বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

অবসরে থাকা জেলা জজদের নিয়োগের সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অবসরে থাকা জেলা জজদের নিয়োগের সুপারিশ সংস্কার কমিশনের
অবসরে থাকা জেলা জজদের নিয়োগের সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। যেসব জেলায় মামলাজট বেশি, সেসব জেলায় দুই বা তিন বছরের জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে 'মামলাজট হ্রাস' শিরোনামে একটি অধ্যায় রয়েছে। সেখানে মামলাজট নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে এমন প্রস্তাব এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ আদালত আইন-২০০৩ সংশোধনের মাধ্যমে এবং ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪৯ ধারা অনুসারে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের নিয়োগ করা যেতে পারে। এ ধরনের নিয়োগের জন্য আইন সংশোধনের আগে সম্ভাব্য জটিলতা এড়ানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অনুমতি নেওয়ার প্রস্তাব করেছে তারা।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ৮ ফেব্রম্নয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের এ কমিশন গঠন করা হয়েছিল গত বছরের ৩ অক্টোবর। ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩১টি অধ্যায়ে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে নানা সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৯টি মামলা বিচারাধীন ছিল। মামলা ও জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশে বিচারকের সংখ্যা কমপক্ষে দুই গুণ বৃদ্ধি না করলে, অর্থাৎ অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচারকের সংখ্যা কমপক্ষে ছয় হাজারে উন্নীত না করলে মামলাজট সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু একসঙ্গে অতিরিক্ত চার হাজার বিচারক নিয়োগ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নতুন নিয়োগে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারক পাওয়াও সম্ভব নয়। তাই ধাপে ধাপে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এমন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার মামলার জন্য একজন বিচারক্তএ অনুপাত অনুসরণ করতে হবে। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের (অন্যান্য সুবিধা) ব্যবস্থা করতে হবে।

কমিশন সুপারিশে বলেছে, অধিকসংখ্যক ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশন (আবেদন), দেওয়ানি আপিল ও দেওয়ানি রিভিশন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে- এমন জেলায় সৎ, দক্ষ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের দুই বা তিন বছরের মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নূ্যনতম এক হাজার আপিল বা রিভিশন বিচারাধীন- এমন জেলায় চুক্তিভিত্তিক জেলা জজদের নিয়োগ করা যেতে পারে। প্রতিবেদনের মামলাজট হ্রাস অধ্যায়ে জট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে এ প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা সংবাদমাধ্যমে বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা জজের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ জ্যেষ্ঠতম হবেন। এ ক্ষেত্রে কার কী কাজ হবে, কার কী এখতিয়ার থাকবে এবং কোন মামলা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ করবেন আর কোন মামলা জেলা জজ শুনবেন, তা সুনির্দিষ্ট করা না হলে এটি ফলপ্রসূ হবে না। মামলাজট নিরসনে আদালতের পূর্ণ কর্মঘণ্টার ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি অধস্তন আদালতের বিচারকদের কাছ থেকে প্রতি তিন মাস পরপর মামলা নিষ্পত্তির তালিকা প্রতিবেদন আকারে দাখিল এবং জেলা ভাগ করে হাইকোর্ট বিভাগের একজন করে বিচারপতির সরাসরি তত্ত্বাবধানে তদারকির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে মামলাজট কমবে এবং নিষ্পত্তির হার বাড়বে।

সংস্কার কমিশনের দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতির প্রয়োজনীয় সংস্কার, দ্রম্নত ও নিরপেক্ষ তদন্তকাজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ, যথাসম্ভব নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা এবং বিচার বিভাগের যথাযথ বিকেন্দ্রীকরণসহ কয়েকটি বিষয় উলেস্নখ করা হয়েছে।

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ

বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং সেগুলোর কারণে আসামিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের ভোগান্তি একটি নৈমিত্তিক বিষয় বলে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে 'মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ' অধ্যায়ে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, বিভিন্ন আইনের অপব্যবহার এবং অপপ্রয়োগের ঘটনাও কম নয়।

কমিশন বলেছে, মিথ্যা মামলার বিষয়ে দন্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধিসহ বিভিন্ন বিশেষ আইনে দন্ড আরোপ এবং মামলা করার পদ্ধতিসংক্রান্ত বিধান থাকা সত্ত্বেও এসব বিধান প্রয়োগ করা হয় না বললেই চলে।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধের জন্য একটি বাস্তবানুগ আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে নিবিড় ও ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা হিসেবে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ থাকলে (বিশেষত, এজাহারে অস্বাভাবিক সংখ্যক অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম থাকলে), অপরাধ সংঘটনে কোনো আসামির সুনির্দিষ্ট ভূমিকার কথা এজাহারে উলেস্নখ না থাকলে সেই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে না- এ মর্মে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা দিতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে