গ্রীষ্মে বিদু্যৎ সরবরাহ

এডিপি'র তহবিলের টাকায় বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত

অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা অব্যয়িত অর্থ এ খাতে ব্যয় হতে পারে

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
চলতি মাসেই বিদু্যতের চাহিদা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াটে। যা এই মার্চেই ১৬ হাজার ও এপ্রিলে ১৮ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে। তবে, ক্রমবর্ধমান বিদু্যতের এই চাহিদা পূরণে বিপুল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে বকেয়া পরিশোধে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তহবিলের অর্থ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে এ খাতের বকেয়া পুরোপুরি পরিশোধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড় করে বকেয়া বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মার্চ থেকে বেসরকারি বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলোর (আইপিপি) পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি করা বিদু্যতের বকেয়া পরিশোধে ডলার ছাড়তে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বিদু্যৎ খাতে ছয় মাসের বিল বকেয়া রয়েছে- যার পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রসিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইমরান করিম বলেন, গত চার মাসের বকেয়া বাবদ সরকারের কাছে বেসরকারি বিদু্যৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর পাওনা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল তরল জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর পাওনা ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা না হলে তেল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা সম্ভব হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছে বেসরকারি বিদু্যৎকেন্দ্রগুলো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বিদু্যৎ খাতে ছয় মাসের বিল বকেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। আর তাই সংকট সমাধানে চলতি অর্থবছরে এডিবি তহবিলে অব্যয়িত অর্থ জ্বালানি ও বিদু্যৎ খাতে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২.৭৮ লাখ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে অর্থবছর শেষে অন্তত এক লাখ কোটি টাকা অবশিষ্ট থাকবে। যা এ খাতে বকেয়া পরিশোধে ব্যববহার হবে। অর্থ বিভাগ সূত্রের তথ্যনুযায়ী, চলতি অর্থবছরই গ্যাস-বিদু্যতের পুরো বকেয়া পরিশোধ করা হবে। এজন্য সংশোধিত বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হবে। এদিকে বিদু্যতখাতের বকেয়া পরিশোধ নিয়ে সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদু্যৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। সেখানে মার্চ থেকে বিদু্যতের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়তে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিদু্যতের বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা এবং গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ পেট্রোবাংলার পাওনার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। আসছে গরমে গড়ে প্রতিমাসে ভর্তুকি যুক্ত হবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদু্যতের ভর্তুকি পরিশোধের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখান থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে বিদু্যতের বকেয়া পরিশোধ করতে আরও প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। বিদু্যৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদু্যৎ খাতে ভর্তুকি সীমিত রাখা এবং বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখা হবে। এজন্য ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুটি বিদু্যৎকেন্দ্রের প্রতিটির উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এ বিষয়ে জ্বালানি ও বিদু্যৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুম এবং রোজায় বিদু্যৎ সরবরাহ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরতে শীঘ্রই প্রেস কনফারেন্স করা হবে।'## \হ