উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন কাজী নজরুল

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কাজী নজরুল ইসলাম
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আতাউর রহমান। এদিন নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে বাংলাদেশের হাইকমিশন স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদন হয় বৈঠকে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সচিব আতাউর রহমান বলেন, 'উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সেটি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা অফিসিয়ালি এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারছি না। তার কারণ হলো- একটু ছোট্ট ব্যাপার আছে। যেটা আইন মন্ত্রণালয়ে সমাধান করলেই এ বিষয়ক গেজেট প্রকাশ করা হবে।' কী ধরনের জটিলতা আছে, এ প্রশ্নের উত্তরে আতাউর রহমান বলেন, '২০২২ সালে হাইকোর্টে এ বিষয়ক একটা রিট হয়েছিল। এ ব্যাপারে জবাব দেওয়া আছে, সেই জবাবটাও আজকের (বৃহস্পতিবার) যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে- তার অনুকূলেই দেওয়া আছে, প্রতিকূলে নয়।' ২০২২ সালের ২২ জুন কাজী নজরুল ইসলামকে 'জাতীয় কবি' হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে আসাদ উদ্দিনসহ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী রিট আবেদন করেন। তাকে জাতীয় কবির ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে তখন রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। সংস্কৃতি সচিব আতাউর রহমান বলেন, 'হাইকোর্টে ইতোমধ্যে আমরা জবাব দিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে বলেছি, এটা করা উচিত। কিন্তু হাইকোর্টে এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এটা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি সাপেক্ষে গেজেট প্রকাশ করা হবে।' প্রসঙ্গত, ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী নজরুল ছেলেবেলায় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন 'দুখু মিয়া' নামে। পিতৃহীন কবি একে একে হারিয়েছেন কাছের স্বজনদের। আর্থিক অসচ্ছলতা তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল। সব বাধা অতিক্রম করে একসময় তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন। সাম্য ও মানবতার চেতনায় সমৃদ্ধ ছিল তার লেখনী। কবিতায় বিদ্রোহী সুরের জন্য হয়ে ওঠেন 'বিদ্রোহী কবি'। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকায় মারা যান কবি নজরুল। রেওয়াজ অনুযায়ী বাংলা পঞ্জিকার তারিখ মেনে তার জন্মদিন ও মৃতু্যদিন পালন করে বাংলাদেশ। কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'আমরা অনেক দিন ধরেই এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে এসেছি। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সরকারকে জানানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, এটা দ্রম্নত করা হবে। অবশেষে এটা হওয়ার খবরটি জেনে ভালো লাগছে।' নিউজিল্যান্ডে হবে হাইকমিশন এদিকে, নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে বাংলাদেশের হাইকমিশন স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের সূচক বিবেচনায় নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। মানব উন্নয়ন সূচকে দেশটির অবস্থান ১৬তম। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে ৩২তম স্থানে আছে দেশটি। নিউজিল্যান্ডের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেশি। তাই বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নিউজিল্যান্ড হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় বাজার। নিউজিল্যান্ডে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন। প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, ভৌগোলিকভাবে নিউজিল্যান্ড মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপরাষ্ট্র। তাই সমবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশ অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা সর্বদা সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে কনসু্যলার সেবা গ্রহণ করতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপুল অর্থ ব্যয়সহ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ হাইকমিশন স্থাপিত হলে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে সরাসরি দূতাবাসের সব প্রকার কনসু্যলার সেবা পৌঁছানো সহজ ও সাশ্রয়ী হবে বলে উলেস্নখ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ ৭২টি দেশের কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। এ অবস্থায় নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের একটি মিশন স্থাপিত হলে তা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধির পথ সুগম করবে বলে জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক স্বার্থ তথা রাজনৈতিক, কৌশলগত, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, প্রবাসী কল্যাণ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে একটি পূর্ণাঙ্গ মিশন স্থাপন করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে। তবে এ বিষয়ে যাবতীয় ব্যয় পরবর্তী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) নির্বাহ করা হবে।