কুমিলস্নায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর যুবদল নেতার মৃতু্যর ঘটনা দ্রম্নত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হেফাজতে যে কোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, তৌহিদুল ইসলাম নামের ওই যুবদল নেতার মৃতু্যর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'কুমিলস্নায় পুলিশ গত রাতে এক যুবক, তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার ভোরে তার বাড়ি থেকে আটক করার পর তাকে নির্যাতন করে।'
জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য উলেস্নখ করে বিবৃতিতে সরকারে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলেও জানানো হয়।
ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে কয়েকটি কমিশন গঠন করার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, 'কমিশনগুলোর বেশিরভাগই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পুলিশি জেরা, অপরাধ ব্যবস্থাপনা ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো সম্ভাবনা দূর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করবে।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ বলেও বিবৃতিতে উলেস্নখ করা হয়।
তৌহিদুল ইসলাম নামের ওই যুবদল নেতাকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা আটক করেছিল বলে পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃতু্য হয় বলে কুমিলস্না কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম জানিয়েছিলেন। তৌহিদুল ইসলাম কুমিলস্না সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটালস্না গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি সদরের পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন।
তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বলেছিলেন, 'বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তাদের ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে, আপনারা হসপিটালে আসেন আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। সেখান থেকে পুলিশ প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই।'
কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তানভির আহমেদের ভাষ্য, 'শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃতু্য হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।'
এদিকে, কুমিলস্নার আদর্শ সদর উপজেলায় আটক হওয়ার পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃতু্যর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এ ঘটনায় সেনা কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয় জানিয়ে আইএসপিআর বলছে, মৃতু্যর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি 'উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি' গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় কুমিলস্না কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম বলেছেন, যৌথবাহিনী আমাদের শুক্রবার বেলা ১১টায় জানায়, গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন 'গোমতী বিলাসে' একজন আহত অবস্থায় আছে। পরে সেখান পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।