বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে পৃথক রিটের ওপর ১৭ ডিসেম্বর রায় দেবেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
পৃথক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রুলের ওপর বুধবার দ্বাদশ দিনে শুনানি শেষ হয়। রায়ের দিন ধার্যে রিট দুটি বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যতালিকায় আদেশের জন্য ১ ও ২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালত বলেছেন, একসঙ্গে রায় দেওয়া হবে। রায়ের জন্য ১৭ ডিসেম্বর রাখা হলো।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ
সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এই রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, সংস্থা, ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন। শুনানিতে রিট আবেদনকারী, বিএনপি, রাষ্ট্রপক্ষ, জামায়াত, গণফোরাম, ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য তুলে ধরেন।
রুলের ওপর গত ৩০ অক্টোবর, গত ৬, ৭, ১০, ১৩, ১৪, ২০, ২৫, ২৭, ২৮ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর (গত রোববার) শুনানি হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রথম রিটের ওপর সেদিন শুনানি শেষ হয়।
রোববার শুনানি নিয়ে আদালত বৃহস্পতিবার শুনানির দিন রাখেন। এদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৭টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন অক্টোবরে একটি রিট আবেদন করেন।
এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর গতকাল শুনানি হয়। এর মধ্য দিয়ে দ্বাদশ দিনে পৃথক রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের অন্তত ১৭টি ধারার বৈধতা নিয়েই মো. মোফাজ্জল হোসেন রিটটি করেন। আর পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা চ্যালেঞ্জ করে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি অপর রিটটি করেন। এই দুই রিটের ওপর একসঙ্গে ১৭ ডিসেম্বর রায় হতে যাচ্ছে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।