বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
কর্মশালায় তারেক রহমান

সংস্কার যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে দেশ তত বেশি সংকটে পড়বে

বিশেষ প্রতিনিধি
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সংস্কার যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে দেশ তত বেশি সংকটে পড়বে
রোববার রাজধানীর কদমতলী শিল্প এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্র সংস্কারের '৩১ দফা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান - ফোকাস বাংলা

সংস্কার প্রস্তাবের আলাপ-আলোচনা যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে দেশ তত বেশি সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, যদি সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে থাকি তাহলে যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের দল-মত নির্বিশেষে, শ্রেণি-পেশার সকল মানুষ বিতাড়িত করেছে সেই স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা আবার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসবে। তাই যে সকল বিজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গ, সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ সংস্কারের কথা বলছেন তারা দয়া করে এই আলাপ দীর্ঘায়িত করবেন না। এতে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে।

রোববার বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক কর্মশালায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে শ্যামপুরের কদমতলীর বালুর মাঠে 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি'শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ারি যুক্ত হন প্রধান অতিথি তারেক রহমান। এতে মহানগর দক্ষিণের ২৪টি থানার বিএনপিসহ ১১টি অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।

তারেক রহমান বলেন, 'সংস্কারের প্রস্তাবগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে সবচাইতে আগে নির্বাচনই প্রয়োজন। নির্বাচনের মাধ্যমে যাদেরকে জনগণ দায়িত্ব দেবে তারাই সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারবে, তাদেরকে শুরু করতেই হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কার বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। কারণ, যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে তারা জনগণের কাছে ওয়াদা করবে যে, তারা সুযোগ পেলে এই সব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।'

তিনি বলেন, 'সংস্কারকে যত দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা যাবে দেশকে দেশের মানুষকে তত দ্রম্নত আমরা বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব। যে সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে, যে সংস্কার প্রস্তাব অন্তবর্তীকালীন সরকারের কমিশনগুলো তৈরি করে দিয়েছে যেটাই হোক না কেনো এই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো রাস্তা নাই। একটিই পথ জনগণের নির্বাচন, জনগণের নির্বাচন।'

তারেক রহমান বলেন, জবাবদিহিতার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্বাচন হতে হবে, সেটি জাতীয় নির্বাচন কিংবা যে নির্বাচনই হোক। আমরা যদি দেশের ভাগ্যের পরির্বতন করতে চাই, আমরা যদি জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের কাজ শুরু করতেন চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে হবে। যতদ্রম্নত আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবো, তত দ্রম্নত আমরা পরিবর্তনের কাজ শুরু করতে পারবো। যতদ্রম্নত আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে পারবো, তত দ্রম্নত আমরা দেশকে আরও ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবো।

তারেক রহমান বলেন, আমি মনে করি, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। এটা সকলকে অনুধাবন করতে হবে। কোনো কোনো ব্যক্তি বলেন যে, নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আমি বলি, সাথে সাথে সব সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু নির্বাচন হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে, জনগণের রায়ের মাধ্যমে যে দল, যে ব্যক্তি বা যারা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে তখন তাদের মাধ্যমে সমস্যার গিট্টুগুলো আস্তে আস্তে খোলা যাবে।

তিনি বলেন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। শুধু দল নয়, পর্যায়ক্রমে দলের ভিতরে সেরকম চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ হয় তাহলে আমরা সেটি সার্বিকভাবে আনতে চাই। এজন্য আমরা দল-মত-নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেকটা মানুষের সহযোগিতা চাই। একই সঙ্গে শুধুমাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনলেই সবকিছু হয়ে যাবে না। কতগুলো আসল বিষয় বাকি থাকে, কি সেবিষয়? দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন গতি। এই গতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে অনেক মানুষকে দেখছি, যারা সংস্কার সংস্কার করছেন, প্রতিদিন এবং প্রতিনিয়ত সংস্কারের কথা বলছেন। সেই সময়, সেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহস করে দাঁড়িয়ে কোন সংস্কারের কথা বলতে শুনিনি। শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরাই বলেছিলেন। তবে আজকে যারা সংস্কারের কথা বলছেন, আমরা তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। হতে পারে তাদের সঙ্গে আমাদের ১০০ ভাগ মিল নেই, ৮০ ভাগ মিল আছে। তার অর্থ হচ্ছে, মূল যে বিষয়- সেটা বিএনপির আগেই বলেছে।

নেতা-কর্মীদের প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আসুন আজকের এই কর্মশালার মাধ্যমে আজকে আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহন করি যে, বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে সেই সুযোগ দিলে রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা প্রত্যেকে যে যার অবস্থান থেকে যে সংস্কারের ওয়াদা জনগণের সামনে দিয়েছি তা আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সেই ওয়াদা সর্বোচ্চ পূরণে চেষ্টা করব।

রাজধানীর যানজট, পরিবেশ দুষণ, স্বাস্থ্য সেবা, নারীর ক্ষমতায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকজন নেতা-কর্মীর প্রশ্নের জবাবও দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বিএনপির বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, লিটন মাহমুদ, আব্দুস সাত্তার, কে সিকান্দার কাদির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে