সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মতো আবেগিক বিষয়ের পুনরায় জোরালো হওয়ার পেছনে ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাষণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ভাষণে তিনি মূলত জিন্নাহ্‌?র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু'। তার বক্তব্যের প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম প্রতিবাদ সভা, ছাত্র ধর্মঘট, পতাকা দিবস পালন থেকে একুশে ফেব্রম্নয়ারি তারিখে প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মিপরিষদ আরবি লিপিতে বাংলা লেখার সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে এবং পরিষদ একুশে ফেব্রম্নয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ছাত্র-কর্মীরা একুশের প্রস্তুতি হিসেবে ব্যানার-ফেস্টুন তৈরির কাজে লেগে পড়েন। এদিকে, একুশে ফেব্রম্নয়ারি আসার আগের উত্তাপে শঙ্কিত হয়ে পড়ে পাকিস্তান সরকার। পূর্বপাকিস্তানের উত্তাল জনতাকে থামাতে এবং ২১ ফেব্রম্নয়ারি তারিখে ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১৪৪ ধারা জারি করে পাকিস্তান সরকার। ছাত্ররা প্রদেশব্যাপী গণসংযোগের ফলে কোথাও কোথাও ভাষা আন্দোলন বিস্ফোরক চরিত্র লাভ করে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, চট্টগ্রাম, যশোর, কুমিলস্না, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর ও নোয়াখালীসহ প্রতিটি জেলা ও মহকুমায় ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা ও ব্যাপকতা ছিল লক্ষ্য করার মতো। এসব জেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ ছিল ক্ষীণ। এছাড়া এখনকার মতো সহজ যোগাযোগমাধ্যম ছিল না। তারা একুশের কর্মসূচি নিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে আন্দোলনে নামেন ও সাফল্য পান। ঢাকার মতো বাইরের শহরগুলোতে দমন-নীতি ও পুলিশি জুলুম ছিল অনেক বেশি। ভাষা আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের প্রধান চরিত্র ছিলেন স্থানীয় মর্গান স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ বেগম। তিনি অনন্য দক্ষতার সঙ্গে শহরের ছাত্রী ও নারীদের আন্দোলনে যুক্ত করেন। ফেব্রম্নয়ারির উত্তাল সময়ের পুরোটাজুড়েই তিনি প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও মিছিলের সামনে ছিলেন বলে জানা যায়। এক সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিলে চাষাঢ়ায় পুলিশ-জনতার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘচে। শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী বেশ কৌশল করে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের নেতৃত্বে আরও ছিলেন শামসুজ্জোহা, সফি হোসেন, আলমাস আলী, খানবাহাদুর ওসমান আলী প্রমুখ। ময়মনসিংহেও ভাষা আন্দোলন অনেক তীব্রতা নিয়ে সংগঠিত হয়। রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, হাতেম আলী তালুকদার প্রমুখ নেতার প্রচেষ্টায় আন্দোলন শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কুমিলস্না শহরে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসমাবেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার পদত্যাগের দাবি ওঠে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অন্য জেলা ও মহকুমা শহরেও আন্দোলন তীব্র আকারে ছড়িয়ে পড়ে।