বেরোবিতে 'আবু সাঈদ বইমেলা'র দায়িত্বে আওয়ামী শিক্ষক!

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

বেরোবি প্রতিনিধি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রথমবাবের মতো প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শহীদ আবু সাঈদ বইমেলা উদযাপনের জন্য গঠিত কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড.আপেল মাহমুদকে কমিটিতে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১০ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছর শহীদ আবু সাঈদ বই মেলার আয়োজন করবে। আগামী ১৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২৩ শে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিন ব্যাপী বইমেলা হওয়ার কথা রয়েছে। বই মেলার আয়োজনের জন্য গত ৯ই ফেব্রম্নয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কট্টোর আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ড. আপেল মাহমুদ ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ক্যাম্পাসে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েই ২০১৪ সালে নীলদল প্রতিষ্ঠা করে নিজেই সভাপতি হন। এরপর হয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে রয়েছেন কার্যকরী সদস্য পদে। এছাড়াও নীল দলের প্যানলে থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ২০২৩ সালে জয়লাভ ও করেন তিনি। আবু সাইদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমানের নিয়ন্ত্রিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন এই শিক্ষক। কমিটিতে সদস্য হিসেবে কট্টর এই আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ড. আপেল মাহমুদকে রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে। সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী নিয়োগের পর পরই ভোল পাল্টে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলামের সহায়তা প্রথমেই নিজের প্রমোশন ভাগিয়ে নেন অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন মাসেই এই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ক্রয় কমিটি, ডরমেটরি বরাদ্দ কমিটি, বাসা বরাদ্দ নীতিমালা রিভিউ কমিটি, ভর্তি পরিচালনা কমিটির, ক্যালেন্ডার মুদ্রণ কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়রে বার্ষিক ছুটি নির্ধারণ কমিটিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, উপাচার্যের দপ্তরে কোনো জরুরি প্রয়োজনে যখনই গিয়েছেন তখনই ড. আপেল মাহমুদকে উপাচার্যের দপ্তরে বসে থাকতে দেখেছেন। একধিক বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের উগ্র আওয়ামীপন্থি ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের ভিসির দপ্তরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, নতুন উপাচার্য যোগদানের পূর্বে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বিভাগের তাদের পছন্দের তিন জন করে শিক্ষকের নামের তালিকা নেওয়া হয়েছিল। কাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যায় সে উদ্দেশ্য নেওয়া এই নামগুলো নেওয়া হয়। যেহেতু তার নাম শিক্ষার্থীরা দিয়েছে তাই এখানে আর আমাদের কিছু বলার নেই। ছাত্রদলের বেরোবি শাখার আহবায়ক আল আমিন বলেন, আমরা জেনেছি বইমেলা প্রশাসন থেকে হচ্ছে এবং সেটির নেতৃত্ব দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। আমরা হতাশ হই তারা সেখানে নেতৃত্ব থাকা সত্বেও কিভাবে একজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সেই কমিটিতে থাকে। এইটা আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেইমানি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এভাবে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের পুনর্বাসন শুরু করলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আস্থা হারাবে। প্রশাসনের এমন কাজ দেখে আমরা খুবই হতাশ। জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ক্যাম্পাসে বই মেলার ব্যাপারে আমি জানতাম না। পরে শুনেছি বই মেলা হবে। কিন্তু বই মেলার কমিটিতে একজন আওয়ামী পন্থী শিক্ষককে রাখায়। তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে কমিটি দিতে হবে। এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন,তার নাম (আপেল মাহমুদ) তার বিভাগের শিক্ষার্থীরাই দিয়েছে। এখন তো কোনো দল নাই।আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত ইত্যাদি নেই। ক্যাম্পাসে তো রাজনীতি নিষিদ্ধ। আর ক্যাম্পাসে কত জন মানুষ আওয়ামী পন্থী ছাড়া পাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। এখন আমাকে তো সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে।