রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারে বৃহস্পতিবার দুপুরে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে যান হাসিনুর রহমান। ওই বাজারে পাঁচটি মুদিদোকান ঘুরে মাত্র একটি দোকানে দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পান তিনি। তবে সেটিও কিনতে হয়েছে বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে ১৫ টাকা বেশিতে।
হাসিনুর রহমান বলেন, 'আমার লাগত এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল; কিন্তু কয়েক দোকান ঘুরেও তা পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে দুই লিটারের বোতলই কিনেছি।'
শুধু শেওড়াপাড়া নয়, রাজধানীর অন্যান্য খুচরা বাজারেও বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না বললেই চলে। আর দু-এক দোকানে পাওয়া গেলেও সেগুলোতে গায়ে লেখা দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি রাখছেন বিক্রেতারা।
খুচরা বিক্রেতা ও তেলের পাইকারি সরবরাহকারীরা বলছেন, মূলত ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে কম ছাড়ছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের তীব্র সংকট হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। ক্রেতা ধরতে অনেক বিক্রেতা এখন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। খুচরা বিক্রেতা ও তেলের পাইকারি সরবরাহকারীরা বলছেন, মূলত ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে কম ছাড়ছেন।
এ বিষয়ে তেল সরবরাহকারী একাধিক কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে
সয়াবিনের এক, দুই ও পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ একেবারেই নেই বললে চলে। পরিবেশকদের কাছে বারবার তাগাদা দিয়েও তেল পাচ্ছেন না তারা। শুধু দু-তিনটি কোম্পানি বোতলজাত সয়াবিন বাজারে ছাড়ছে; যা চাহিদার তুলনায় সামান্য। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫-১৬৮ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১৫৮-১৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের সাম্প্রতিক সময়ে সরবরাহ সংকট শুরু হয় সপ্তাহ তিনেক আগে। এরপর সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্কুকর কমায়। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর ১০ থেকে ১১ টাকা কমেছে। কিন্তু সরকার শুল্ক-কর কমালেও আমদানি বাড়েনি; বরং বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেল পরিশোধন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এক সভা করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন রমজান উপলক্ষে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হওয়ার কথা (ঋণপত্র খোলা), তা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের বাজারেও ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবারের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। শুল্ক কমানোর পরও কেন ভোজ্যতেলের দাম কমছে না, সেটি দ্রম্নততম সময়ে পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে কমিটি।
বোতল থেকে 'দাম উধাও'
বচসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের
এদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু দোকানে যদিওবা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর মূল্য ঘষে তুলে ফেলা বা মূল্য দেখা গেলেও সে তুলনায় বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে প্রতিদিনই ক্রেতা-বিক্রেতারা বাকবিতন্ডায় জড়াচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজারে ঘোরাঘুরি করে খোলা তেল কিনেই বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, একটি গোষ্ঠী যোগসাজশ করে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য সংকট তৈরি করছে। আর বিক্রেতাদের ভাষ্য, কোম্পানিগুলো থেকেই সরবরাহ কম।
শুক্রবার রাজধানীর নিকেতন ও মহাখালী কাঁচাবাজারে কয়েকটি দোকান ঘুরেও ১ লিটার বা ২ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যায়নি।
এই বাজারের মায়ের দোয়া স্টোর্সের সামনে বচসা হচ্ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার। ক্রেতার ভাষ্য, বোতলের দাম ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে। ১ লিটারের সয়াবিন তেল তিনি দু'দিন আগেও কিনেছেন ১৬৩ টাকায়। সেই বোতলের দাম ঘষে তুলে ফেলে বিক্রেতা ১৭০ টাকা চাইছেন।
এ সময় বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, 'আমি কাল সন্ধ্যায় এই মাল আনছি। কারওয়ান বাজার থেকে। এখন আনছিই এভাবে। এছাড়া নাই। কিনাও অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তাই ১৭০ টাকা করেই বিক্রি করতে হইতেছে।'
সেখানে তেল কিনতে আসা শাহরিয়ার মাহমুদ নামের এক ক্রেতা বলেন, 'এগুলো আসলে ঠিক না। ওই যে হয় না, হঠাৎ একটা জিনিস নাই করে দিয়ে দাম বাড়িয়ে ফেলার যে ব্যাপারটা, ওইরকম আর কি। এটা শুরু হইছিল হাসিনার আমলে। এখনো ব্যবসায়ীরা সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন!'
সয়াবিন তেলের এই সংকটের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায় দিলেন নিকেতন কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি নিরঞ্জন সাহা। তিনি বলেন, 'সামনে রমজান মাস। সেটাকে সামনে রেখে বাজারে কিছুটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যাতে দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করা যায়।'