বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময়কান্ড

পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১২ আসামি রিমান্ডে, আরও একটি মামলা

চট্টগ্রাম বু্যরো
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১২ আসামি রিমান্ডে, আরও একটি মামলা

চট্টগ্রাম আদালতে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে কারাগারে নেওয়ার সময় পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের ঘটনায় কোতোয়ালি থানার দুই মামলায় গ্রেপ্তার ১২ জন আসামির ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়।

রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন- জয় নাথ, রুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, সুমিত দাস, আমান দাস, বিশাল দাস, সনু মেথর, সুমন দাস, রাজেশ দাস, দুর্লভ দাস ও অজয় সূত্রধর চৌধুরী।

এদিকে, আদালত প্রাঙ্গণে সহিংসতার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। ৭৯ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে মামলাটি করেছেন খুলশী থানা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উলস্নাহ চৌধুরী। এ নিয়ে সহিংসতা ও আইনজীবী হত্যাকান্ডে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান জানান, পুলিশের ওপর হামলার দুই মামলায় ১২ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বুধবার কোতোয়ালি থানা-পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মফিজুর রহমান আরও বলেন, এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়

কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উলেস্নখ করে হত্যা মামলা করেন।

আরেক মামলায় আসামি ৭৯

সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২৯ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়।

মঙ্গলবার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন খুলশী থানা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উলস্নাহ চৌধুরী। এ নিয়ে সহিংসতা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি মামলার বাদী পুলিশ।

মামলার উলেস্নখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক কাউন্সিলর জহুর লাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী, ইসকন নেতা প্রবীর চন্দ্র পাল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী শুভ কান্তি দাস এবং চট্টগ্রাম অ্যাডভোকেটস ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি নাথ।

মামলার এজাহারে উলেস্নখ করা হয়, বাদী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ২৬ নভেম্বর তার ব্যবসা-সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য তিনি একজন আইনজীবীর চেম্বারে যান। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার সময় দেখতে পান, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকন সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্রসহ অবস্থান করছে। বাদীর মাথায় টুপি দেখে আসামিরা 'শিবির ধর, শিবির ধর' বলে মারধরের জন্য এগিয়ে আসে। তখন তিনি ভীত হয়ে দৌড়ে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে অর্থাৎ মেথরপট্টিতে ঢুকলে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জন তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে অজ্ঞাত একজন লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। তখন আসামি বিজয় তার হাতে থাকা ছোরা দিয়ে জবাই করার হুমকি দেয়। পরে উপস্থিত জনতা এগিয়ে আসলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর তিনি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।

বুধবার কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম বলেন, বাদী মামলায় অভিযুক্তদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ এবং ইসকন সমর্থক বর্ণনা দিয়েছেন। এই মামলায় প্রথম আসামি করা হয়েছে ৩২ নম্বর আন্দরিকলস্না ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা জহর লাল হাজারিকে। দ্বিতীয় আসামি হয়েছে ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।

আলিফ হত্যার প্রকৃত বিচার আমরা

করবই :অ্যাটর্নি জেনারেল

এদিকে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডের প্রকৃত বিচার করার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আলিফের জন্মভূমির কাছে, তার পিতা-মাতার কাছে, ভাই-বোনদের কাছে, আপনাদের কাছে এই মর্মে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ যে, আলিফের হত্যাকান্ডের প্রকৃত বিচার আমরা করবই। আলিফের হত্যাকারী যেই হোক, যতই শক্তিশালী হোক, হত্যাকারীরা আইনের আওতার বাহিরে যেতে পারবে না।'

বুধবার দুপুর ২টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া চুনতি ফারাঙ্গা এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান শেষে গণমাধ্যমে দেওয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'ইতোমধ্যেই আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যেটা করণীয়, সেটা আমরা করছি। আলিফ যেমন তার পিতার সন্তান, তেমনিই আলিফ আমাদের পরিবারের গর্বিত সদস্য ছিলেন। আমরাও আলিফের আরেকটি পরিবার হিসেবে পাশে থাকব।'

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বার অ্যাসোসিয়শনের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।

উলেস্নখ্য, গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোতোয়ালি থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে