বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হলে 'দাদাগিরি' করা চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হলে প্রথমে তিস্তার পানি দিতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। তাহলে বন্ধুত্ব হতে পারে।
সোমবার লালমনিরহাটে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে 'জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই' শীর্ষক তিস্তা পাড়ে ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'একদিকে তারা (ভারত) পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের শত্রম্নকে আশ্রয় দেয়। দিলিস্নতে তাকে (শেখ হাসিনা) রাজার হালে রেখেছে। ওখান থেকে বসে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হুকুম দিচ্ছেন।'
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় এলো তখন সবাই ভাবল ভারতের বন্ধু এবার মনে হয় পানি আনতে পারবে। ১৫ বছরে তারা তিস্তার এক ফোঁটা পানিও আনতে পারিনি। ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে ভারত বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি উত্তোলন করেছে। তারা ভারতের কাছে দেশ বেচে দিয়েছিল।'
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্যে করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ভারতকে স্পষ্ট করে বলতে হবে, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে।'
তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলুর সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
আয়োজক সূত্র জানায় সোমবার রাতে লালন সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। রংপুর বিভাগের ১১টি পয়েন্টে রাতে মশাল প্রজ্বলন করা হবে। আজ মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ কর্মসূচি।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে 'জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই' স্স্নোগানে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচির প্রথম দিন সোমবার উত্তরবঙ্গে দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় মানুষের ঢল নামে। 'তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন' নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
'তিস্তা বাঁচাই' কর্মসূচিতে মানুষের ঢল
রংপুর প্রতিনিধি জানান, জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই এই স্স্নোগানকে সামনে রেখে তিস্তা নদী পানির ন্যায্য হিস্যার ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় ৪৮ ঘন্টার লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে তিস্তাপাড়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দাবি বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগসহ বিশ্ব পরিমন্ডলে তিস্তার দুঃখ তুলে ধরার কথা জানান।
আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। এতে লালমনিরহাটের তিস্তা সড়ক সেতু ও রেল সেতুর মাঝামাঝি স্থানে গত কয়েকদিন থেকে নেতাকর্মীরা নিরলস পরিশ্রম করে কর্মসূচি স্থল ও প্যান্ডেল তৈরি করেছেন।
কর্মসূচি পালনে রোববার রাত থেকে প্যান্ডেলে লোকজন এসেছেন। সমাবেশ ও বিনোদনের জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। রাত্রিযাপনে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ স্থাপনসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আয়োজকরা জানান, এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার যদি তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে তাহলে পরবর্তীতে লাগাতার কর্মসূচি চলবে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, 'তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোন রাজনৈতিক দলের নয়। এটি রংপুর বিভাগবাসীর আন্দোলন। এই আন্দোলন জনদাবীতে পরিণত হওয়ায় এতে তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, 'আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৫ জেলার ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন।'