বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিরোধী দলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ সামরিক আইন জারি

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিরোধী দলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ সামরিক আইন জারি
ইউন সুক-ইওল

উত্তর কোরিয়াপন্থি কমিউনিস্ট বাহিনীর হাত থেকে দেশ রক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। মঙ্গলবার গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন 'চ্যানেল ওয়াইটিএনে' দেওয়া জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টের সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে সামরিক বাহিনী। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি

যদিও পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত চিরবৈরী প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই সামরিক আইন জারি করা হয়েছে কি-না, সেই বিষয়ে ভাষণে কিছু জানাননি প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তবে সামরিক আইন জারির পেছনে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।

হঠাৎ সামরিক আইন জারির ঘোষণায় দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে মানুষের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশটির ইতিহাসের গোড়ার দিকে একাধিক কর্তৃত্ববাদী নেতা এই পথে হেঁটেছিলেন। তবে ১৯৮০-এর দশক থেকে গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা করে দেশটি। সম্প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ওনের মানের ব্যাপক পতন ঘটেছে; যা নিয়ে

চাপের মুখে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন জারির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে হোয়াইট হাউস সাড়া দেয়নি।

প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল বলেছেন, মুক্ত এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক আইন জারির পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না। তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলো সংসদীয় প্রক্রিয়া জিম্মি করে দেশকে সংকটের মাঝে ফেলে দিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমি উত্তরের কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়ার প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং স্বাধীন সাংবিধানিক সুরক্ষার জন্য সামরিক আইন ঘোষণা করছি।' তবে এই বিষয়ে কী ধরনের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা তিনি ভাষণে বলেননি।

দক্ষিণের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা 'ইয়োনহাপ' বলেছে, পার্লামেন্ট ভবনের প্রবেশপথ আটকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।

ইউনের এই পদক্ষেপ এমন এক সময় এসেছে, যখন তার পিপল পাওয়ার পার্টি এবং প্রধান বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি পরবর্তী বছরের বাজেট বিল নিয়ে তীব্র বিরোধে লিপ্ত। বিরোধী এমপিরা গত সপ্তাহে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে একটি উলেস্নখযোগ্যভাবে কাটছাঁট বাজেট পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, 'আমাদের পার্লামেন্ট এখন অপরাধীদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে গেছে। এটি একটি আইন প্রণয়নের স্বৈরতান্ত্রিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে যা আমাদের উদার গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে।'

বিরোধী আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তারা রাষ্ট্রের প্রধান কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য সব বাজেট ছেঁটে ফেলেছেন। তিনি বলেন, মাদক অপরাধ মোকাবিলা এবং জননিরাপত্তা বজায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর বাজেট কাটছাঁট করে দেশকে মাদকের অভয়ারণ্য এবং জননিরাপত্তাহীনতার অবস্থায় পরিণত করা হয়েছে।

ইউন বিরোধী দলকে 'রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি' হিসেবে অভিহিত করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যকে 'শাসন ব্যবস্থা পাল্টে দেওয়া' বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 'আমি যত দ্রম্নত সম্ভব রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনব।'

এদিকে, দেশটির পার্লামেন্টের বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জায়ে-মিউং অনলাইনে এক লাইভস্ট্রিমে (সরাসরি) বলেছেন, 'সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং বন্দুক ও ছুরিসহ সেনারা দেশ শাসন করবেন। কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের অর্থনীতি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে। দেশের নাগরিকরা দয়া করে জাতীয় পরিষদে আসুন।'

দেশটির শীর্ষস্থানীয় কিছু সরকারি প্রসিকিউটরকে অভিশংসন এবং সরকারি বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি প্রস্তাব পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পেয়েছে। এই প্রস্তাবে বিরোধীদের সমর্থনের পর তাদের উত্তর কোরিয়াপন্থি হিসেবে আখ্যা দিয়ে নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।

এর আগে, সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রীরা সরকারের বাজেট প্রস্তাব থেকে চার ট্রিলিয়ন ওনেরও বেশি কাঁটছাট করতে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট ইউন বলেছেন, বিরোধীদের এই পদক্ষেপ সরকারি প্রশাসনের প্রয়োজনীয় কার্যাবলীকে দুর্বল করে ফেলবে।

উলেস্নখ্য, ২০২২ সালে পিপল পাওয়ার পার্টির নেতা প্রেসিডেন্ট ইউন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী লি জ্যা মিউংকে মাত্র দশমিক সাত শতাংশ পয়েন্টে হারিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে