বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
আজ থেকে দেশব্যাপী দলের সমাবেশ শুরু

নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি
নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিএনপিকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারপ্রধানের এমন কথাবার্তায় আশ্বস্ত হয়েছে দলটি। ফলে বিএনপি বেশ উৎফুলস্নও। তবে দলটির নেতারা মনে করেন, তারপরেও বাধা আসতে পারে। কারণ নির্বাচন প্রলম্বিত করতে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ আছে। তাই পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে দ্রম্নততম সময়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি। এ জন্য সরকারকে চাপে রাখতে পূর্বঘোষিত ঢাকাসহ দেশব্যাপী সভা সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। রাত পৌনে নয়টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৫ আগস্ট গণ-অভু্যত্থানের পর আজ বুধবার থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ফ্যাসিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে আগামী ২৫ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের ৬৭টি সাংগঠনিক জেলায় সভা-সমাবেশ করবে দলটি। এই কর্মসূচিতে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকেই 'মূল ফোকাস' হিসেবে তুলে ধরতে চায় তারা। প্রথম দিনে আজ ছয় জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। খুলনায় সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিরাজগঞ্জে নজরুল ইসলাম খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বরকত উলস্নাহ বুলু, সুনামগঞ্জে আরিফুল হক চৌধুরী এবং পটুয়াখালীতে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধান অতিথি থাকবেন। এদিকে দেশব্যাপী এই কর্মসূচি শুরুর আগে সরকারকে দ্রম্নত নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দিতে গত সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বৈঠকে নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় অবস্থান ও মনোভাব প্রধান উপদেষ্টাকে জানান বিএনপি নেতারা। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ওইদিন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন তিন নেতা। তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রম্নত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন। উনারা রোডম্যাপের ব্যাপারে সম্ভাব্য ১৫ তারিখের (ফেব্রম্নয়ারি) মধ্যেই কিছু একটা বলতে পারেন। নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এমন আশ্বাসের পরও বিএনপি নেতারা মনে করছে, এরপরও বাধা আসতে পারে। কারণ, দ্রম্নত নির্বাচন না দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্ররা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর সারাদেশে সংগঠন গোছানো ও সুসংহত করতে তাদের বেশ সময়ের প্রয়োজন। অন্যদিকে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতও এখন তৃণমূলে সংগঠনকে গোছানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপি নেতাদের অভিমত, এমন অবস্থায় দ্রম্নত নির্বাচন দাবিতে বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৌশলে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করলে ড. ইউনূসের ভীতি কাটতে পারে। এর ফলে তিনি রোডম্যাপ ঘোষণা ইসু্যতে এক ধরনের ভরসাও পাবেন। কারণ, ব্যাপক জনসমাগমে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে যে, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে রয়েছে এবং তারা নির্বাচন দাবিতে রাজপথেও নেমেছে। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সমাবেশ ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে সর্বাত্মকভাবে সফলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে নির্বাচনের যে আলো দেখা গেছে, দ্রম্নত রোডম্যাপ ঘোষণা হলে তা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। একইসঙ্গে সব ধরনের সংকট কেটে যাবে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও দূর হয়ে যাবে। কারণ, রোডম্যাপের পর পুরো দেশ তখন নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বে। দলটির নেতারা মনে করেন, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। দেশব্যাপী সমাবেশের কর্মসূচি রমজান শুরু হওয়ার আগেই সম্পন্ন হবে। জানা গেছে, আসন্ন রমজানে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বিএনপির। তবে ওই মাসে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি তুলে ধরা হবে। আর এই সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে রমজানের পরে রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তখন দেশব্যাপী বিভাগ ও মহানগরে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া, ৫ ফেব্রম্নয়ারি রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা বলেন, গণ-অভু্যত্থানের এত দিন পর এসে তারা কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিকে সমর্থন করেন না। দলীয় এই অবস্থান তারা বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে