বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবি

রেলপথ অবরোধ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রেলপথ অবরোধ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সোমবার ঢাকার মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - ফোকাস বাংলা

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে এবার ঢাকার মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দাবি আদায়ে তিতুমীর ক্যাম্পাসের ফটকেও চলছিল 'আমরণ অনশন'। সোমবার রেলপথ অবরোধের কারণে টঙ্গী জংশন হয়ে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনগুলো আটকে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মহাখালীতে অবস্থান করছিলেন।

এদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মহাখালী রেলগেট এলাকায় চার পস্নাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়। সোমবার বিকালে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সোমবার সন্ধ্যায় তিতুমীর ক্যাম্পাসে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা অবস্থান করছিলেন বলে জানা যায়।

সোমবার সন্ধ্যায় কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, 'মহাখালীতে রেললাইন অবরোধের পর বিকাল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত ছয়টি ট্রেন আটকে গেছে। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, কালনী, জামালপুর কমিউটার, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসসহ ছয়টি ট্রেন এখন পর্যন্ত ছাড়া যায়নি। একইভাবে ঢাকায় প্রবেশ করবে এসব ট্রেনও বিভিন্ন স্টেশনে আটকে আছে।'

এর আগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা কলেজের মূল ফটকের সামনে বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। সেখান থেকে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাখালী রেল ক্রসিংয়ে যান। অনশনরত শিক্ষার্থীরা এই মিছিলের সামনে হুইল চেয়ারে করে অংশ নেন।

শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেলক্রসিংয়ে রেললাইনের ওপর বসে পড়লে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি নাখালপাড়ার দিকে আটকা পড়ে। পরে সেটিকে পিছিয়ে তেজগাঁও রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনের সময়সূচী অনুযায়ী রোববার বিকালের পর থেকে রাত পর্যন্ত লালমনি এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, দ্রম্নতযান এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, টিত্রা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধুর গোধুলী, হাওর এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম মেইল, সুরমা মেইল, তিতাস কমিউটার, ঈশাখাঁন এক্সপ্রেস, ভাওয়াল এক্সপ্রেস, তুরাগ কমিউটার ট্রেন ঢাকার কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা।

এর আগে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি জয়নাল আবেদিন বলেন, মহাখালী এলাকায় রেললাইন অবরোধের কারণে বিকাল ৪টা থেকে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আন্দোলনকারীরা শুরুতে লেভেল ক্রসিংয়ের দুই পাশ আটকালেও কিছুক্ষণ পর পুলিশের অনুরোধে এক পাশ খুলে দেন। কিন্তু পরে আবার শিক্ষার্থীরা দুই অংশই আটকে দেন।

বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার বলেন, 'তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা রেল ক্রসিংয়ে অবস্থান নেওয়ায় রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জাহাঙ্গীর গেইটগামী ও জাহাঙ্গীর গেইট থেকে বনানীর দিকে আসা গাড়িগুলো ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করছে।'

রেলগেইটের পূর্ব অংশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও বিজিবির সদস্য অবস্থান দেখা গেছে। অদূরেই দেখা গেছে জলকামান।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (কলেজ শাখা) যুগ্মসচিব নুরুজ্জামান বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি। বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আমরা অন্যান্য দাবির বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

তিনি বলেন, 'সরকার বারবার জানিয়েছে, তিতুমীরকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি মানার সুযোগ এই মুহূর্তে নেই। কিন্তু তারা বুঝতে চাচ্ছেন না। সড়ক আটকে আন্দোলন করে দাবি-দাওয়া আদায়ের অবস্থা এখন নেই।'

তিতুমীর কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জুলকারনাইন বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে এসে আমাদের আলোচনায় বসার কথা বলছেন। তবে আমরা সড়ক ও রেলপথ ছেড়ে সেখানে যাব না। তারা মহাখালী রেলক্রসিংয়ে এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করুক।'

এদিন বিকাল ৪টার দিকে মহাখালী রেলক্রসিংয়ে জাহাঙ্গীরগেটের দিকে যাওয়া সড়কের দুই পাশ ও রেলপথ আটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। রাত আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।

আন্দোলনকারীদের পস্ন্যাটফর্ম 'তিতুমীর ঐক্যর' সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; 'বিশ্ববিদ্যালয়'প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা কিংবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে