প্রায় সাত বছর পর দলের নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা আহ্বান করেছে বিএনপি। আগামী ২৭ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীতে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরাও সভায় অংশ নেবেন। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভায় তৃণমূল নেতাদের কথা শুনবেন। একইসঙ্গে আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা, জাতীয় নির্বাচন, কোন্দল নিয়ে সভায় সবার মতামত থাকবে। কেন্দ্র থেকেও নানান বার্তা দেওয়া হবে তৃণমূলে। এছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশনাও দেওয়া হতে পারে এই সভায়। বিএনপির একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে ৩ ফেব্রম্নয়ারি তিনি এই বর্ধিত সভা ডেকেছিলেন। সেখানে তিনি তার অবর্তমানে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বার্তা দিতে এই সভার আয়োজন করেছিলেন। ওইসময়ে রাজধানীর লা-মেরিডিয়ান হোটেলে সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, ২৭ ফেব্রম্নয়ারির বর্ধিত সভা বড় পরিসরে হবে। এ উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সারাদেশের মূলদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষনেতা এই সভায় তাদের মতামত তুলে ধরতে পারবেন। বর্ধিত সভার ভেনু্য দুই একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছরে অন্তত একবার বর্ধিত সভা আয়োজনের বিধিবিধান থাকলেও বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে সেটা হয়ে ওঠেনি। দলের দুই প্রধান নেতা খালেদা জিয়া বন্দি এবং তারেক রহমান বিদেশে থাকায় দলের জাতীয় কাউন্সিলও হয়ে ওঠেনি বিগত ৯ বছরে। তিন বছর অন্তর এই কাউন্সিল অনুষ্ঠানের গণতান্ত্রিক এবং নির্বাচন কমিশনের আরপিও অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। একই কারণে প্রতি ছয় মাসে একবার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠানের নিয়ম থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপির হাইকমান্ড। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার বেশ বড় পরিসরে এই সভার আয়োজন করতে চলেছে দলটি।
বিএনপি নেতারা জানান, বিগত দেড় দশকের বেশি সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত ছিল। কাউন্সিল কিংবা সভা করার মতো কোনো পরিবেশ ছিল না। ২০১৮ সালে বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো সভাস্থল ঘিরে রেখেছিল। সভায় যারা উপস্থিত হতে চেয়েছেন তাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যেও কৌশলে সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে এবার ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর অনুষ্ঠিতব্য এই সভায় তৃণমূল নেতাদের সুখ, দুঃখের পাশাপাশি প্রত্যাশার কথা শুনতে চান বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একইভাবে সাংগঠনিক পরিধিসহ সার্বিক বিষয়ে মতামত নেবেন তিনি। এছাড়া দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত ৩টি নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও মিত্রদের যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ওপরও নানা দমন-পীড়ন হয়েছে।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের কথাও শুনবেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানে নানান ষড়যন্ত্র, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছাড়াও আগামী জাতীয় নির্বাচনে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে।
এদিকে দলের বর্ধিত সভা বাস্তবায়নে বেশি কয়েকটি কমিটি করেছে বিএনপি। রোববার বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বর্ধিত সভার কথা উলেস্নখ করে বলেন, 'বর্ধিত সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টামন্ডলী, জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সদস্যবৃন্দ, এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নেবেন।'
বর্ধিত সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আহবায়ক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য আছেন- কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এম রশিদুজ্জামান মিলস্নাত, ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, মাহবুবের রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত, আসাদুল হাবিব দুলু, জি কে গউছ, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শরিফুল আলম, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ব্যারিষ্টার নাসির উদ্দিন অসীম, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর সরফত আলী সপু, প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা. রফিকুল ইসলাম, রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হক।
এছাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে, অভ্যর্থনা কমিটির আহবায়ক হাবিব উন-নবী খান সোহেল ও আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, আপ্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক এম রশিদুজ্জামান মিলস্নাত, শৃঙ্খলা কমিটির আহবায়ক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, চিকিৎসা সেবা কমিটি আহবায়ক হিসেবে ডা. রফিকুল ইসলামকে রাখা হয়েছে।