সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে হাসনাত

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাতীয় ঐক্য গঠনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন ছাত্র-জনতা। ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে হাসনাত বলেন, 'ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ক যেন জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের হয়।' ভারতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'অন্তর্র্বর্তী সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে, গণ-অভু্যত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। \হআপনারা আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে না দেখে, জনগণের দৃষ্টিতে দেখে এ সরকারের সঙ্গে ন্যায্যতার সম্পর্ক গড়ে তুলুন।' এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেন, 'যদি আমাদের সম্পর্ক কোনোভাবে বিচু্যত হয়, সার্বভৌমত্ব-অখন্ডতার প্রশ্নে এক চুলও ছাড় দেব না।' এর আগে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে 'জাতীয় ঐক্য'র ডাক দিতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংলাপ হবে বলে বার্তা আসে। এর অংশ হিসেবে বুধবার তিনি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন। পরদিন বসবেন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'এই দুই মিটিংয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যাশনাল ইউনিটির ডাক দেবেন।' একই লক্ষ্যে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। সেই বৈঠক শেষেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে ক্ষমতাচু্যত হয়ে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে চলে যাওয়ার পর দেশের দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। তখন থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বেশ সরব ভূমিকায় রয়েছে ভারতের গণমাধ্যম, যাকে 'অতিরঞ্জিত' এবং 'সংঘবদ্ধ অপপ্রচার' হিসেবে বর্ণনা করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দু'দেশের সরকারের মধ্যে কয়েকবার বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের আট দফা দাবি আদায়ে মাঠে নামা সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও বেড়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন নাকচের দিন তার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হলে, সেই ঘটনার জন্য ইসকনকে দায়ী করে বক্তব্য দেয় বিভিন্ন দল, সেই সঙ্গে ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগকেও দায়ী করা হয়। এর মধ্যে সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের হামলা হয়, যাকে 'পূর্বপরিকল্পিত' হিসেবে বর্ণনা করে 'ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া' জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা। কী বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন প্রধান উপদেষ্টা- এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, 'ইদানীং কিছু ঘটনা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে অপতথ্য ছড়ানোর প্রয়াস আমরা দেখছি। অনেকাংশে দেখছি ভারতীয় গণমাধ্যম খুবই আক্রমণাত্মকভাবে এগুলো করছে। সেজন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য তৈরি করতে আমাদের বলতে হবে, 'তোমরা আস, দেখ কি হচ্ছে।' 'একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় ঐক্যটাও ধরে রাখতে হবে। আমাদের দেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এখানে ইমেজের প্রশ্ন আছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এ অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে নামতে হবে।' সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে প্রেস সচিব বলেন, 'বাংলাদেশ নিয়ে যে ভয়ানক ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তার জবাব দিয়ে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে হবে। এটি জাতীয় দায়িত্ব বলে মনে করি।' আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাকে 'বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচারের ফলাফল' হিসেবে দেখছেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, 'এটার জন্য দায় চাপাবো ভারতীয় গণমাধ্যমকে। এ গণমাধ্যম কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মিথ্যা অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা আগেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশে কী হচ্ছে। অবস্থান পূর্বনির্ধারিত থাকলে বেশি এগোনো যায় না। ফলে ভারতীয় জনগণ সহিংসতা করছে।' প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।