গত ২৪ ঘণ্টায় 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে ৩৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ম্যাগাজিন ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সোমবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের বিবৃতিতে জানানো হয়, 'অপারেশন ডেভিল হান্টে' গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৩৪৩ জন এবং অন্যান্য মামলা ও অভিযানে ১১৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে অপারেশন ডেভিল হান্টে গত ২৪ ঘণ্টায় একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ১১ রাউন্ড গুলি, ছয়টি শটগান কার্তুজ, ১০টি ককটেল, ডজন খানেক দেশি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানায় ৬, শ্রীপুরে ৫, কালীগঞ্জ ৪, কাপাসিয়া ৩ এবং কালিয়াকৈরে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া, মহানগরের ১১ থানায় অভিযান চালিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয় ৭৯ জনকে। গ্রেপ্তার সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। এই নিয়ে গত দুই দিনে এই জেলায় ১৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এছাড়া, দেশের বিভিন্ন জেলায় অপারেশন ডেভিল হান্টে আরও অন্তত ১১১ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এরমধ্যে রংপুরেই গ্রেপ্তার করা হয় ৩০ জনকে।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৬ জন। রংপুর মহানগরী থেকে ৫ এবং বিভাগের ৮ জেলা থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা সবাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। নেত্রকোনাতেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৯ জনকে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ ১৯ জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
এছাড়া, ভোলায় কোস্ট গার্ডের অভিযানে ১৪ জন, খাগড়াছড়িতে ১০, রাজশাহী মহানগরীতে ৪, চুয়াডাঙ্গায় ৩ জন এবং হবিগঞ্জে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার আ'লীগের ২৬ নেতাকর্মী
চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের (সিএমপি) বিভিন্ন থানার অভিযানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ২৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'রোববার দুপুর ২টা থেকে সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নগরীর বিভিন্ন থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা বিভিন্ন মামলার আসামি।'
এর মধ্যে সিএমপির আকবরশাহ থানার অভিযানে মঈনুল হোসেন গালিব (৩২), সদরঘাট থানার অভিযানে শাহাজাহান ইসলাম প্রকাশ সাজু (২৮), নাহিদুল আলম এলিন (৪৩), সফর আলী (৩৯), বন্দর থানার অভিযানে লিয়াকত আলী আরিফ (৪১), পাহাড়তলী থানার অভিযানে মীরসরাই মিঠানালা ইউপি আওয়ামী লীগের সদস্য আলমগীর হোসেন মোর্শেদ (৪০), রিয়াদ ওরফে রিয়াজ (২৬), কোতোয়ালি থানার অভিযানে রবিন হোসেন (২৭), দুর্জয় চন্দ্র দাস (২২), জানে আলম, আক্তার হোসেন শাকিল (২৫), চকবাজার থানার অভিযানে শেখ খান ইমন (২২), ইপিজেড থানার অভিযানে মনির হোসেন (২০), বাকলিয়া থানার অভিযানে আরিফ (২৪), ইউনুস (২০), জসিম উদ্দিন (৫৪)।
পতেঙ্গা মডেল থানার অভিযানে মাহমুদ ইকবাল (৩৪), চান্দগাঁও থানার অভিযানে মনছুর আলম (৪৪), আব্দুর রহিম (৩৭), কাজী মো. ইব্রাহীম শরীফ (৪৯), হালিশহর থানার অভিযানে নাহিদুল আলম চৌধুরী (১৯), বায়েজিদ বোস্তামী থানার অভিযানে চাঁন মিয়া (২০), পাঁচলাইশ থানার অভিযানে মো. বেলাল (৩৪), সাজ্জাদ হাসান (২৩), খুলশী থানার অভিযানে রফিক (৪০) ও কর্ণফুলী থানার অভিযানে চরপাথরঘাটা ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পেয়ার আহমেদসহ (৪৫) মোট ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাজীপুরে গ্রেপ্তার ১০০
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, দেশজুড়ে চলা 'অপারেশন ডেভিল হান্ট'-এর দ্বিতীয় দিনে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও জেলা পুলিশের হাতে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. চয়ন ইসলামসহ আরও ১০০ জন গ্রেপ্তার হওয়ার খবর মিলেছে। জেলার শ্রীপুর উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গত দুদিনে গাজীপুর জেলায় অপারেশন ডেভিল হান্টে মোট ১৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার রাতে দ্বিতীয় দিনের অভিযান চালায় পুলিশ। সোমবার সকালে গাজীপুর মহানগর ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেন, 'অপারেশন ডেভিল হান্টের দ্বিতীয় দিনে রোববার রাতে গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে শ্রীপুর থানায় সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামসহ ৫ জন, কাপাসিয়া থানায় ৩ জন, কালিগঞ্জ থানায় ৪ জন, কালিয়াকৈর থানায় ৩ জন ও জয়দেবপুর থানায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।'
তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
অপরদিকে গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানায় অপারেশন ডেভিল হান্টের দ্বিতীয় দিন ৭৯ জনকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হক। তিনি বলেন, 'টঙ্গী পূর্ব থানায় ১১ জন, টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৮ জন, গাছা থানায় ৬ জন ও পুবাইল থানায় ৫ জনসহ মোট ৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
গ্রেপ্তারদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- টঙ্গী পূর্ব মোটর শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম (৩৮), গাজীপুর মহানগরের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আওলাদ (৪৫), গাজীপুর সিটির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মো. রুবেল (৩৫), ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মো. আব্দুল মোমিন (৩০), গাজীপুর মহানগর যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারা সরকার (৫০), গাছা থানা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জুম্মন খান (৪১), গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম (৩৫), গাজীপুর সিটির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. হামিদ মোলস্না (৪৩) ও একই ওয়ার্ডের যুবলীগের ২ নম্বর আহবায়ক সদস্য আব্দুস সালাম (৩৫)।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের এমপি গ্রেপ্তার
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, রোববার রাতে উপজেলার মাটির মসজিদ এলাকার একটি বাড়ি থেকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মো. চয়ন ইসলামকে (৬১) আটক করেছে শ্রীপুর থানার পুলিশ। সোমবার দুপুরের দিকে চয়নকে শ্রীপুর থানা থেকে শাহজাদপুর থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চয়ন ইসলাম (৬৩) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চরনবীপুর গ্রামের মাজাহারুল ইসলামের ছেলে। তিনি শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামের মাটির মসজিদ এলাকার মরহুম খাইরুল ইসলাম মিলনের মালিকানাধীন ৬ তলা ভবনের চার তলার একটি ফ্ল্যাটে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার কিছু সময় পর ওই বহুতল বাড়িটি ঘেরাও করে পুলিশ। পরে বাড়িটির চার ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শ্রীপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় জাহাঙ্গীর আলম নামে এক যুবলীগ নেতাকেও আটক করা হয়। সেসময় ছাত্র সমন্বয়রা মিছিল করে বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হাসান হাবিব বলেন, 'সিরাজগঞ্জের এমপি ওই বাড়িতে অবস্থান করছে আমাদের ছাত্ররা প্রথমে খোঁজ পায়। পরে আমাদের জানালে পুলিশে খবর দেই। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া অনেক আওয়ামী লীগের দোসর গাজীপুরে ঘাপটি মেরে আছে। আমরা তাদের খোঁজ করছি। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।'
গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চয়ন ইসলামকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় দুটি চাঁদাবাজি মামলা থাকায় তাকে শাহজাদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।'