বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

বায়ুদূষণে হাঁচি-কাশির অসুখে ভুগছে শিশুরা

সূচকে মঙ্গলবার ঢাকার গড় বায়ুর মান ছিল ১৯৬
যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
.

রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক এলাকার বাসিন্দা মো. আফসার হোসেন। সড়কের পাশেই তাঁর বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বাসা কিংবা দোকানের বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই তাঁর অস্বস্তি হয়। এর কারণ অতিরিক্ত ধুলাবালু। বছরজুড়ে এ সমস্যা থাকলেও শীতকালে তা অনেক বেড়ে যায়। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের প্রভাব পড়েছে আফসারের পরিবারের সদস্যদের ওপরও। বিশেষ করে তাঁর সাত বছরের সন্তানের হাঁচি-কাশি লেগেই থাকে। বছরের এ সময়ে তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। আফসার হোসেন বলেন, 'স্বাভাবিকভাবেই ঘরে আলো-বাতাস ঢোকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের বাসার জানালা খোলা অসম্ভব। এমনকি রাতে বারান্দা পরিষ্কার করে রাখলেও পরদিন সকালেই ধুলার ১ ইঞ্চি স্তর পড়ে যায়। এই বদ্ধ অবস্থায়ও বাসার ডাইনিং টেবিল, আসবাব, কাচের জিনিস প্রতিদিন মুছতে হয়। সাবধানতা অবলম্বন করেও সবাইকে হাঁচি-কাশিজনিত অসুখে ভুগতে হচ্ছে।' শুধু নিজের পরিবারের সমস্যাই না। 'এই রাস্তায় কেউ এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসায় ফিরে যদি গোসল বা পোশাক পরিবর্তন না করে, সে ভালো অনুভব করবে না,' বলেন আফসার। এদিকে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ছিল ১৯৬। এমন অবস্থাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। এদিন সকালে বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। বায়ুদূষণে ঢাকার এ অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৪ গুণ বেশি। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক এলাকার আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই সড়ক ধরে রিকশা কিংবা লেগুনার মতো খোলা যানবাহনে গেলে অনেকের হাঁচি শুরু হয়। বিশেষ করে কারও যদি অ্যাজমা বা ধুলাবালুতে অ্যালার্জি থাকে, সে বেশি ভোগে। মা-বাবারাও তাই কাজ ছাড়া সন্তানদের বাইরে বের হতে দিতে চান না। সরেজমিনে এসব কথার সত্যতা মিলল। ৬০ ফুট সড়ক এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সড়কের ওপরের ধুলা পরিষ্কার করছেন। ঝাড়ু দেওয়ার পর সেগুলো আবার সড়ক বিভাজকের ওপর রেখে দিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর এই ধুলাবালু আবার বাতাসে সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে কোনো লাভ হচ্ছে না। শুধু এই সড়ক নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চিত্র এমন। এতে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ও হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) থেকে প্রকাশিত স্টেট অব গেস্নাবাল এয়ারের (এসওজিএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে ২০২১ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মৃতু্য হয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বায়ুদূষণজনিত রোগের শিকার বেশি হয়। এর প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি, ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। দূষিত নগরীর অসহায় শিশুরা গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কথা হয় মো. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। মেয়ে আরশিয়া পারনিয়ান নোভেরাকে নিয়ে তিনি রামপুরা থেকে সেখানে চিকিৎসক দেখাতে যান। এক বছর বয়সী শিশুটি কিছুদিন ধরেই সর্দি-কাশিতে ভুগছে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা না থাকলেও নেবুলাইজার ব্যবহার করতে হয়। বায়ুদূষণে ঢাকার বর্তমান পরিস্থিতি এর পেছনে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। হুমায়ুন কবির বলেন, 'চারদিকে ধুলাবালু ও বায়ুদূষণ না থাকলে আমার মেয়ের হয়তো এই সমস্যা হতো না। শুধু ও না, ওর বয়সী অনেক শিশুকেই এসব অসুখে ভুগতে দেখছি।' একই চিকিৎসকের চেম্বারে ৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন একজন মা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'গত বছর শীতকালে আমার ছেলের কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সেবার নিউমোনিয়া ধরা পড়েছিল। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে। এরপর ঠান্ডা লাগলে হালকা কাশি হতো। কিন্তু গত দুই মাসে এটা ধীরে ধীরে বাড়ছে।' ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বছরের এ সময়ে শিশুরা শ্বাসজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে। ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিল রোগে আক্রান্তদের কষ্ট বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসার চেয়ে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরিতে বেশি জোর দেন শিশু অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, 'মোটাদাগে তিনটা বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রথমত, বায়ুদূষণ কমানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো। এটাও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মধ্যে পড়ে। তৃতীয়ত, টিনজাত, বোতলজাত, প্যাকেটজাত খাবার পরিহার করা। যেমন টিনের দুধ, মিল্ক ভিটা, হরলিক্স, চিপস, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি।' বাংলাদেশের শিশুদের নিয়ে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাতে দেখা যায়, গড়ে শতকরা আটটি শিশু অ্যাজমায় ভুগছে। এ ধরনের সমস্যা থেকে শিশুদের বাঁচাতে এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো নেওয়া দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক রুহুল আমিন। তিনি বলেন, যাদের অসুখ হয়ে গেছে, তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যদের ক্ষেত্রে দরকার শরীরের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো। বাসার স্বাভাবিক খাবার খাওয়ালেই সেটা সম্ভব। বায়ুদূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে শিশুরা সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, ব্রঙ্কিওলাইটিস, এমনকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য শিশুদের ধুলাবালু থেকে দূরে রাখাই আপাত সমাধান বলে অভিমত এই বিশেষজ্ঞের। বিশেষ করে শীতকালে শিশুদের নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ও বিপণিবিতানে কেনাকাটা করতে নিরুৎসাহিত করেন তিনি। ঢাকার বাইরে কী অবস্থা ঢাকার অদূরে অবস্থিত সাভারের নগরকোন্ডা গ্রাম। গত ১০ ডিসেম্বর সেখানকার একটি ওষুধের ফার্মেসিতে শিশু রোগীদের ভিড় চোখে পড়ল। পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ শিশুই ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে এসেছে। কারও কাশি, কারও শ্বাসকষ্ট। কথা হলো মুন্নি বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে। ১০ মাসের মেয়ে আওলাকির রাত থেকেই শুকনা কাশি হচ্ছে। তিনি বলেন, 'এত কাশে যে রাতে ঘুমাতে পারি না। মিরপুরের এক চিকিৎসকের ওষুধ চলছে। শহরে প্রতিদিন যাওয়া তো সম্ভব না। হঠাৎ সমস্যা হলে এই ফার্মেসিতেই আসি।' আমিনবাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ল্যান্ডফিলের (স্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) পাশেই এ গ্রামের অবস্থান। রাজধানীর ময়লা-আবর্জনার একটা বড় অংশই ল্যান্ডফিলটিতে জমা হয়। শিশুর স্বাস্থ্যে দূষণের কোনো প্রভাব পড়েছেন কি না, এ প্রশ্নে মুন্নি বেগম বলেন, 'তা তো বলতে পারব না। তবে গাড়ি বেশি চলায় এখানে প্রচুর ধুলাবালু। সেটা সর্দি-কাশির কারণ হতে পারে।' হাসপাতালের চিত্র ৭ জানুয়ারি রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের টিবি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা হয় ৮ বছর বয়সী রেজার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তার বাবা জানান, জন্মের পরই রেজার জন্ডিস হয়। এরপর আক্রান্ত হয় নিউমোনিয়ায়। সারা বছর ঠান্ডা-শ্বাসকষ্ট থাকলেও ধুলাবালুতে বের হলে এবং শীতকালে এর মাত্রা বাড়ে। শিশুটির যক্ষ্ণার সম্ভাব্য লক্ষণ থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সরকারি কর্মচারী এই বাবা বললেন, ছেলের চিকিৎসায় খরচ অনেক। ধারদেনা করে এখন চিকিৎসা করাচ্ছেন। টিবি ওয়ার্ডে পাওয়া যায় আরেক রোগীকে। জন্মের পর থেকে নিউমোনিয়াসহ নানা অসুখে ভুগছে ১১ বছর বয়সী সোহান। হবিগঞ্জের শিশুটি এক বছর ধরে টানা চিকিৎসা নেওয়ার পর সম্প্রতি তাঁর যক্ষ্ণা ধরা পড়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। সোহানের মা বলেন, 'ঢাকাতেও ডাক্তার দেহাইছি, দেশেও দেহাইছি। কোনো রেজাল্ট ঠিকমতো পাইলাম না। জ্বর আর কাশি ছাড়তেছেই না। ঠান্ডার সময় বাইড়া যায়।' হাসপাতালটির নিউমোনিয়া ওয়ার্ডেও রোগীদের চাপ চোখে পড়ল। সারা দেশ থেকেই এখানে রোগী আসে। এ বছর বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রকোপ অনেক বেশি জানিয়ে কর্তব্যরত শিশুবিশেষজ্ঞ জোহরা আক্তার বলেন, 'ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া্তএই তিন ধরনের রোগীই বেশি আসছে। ব্রঙ্কিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশুরা হালকা জ্বর, ঠান্ডাুকাশি ও শ্বাসে শব্দ ইত্যাদি লক্ষণ নিয়ে আসে। নিউমোনিয়ার রোগীদের জ্বরটা একটু বেশি থাকে। ঠান্ডা-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকে।' জোহরা আক্তার আরও বলেন, 'আগে শুধু শীতকালে অ্যাজমার রোগীগুলো পেতাম। কিন্তু এখন বছরজুড়েই পাই। পাশাপাশি প্রচুর শিশু পাচ্ছি, যাদের ঘনঘন ঠান্ডাুকাশি হয়। পূর্বে সাধারণত বংশগত কারণেই এসব লক্ষণ নিয়ে রোগী আসত। কিন্তু এখন প্রতি দশটা শিশুর মধ্যে পাঁচ-ছয়জনের মধ্যেই অ্যালার্জির প্রবণতা দেখা যায়।' গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা শেষ ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। বায়ুর মান খুব খারাপ হওয়ায় ডিসেম্বরের কয়েক দিন 'দুর্যোগপূর্ণ' হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছিল। শিশু হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যেও দূষণের মারাত্মক প্রভাব উঠে এসেছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে নিউমোনিয়া, সাধারণ ঠান্ডা ও অ্যাজমার চিকিৎসা নিয়েছে দেড় হাজার শিশু। মাসের শেষ সপ্তাহে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৭৫-এ। নিউমোনিয়াুসংক্রান্ত জটিলতায় (অন্যান্য সমস্যাসহ) ডিসেম্বরে মৃতু্য হয়েছে ৪৭ জনের। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই তিনটি অসুখে ১ হাজার ৪ জনের চিকিৎসা নেওয়ার বিপরীতে ৪টি শিশুর মৃতু্য হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করলেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সারাবন তহুরা। তিনি বলেন, শিশুদের অ্যাজমা হওয়ার প্রবণতা বড়দের থেকে বেশি। দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে এটা বারবার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সারাবন তহুরা আরও বলেন, আগে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, ত্বকের অসুখ শহরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যেত। এখন প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুদের মধ্যেও এসব অসুখ পাচ্ছেন। এটা আশঙ্কাজনক। প্রতিবছর অ্যাজমা, অ্যালার্জির স্থায়ী রোগী বাড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা, শিশুদের যক্ষ্ণাও বাড়ছে। বাইরের দূষণের পাশাপাশি ঘরের দূষণও এর জন্য দায়ী। এসওজিএ ২০২৪-এর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশসহ আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে শ্বাসনালির সংক্রমণে পাঁচ বছরের কম বয়সী যত শিশুর মৃতু্য হয়, তার ৪০ শতাংশের জন্যই দায়ী বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণুসম্পর্কিত কারণে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী সাত লাখের বেশি শিশুর মৃতু্য হয় শুধু ২০২১ সালে। ওই বছরে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে ১৯ হাজারের বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃতু্য ঘটেছে। শ্বাসকষ্টের রোগী এখন কেন এত বাড়ছে মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পাশ দিয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত কামাল সরণি সড়কের একটা অংশ মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক নামে পরিচিত। এই সড়কের শেষ প্রান্তে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস। ১১ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হকের সঙ্গে কথা হয় বায়ুদূষণ নিয়ে। তিনি জানান, ঢাকায় কয়েক শ' নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসবের ধুলাবালু চলে আসছে সড়কে। সড়ক দিয়ে গাড়ি চলছে, আর ধুলা উড়ছে। তবে নির্মাণাধীন প্রকল্পের নিয়ম যারা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে। গাড়ির কালো ধোঁয়ার ওপরেও কাজ হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সিটি করপোরেশনের আওতায় উলেস্নখ করে জিয়াউল হক আরও বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করে পৌর বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দোষী ব্যক্তি বা সংস্থার শাস্তি নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেও দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের ম্যাজিস্ট্রেটকে কাজে লাগাতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবলের স্বল্পতা আছে। এ জন্য ধারাবাহিকভাবে নজর রাখতে পারেন না। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, বায়ুদূষণ রোধে সব মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি ফিরিয়ে আনতে হবে। ইটভাটা, শিল্পকারখানা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে জনগণের ওপর অর্পিত দায়িত্ব তাদের পালন করতে হবে। ফেব্রম্নয়ারির শেষ পর্যন্ত মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রাজধানীর বায়ুদূষণ থেকে নিজেদের রক্ষায় ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গুলশানের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা মহামারির পর থেকেই রাজধানীর অনেক অভিজাত ব্যক্তি বাসায় এয়ার পিউরিফায়ার (বায়ু বিশুদ্ধকরণ) ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি বায়ুদূষণ নিয়ে আলোচনা বেড়ে যাওয়ায় দোকানটির বিক্রিও বেড়েছে। তবে সমাজের বিত্তবানেরাই এই পণ্যের গ্রাহক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে