প্রথম দিনে তিন জেলায় শতাধিক গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শনিবার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে যৌথবাহিনীর অভিযান। 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' নামে পরিচালিত এই অভিযানের প্রথম দিনে দেশের তিন জেলায় শতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী। এর মধ্যে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৯ জন। এরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। গাজীপুর জেলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৮১ জন। এছাড়া নোয়াখালীতে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সাত জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, নগরের ১৬ থানায় অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার বিকালে নগর পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. মাইদুল ইসলাম (৩৫), মো. জাহিদুল ইসলাম প্রকাশ রনি (১৯), শহিদুল আলম (২৭), শামছু আলম (৩০), জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), প্রিয়তোষ চৌধুরী (৬২), ইমামুল হক (২৮), মো. পাভেল (৩০), মো. মনিরুজ্জামান রিয়াদ (৩৯), মো. সুমন (২৯), মো. তামজিদ হোসেন (২১), মো. নাঈম গাজী (২১), মো. কচির উদ্দিন লিটন (৩৮), ইশতিয়াক ওয়াসিফ ২ \হ(২৫), রাসেল আহামদ (৩৮), মো. জুয়েল (৩০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৬), মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩৬) ও হাজী মো. ইব্রাহিম শরিফ (৪৯)। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম জানান, শনিবার দুপুর ২টা থেকে রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে এক বা একাধিক মামলা রয়েছে। গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার পাঁচটি থানায় অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের ৪০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে গাজীপুর জেলা পুলিশ তাদের আটক করেন। রোববার সকালে সাড়ে ৯টায় গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গতকাল থেকে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা বিভিন্ন ভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আটককৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এদিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী,র্ যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাতভর অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে। তাদের পক্ষ থেকে এখনো আটক বা গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি। শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ????ডেভিল হান্ট অপারেশনের অংশ হিসেবে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতিসহ আওয়ামী লীগের মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের সবাইকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল। এর আগে শনিবার (৮ ফেব্রম্নয়ারি) রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিনের ছেলে মিলন আহমেদ(৪৫), কাওরাইদ ইউনিয়ন (৯ নং ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মৃত আলফাজ উদ্দিনের ছেলে হালিম উদ্দিন(৬০), আওয়ামী লীগ কর্মী তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে মেহেদী হাসান বাপ্পি(২৮), ৬ নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাবেক ভাপতি টেংরা (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে স্বপন শাজাহান (৩৮), উজিলাব গ্রামের আব্দুল মান্নান মোলস্নার ছেলে আহমদ হোসেন মোলস্না, মাটিয়াগাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ সিদ্দিকের ছেলে মজিবুর রহমান, বরমী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের শহিদুলস্নাহর ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী সজিব(২৭), ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২ নং ওয়ার্ড) লাকচতল গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আবু ইউসুফ (২৪), গোসিংগা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি (৩ নং ওয়ার্ড) বাউনী মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল আল মামুন (৫৯) ও মাওনা ইউনিয়নের বেতজুরি গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেনসহ (৩৫)। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল যায়যায়দিনকে বলেন,্থ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অপরাধ মূলক কাজের জড়িত থাকার অভিযোগে ১০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। রোববার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে।্থ স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী জানান, অভিযানের প্রথমদিনে নোয়াখালী হাতিয়ায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সাতজনকে আটক করেছে। শনিবার রাতে হাতিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ (৬৪), হাতিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বেলাল উদ্দিনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৬), ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুস শহিদের ছেলে আবুল কালাম বিটু (৪৪), নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে আজিম উদ্দিন (৩১), তমরুদ্দি ইউনিয়নের মহিন উদ্দিনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ রাকছান (২৪), হাজী আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে আবদুল মাজেদ পলাশ (৪৩) ও আব্দুল জাহের (৩৯)। অভিযান সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও পুলিশের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে ৫ নম্বর চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজাদকে ওছখালী পুরাতন বাজারের ২ নম্বর ওয়ার্ড হতে আটক করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আরও ৬ জনকে আটক করে যৌথবাহিনী। অভিযানে একটি পস্নাস্টিকের হাতলযুক্ত ধারালো ছুরি, একটি ধারালো কুড়াল, দুইটি কাঠের হাতলযুক্ত ধারালো ছুরি ও তিনটি ৩টি লম্বা তলোয়ার উদ্ধার করা হয়। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণার পর হাতিয়া থানার এটি প্রথম অভিযান ছিল। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একই সঙ্গে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।'