বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

'হেফাজতে' যুবদল নেতার মৃতু্য, দেশজুড়ে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
'হেফাজতে' যুবদল নেতার মৃতু্য, দেশজুড়ে তোলপাড়
তৌহিদুল ইসলাম

কুমিলস্নায় যৌথ বাহিনীর হেফাজতে যুবদল কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অন্তর্বতী সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকান্ডকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। এদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে কুমিলস্নায় যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃতু্যর ঘটনার দ্রম্নত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বতী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে সরকারের এই নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার ও মৃতু্যর সঠিক কারণ উদঘাটনে একটি 'উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি' গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

কুমিলস্নায় যৌথ বাহিনীর হেফাজতে নিহত যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের বড় মেয়ে তাসফিয়া আক্তারের কান্না থামছেই না। তাসফিয়া বলেন, 'আমরা এখন কাকে বাবা বলে ডাকব। আমার বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। আমার ভালো বাবাটাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চার বোন এতিম হয়ে গেছি। আমরা বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।'

শনিবার দুপুরে কুমিলস্না প্রেস ক্লাবের সামনে তৌহিদুলের লাশবাহী গাড়ি সামনে নিয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে তার বড় মেয়ে তাসফিয়া আক্তার এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসী অংশ নেন।

মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইয়াসমিন নাহার বলেন, 'বিনা অপরাধে আমার স্বামীকে সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এরপর অমানবিক নির্যাতন করে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার অবুঝ মেয়েগুলোকে যারা এতিম করেছে, তাদের বিচার চাই। আইন যদি সবার জন্য সমান হয়, তাহলে আমরা কেন বিচার পাব না?'

কুমিলস্নায় যৌথ বাহিনী তুলে নেওয়ার পর মারা যাওয়া যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের (৪০) বাড়িতে কান্নার রোল। কুমিলস্না মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাত আটটার দিকে স্বজনেরা তৌহিদুলের নিথর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন।

জানা যায়, মাত্র ছয় দিন আগে তৌহিদুলের বাবা মোখলেছুর রহমান (৮৫) বার্ধক্যের কারণে মারা যান। তার কুলখানির আয়োজন করা হয়েছিল শুক্রবার। সেটি শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। তৌহিদুলের মৃতু্যতে এলোমেলো হয়ে গেছে সবকিছু।

তৌহিদুলের মৃতু্যর ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। তার শরীরে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বজনেরা। তবে বিষয়টি নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই বলে দাবি করেছেন কুমিলস্না কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'তৌহিদুলের মৃতু্য নিয়ে পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। আমরা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি এবং ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ হস্তান্তর করেছি।'

তবে ভিন্ন কথা বলছেন ওই যুবদল নেতার পরিবার ও স্বজনেরা। শনিবার সকালে তৌহিদুলের ভগ্নিপতি সোহেল মহিউদ্দিন বলেন, 'কতটা অমানবিক নির্যাতন করে তৌহিদুলকে মেরে ফেলা হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা, একটি জিডিও ছিল না। আমরা এ ঘটনায় অবশ্যই মামলা করব। থানায় মামলা না নিলে আদালতে যাব। তৌহিদুলের চারটি মেয়ে এতিম হয়ে গেল।'

তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'আমার ভাইকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা যখন আমাদের বাড়িতে তলস্নাশি করে, তখন বারবার বলছিল, অস্ত্র কোথায়। আমরা কোথা থেকে তাদের অস্ত্র দিতাম? ভিত্তিহীন একটি তথ্যে আমার ভাইকে নির্যাতন করে মেরে ফেলল তারা। আমরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।'

তৌহিদুলের আরেক ভগ্নিপতি খান-ই-আলম বলেন, 'বাড়ির পাশের একটি পরিবারের সঙ্গে তৌহিদুলদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে। আমরা সন্দেহ করছি, তারাই আর্মিকে ভুয়া তথ্য দিয়েছে, তৌহিদুলের কাছে অস্ত্র আছে। আমরা পুরো ঘটনার তদন্ত চাই। যারা ঘটনার নেপথ্যে ছিল, তাদেরও বিচার চাই।'

তৌহিদুল ইসলাম কুমিলস্না আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি একই ইউনিয়নের ইটালস্না গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তারা চার ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে তৌহিদুল তৃতীয়। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর নিজের সংসারে স্ত্রী ও চার মেয়ে আছে। চারজনের মধ্যে বড় মেয়ে তাসফিয়া আক্তারের বয়স ১৪ বছর, অন্যরা এখনো শিশু। স্বামীকে হারিয়ে দিশাহারা তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার।

এর আগে শনিবার সকাল ১০টার দিকে ইটালস্না গ্রামের সড়কের ওপর লাশবাহী গাড়ি রেখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শত শত মানুষ। ওই যুবদল নেতাকে তুলে নিয়ে 'নৃশংসভাবে হত্যা' করা হয়েছে দাবি এলাকাবাসীর। চার মেয়েকে নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন তৌহিদুলের স্ত্রীও। তারা লাশবাহী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে