বাংলাদেশে গত জুলাই-অগাস্টে প্রায় ১৪০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগের মৃতু্য হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের নির্দেশেই বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। এসব তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি নিয়ে তৈরি করা এ প্রতিবেদন বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে। জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা কীভাবে একাধিক বৃহৎ আকারের অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন, তার বর্ণনা দিয়েছেন বিক্ষোভ দমনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্র; যেখানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছিল বা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছিল।'
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল, এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল যেখানে একদম সামনে থেকে গুলি করা হয়েছিল।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আহ্বানে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনের তদন্ত দল।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান ররি মুনগোভেনের নেতৃত্বে ওই তদন্ত দলে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা বলেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ বলছে, প্রাণঘাতী ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্য অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এ তদন্তে সহযোগিতা করেছে, প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিয়েছে এবং নথিপত্র সরবরাহ করেছে।
এদিকে, তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বারা সংগঠিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে। সেসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন সরকার, তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা; আওয়ামী লীগ, এর সহিংসগোষ্ঠী ও সংগঠনের সঙ্গে একত্র হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল- যার মধ্যে রয়েছে কয়েকশ' বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গুরুতরভাবে শারীরিক নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ, ব্যাপক হারে নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতনসহ অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন। ওএইচসিএইচআর যুক্তিসঙ্গত কারণে বিশ্বাস করে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা, সমন্বয়, নির্দেশনায় এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল। প্রতিবেদনের আরেকটি অংশে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআরের অনুমান, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মিলিটারি রাইফেল ও প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানে নিহত হয়েছেন। এই ধরনের শটগান সাধারণত বাংলাদেশের হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২
নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। কেউ কেউ স্থায়ীভাবে আজীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ও র?্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু বলে জানা গেছে। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করেছে। নির্বিচার গ্রেপ্তার, অমানবিকভাবে আটক-নির্যাতন ও অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন করেছে। বিশেষ করে শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকা নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছে। নারীরা যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ছিল লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য এবং ছবি-ভিডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয় যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি সম্প্রসারিত দল পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে বা ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। তারা বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ব্যাপকভাবে বেআইনি সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক অভিযানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশের সহিংস প্রচেষ্টাকে সাহায্য করতে অভিযান শুরুর আগেই সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল। অথবা পুলিশ ফোর্সের পেছনে থেকে আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও লোকজনকে থামিয়ে তলস্নাশি চালিয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের আটক করেছিল, সংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল।
প্রতিবেদনে আরও উলেস্নখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ ওএইচসিএইচআরকে পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৯৫ জনের নাম এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল, তার বিস্তারিত সরবরাহ করেছে। পুলিশের মতে, এই ব্যক্তিরাই বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। অস্ত্র সরবরাহ যাদের করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ১০ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য, ১৪ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা, সাতজন পুলিশ সদস্য।
গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি 'কোর কমিটি'র বৈঠক হয়। যেখানে পুলিশ, র?্যাব ও বিজিবিপ্রধান এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরও দ্রম্নত প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে, এর পরদিন অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন। বিশেষভাবে 'বিক্ষোভের মূল হোতা', 'গন্ডগোল সৃষ্টিকারী'দের গ্রেপ্তার, হত্যা ও হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে যেই অনুসন্ধানকারীরা কাজ করেছেন, তাদের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেছে বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে। সরকার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল (আইসিটি) এবং নিয়মিত আদালতে সে সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
সরকার বদলেও থামেনি মানবাধিকার লঙ্ঘন
এদিকে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে গণ-অভু্যত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের যবনিকা টানতে হয়। এর মধ্য দিয়ে সবাই আশা করেছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘনের আগের অভ্যাসের বদল হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই চর্চা জারি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের খসড়া প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের (আইসিটি) পাশাপাশি নিয়মিত আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের বিদ্যমান কাঠামোগত ত্রম্নটির কারণে সরকারের এসব প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। পুলিশ এখনও আগের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছে। এখনও তারা ভিত্তিহীন অভিযোগে গণমামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রমাণ নষ্ট করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখনও স্বপদে বহাল আছেন। এ ছাড়া আইসিটি আদালতের পাশাপাশি নিয়মিত আদালতের প্রক্রিয়াগত বিষয়েও উদ্বেগ রয়ে গেছে।
যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। তবে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের সঙ্গে জড়িতরা এখনও আইনের আওতায় আসেনি।
পুলিশ মামলায় হাজারো মানুষকে অভিযুক্ত করেছে। বর্তমানে ১ হাজার ১৮১টি তদন্ত চলমান। এতে অভিযুক্তের সংখ্যা ৯৮ হাজার ১৩৭। এদের মধ্যে ২৫ হাজার ৩৩ জনের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এ অনুযায়ী প্রতি মামলায় গড়ে ৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষকে অভিযুক্ত করায় তাদের বিরুদ্ধে হয় তদন্ত অথবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কই নেই। জাতিসংঘ বেশ কিছু মামলা পর্যালোচনা করে দেখেছে, যাতে চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জনগণের চাপে পড়ে। পুলিশের তদন্তের ওপর জনগণের আস্থা কম।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের আইনের উদ্বেগের বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিয়ে সম্প্রতি কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সবকিছু আমলে নেওয়া হয়নি। এ আইনে মৃতুদন্ড, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের মতো বিষয়গুলোতে উদ্বেগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদন্ড বজায় রেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা নিয়ে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ আছে।
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল :টুর্ক
এদিকে, বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল সাবেক সরকার। আর সে লক্ষ্য পূরণে বিক্ষোভ দমন করার কৌশল নিয়েছিল তারা। এর অংশ হিসেবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এমন অভিমত দিয়েছেন। বুধবার জাতিসংঘের প্রতিবেদনে টুর্কের এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকান্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পথ ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল।
এ প্রসঙ্গে ফলকার টুর্ক বলেন, 'জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে এমন নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল সাবেক সরকার। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।'
টুর্ক আরও বলেন, 'আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।'
জাতীয় ক্ষত সারাতে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাকে অপরিহার্য বলে মনে করেন ফলকার টুর্ক।
স্বাগত জানাল অন্তর্বর্তী সরকার
গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকান্ড চালিয়েছে, এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে (ওএইচসিএইচআর) ধন্যবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতিশ্রম্নতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি পুলিশ, প্রসিকিউটর, বিচারকসহ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, 'আমি অন্তর্বর্তী সরকারে কর্মরত সব ব্যক্তি এবং কোটি কোটি নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে এমন একটি দেশে রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ- যেখানে মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।'
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচার খাতে কাঠামোগত ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই, যেখানে মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে। এ জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত সবাইকে আহ্বান জানাই, আপনারা ন্যায়বিচার, আইন ও বাংলাদেশের জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখুন। যারা আইন ভঙ্গ করেছেন এবং মানুষের মানবিক ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করেছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসুন।'