছে আর্থিক খাতে। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসার আভাস দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি 'মোটামুটি ভালো' অবস্থায় আছে দাবি করে অর্থ উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আইএমএফ এর পরের কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে সরকার 'মরিয়া' হয়ে নেই। আইএমএফের কাছ থেকে এই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি। এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, রেমিটেন্স ভালো। এমন না যে, মরিয়া হয়ে উঠেছি আইএমএফ এর অর্থটা পেতে। আমরা বলেছি, আমরা একটু অপেক্ষা করব। একসাথে দুটো কিস্তি পাবে জুনে। তাহলে অঙ্কটা বড় হবে।' এদিকে, করের আওতা বাড়াতে চিকিৎসক ও আইনজীবীদের মত পেশাজীবীদের নেওয়া ফির বিপরীতে রশিদ দেওয়ার নিয়ম চালুর ওপর জোর দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, 'আমি তো দেখেছি চিকিৎসকরা ফি নেন, রশিদ দেন না। এখন তারা রশিদ দিলে একটা ডকুমেন্ট থাকবে।' জোর করে করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'তারাই (ডিসি) বিষয়টি তুলেছে। অনেকেরই কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে, দিচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা। শুধু ঢাকা নয়, বাইরের শহরগুলোতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সুযোগ আছে। আমি বলেছি, সেখানে গুরুত্ব দিতে। তারা অলরেডি ড্রাইভ দিয়েছে গ্রাম থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স আদায় করতে।' রাজস্ব আদায় বাড়াতে অনলাইনে আর্থিক লেনদেন বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। ব্যবসায়ী, চিকিৎসক ও আইনজীবীদের লেনদেন অনলাইনে করার তাগাদা দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'অনেক ব্যবসায়ী অনলাইনে টাকা-পয়সা লেনদেন করে না। নগদ লেনদেন করায় সব কিন্তু করের আওতায় আসছে না, এটা সম্ভবও না।' ডাক্তার ও ব্যবসায়ীরা নগদ লেনদেন করায় তা করের আওতায় আসছে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, লেনেদেন কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হলে করের আওতায় আনা যাবে। এবার অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'লেনদেন যেন ডিজিটাল মাধ্যমে বাড়ে, তা বলা হয়েছে। তাহলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।' কর্মসংস্থান বাড়ানো ওপর গুরুত্ব দিয়ে সালেহ উদ্দিন বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্র্ম‌সচি, এডিপি বাস্তবায়নে স্থানীয় কর্মসংস্থান যেন হয়, তাদের চাহিদা যেন মেটানো যায়, সেদিকে তিনি নজর দিতে বলেছেন। এসএমই পণ্য উৎপাদন বাড়াতে গ্রামের উদ্যোক্তাদের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে জানিয়ে চীনের উদাহরণ দেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'চীনের একটি গ্রামের পণ্য বিশ্বের নামি দামি স্টলগুলোতে পাওয়া যায়। তারা গ্রামে বসেই সিঙ্গাপুরের মত বাজারে পণ্য রপ্তানি করছে। কারণ তাদের যোগাযোগ মাধ্যমটি আছে, আমাদের নেই। আমরাও সেই অনলাইন মাধ্যমের সুযোগটি করতে চাই।' বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন এক লাখের মত, তাদের বেশিরভাগই শহরাঞ্চলে বসবাস করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্যঅনুযায়ী, দেশে চিকিৎসক পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু মাসিক আয় সবচেয়ে বেশি। কোনো পরিবারের প্রধান একজন পুরুষ ডাক্তার হলে ওই পরিবারের সদস্যদের মাসিক মাথাপিছু গড় আয় হয় ৪৬ হাজার ৯৩৮ টাকা। পরিবারের প্রধান একজন নারী ডাক্তার হলে সদস্যদের গড় আয় হয় ৪৮ হাজার ৪৮৪ টাকা। বর্তমানে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, আইনজীবীর মত পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ ও নবায়নের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হয়।## 'ত্রাণের টিন কম্বল কিনতে পারবেন ইউএনওরা' এদিকে, যে কোনো দুর্যোগে দ্রম্নত ত্রাণ তৎপরতা চালাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনওদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সোমবার ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি সেশনে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে পুনর্বাসন, টিআর, কাবিখা, কাবিটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বরাদ্দের নিরিখে যেসব গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে সেগুলো নিবিড়ভাবে প্রতিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসন কাজের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে মালামাল হস্তান্তরের পুরনো নিয়ম বাতিলের তথ্য দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'কম্বল, টিন আগে কেন্দ্রীয়ভাবে বিতরণ করার প্রথা ছিল, যাতে অনেক সময় ক্ষেপণ হত। এখন মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করে বিতরণ করবে। ইউএনওরা অন্যান্য কেনাকাটার মত এই কেনাকাটাগুলো করতে পারবে বলে আমরা ডিসিদের জানিয়ে দিলাম।' তিনি বলেন, 'স্থানীয় চাহিদার নিরিখে সংগ্রহ করে (এসব সামগ্রী) বিতরণ করা হবে। এ বিষয়ে তাদের ধারণা দেওয়া হয়েছে। যেন তারা যথাযথ স্পেসিফিকেশনের আলোকে টিন সংগ্রহ করে বিতরণ করেন। গৃহহীনদের গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো রকম বৈষম্য যেন না হয়।' কেনাকাটার দায়িত্ব কেন মাঠ প্রশাসনকে দেওয়া হচ্ছে এবং এখানে প্রতিযোগিতামূলক কেনাকাটা হবে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক নয়, ইউএনওরা কিনবেন। তিনি বলেন, 'আগে কেন্দ্রীয়ভাবে সংগ্রহ করতে গেলে একটা কনস্ট্যান্ট অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিগত তিন বছর ধরে পণ্যগুলো সব একই জায়গা থেকে আসছে। যারা টিন উৎপাদন করে তারাও টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। ইউএনওরা তাদের নিড বেইজড কিনে নিতে পারলে দ্রম্নত বিতরণ করা যাবে। এজন্য টেন্ডার হবে না, পিপিআর ফলো করে কিনবেন।' দুর্যোগ সচিব মো. কামরুল হাসান এ সময় বলেন, 'কেন্দ্রীয়ভাবে কিনতে গেলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করতে অনেক সময় লাগবে। বরাদ্দ আগের মতই প্রতি উপজেলায় তিন লাখ টাকা করে থাকবে।'