জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনা আগে যত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে ট্রাইবু্যনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও আব্দুলস্নাহ আল নোমান।
আদেশের পর প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, 'জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে ট্রাইবু্যনালে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোর আসামিদের ব্যাপারে আমরা ট্রাইবু্যনালে বলেছি, একজন আসামি শেখ হাসিনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এ কারণে এসব মামলার সাক্ষীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন। পরবর্তীতে মামলা চলাকালে আমরা তাদের সাক্ষ্য দিতে ট্রাইবু্যনালে হাজির করাতে পারব না। তাই ট্রাইবু্যনালে শেখ হাসিনার ভীতিমূলক ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করি। ট্রাইবু্যনাল আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ
দিয়েছেন এবং শেখ হাসিনার আগে দেওয়া সব বক্তব্য সরিয়ে ফেলতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।'
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছাড়া অন্য বক্তব্য প্রচারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমরা শুধু বিদ্বেষমূলক ও ভীতিমূলক বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছি। রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারে কোনো বাধা নেই। কোন ধরনের বক্তব্য বিদ্বেষমূলক তা আমরা রাবাত কনভেনশনের উলেস্নখ করে দেখিয়েছি। সেখানে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সংজ্ঞায়িত করা আছে।'
গণমাধ্যমের মধ্যে ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব রয়েছে। এগুলোকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, এমন প্রশ্নে প্রসিকিউটর আব্দুলস্নাহ আল নোমান বলেন, 'আমরা আদেশের বিষয়টা বিটিআরসিসহ ওইসব সামাজিক মাধ্যমের কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব। এ ট্রাইবু্যনালের এক্সট্রা টেরিটোরিয়াল এখতিয়ার আছে।'
কবে থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন থেকেই এ আদেশ কার্যকর হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর মধ্যে তিনি সংবাদমাধ্যমে কোনো বক্তব্য না দিলেও আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে তার নামে কয়েকটি বিবৃতি প্রকাশ হয়েছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশ ও বিদেশে অবস্থান করা নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার কয়েকটি ফোনালাপ ফাসের খবরও প্রকাশ হয়েছে। তবে সেগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতিরই কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বিবৃতি ও বক্তব্যকে অন্তর্র্বর্তী সরকার 'ভালোভাবে দেখছে না' বলে গত ১৪ নভেম্বর জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান।
ভারতে থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া নিয়ে এর আগে দেশটির হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছেও আপত্তি জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।