ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ
প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় সারাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। দেশটির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবারও বিক্ষোভ দেখিছেন ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলো। জানিয়েছেন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটাদেশ। এদিন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি এবং শাহবাগে জাতীয় নাগরিক কমিটি বিক্ষোভ করে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তারা 'ভারত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে' অভিযোগ করে বলেন, 'বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে নানা অপপ্রচার করছে।' এর বিরুদ্ধে ভারতকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ: আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং দেশটির উগ্র হিন্দুবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের নয়াপল্টনের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, অ্যাডভোকেট আব্দুল সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামিম, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল
ইসলাম নয়নসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী এতে অংশগ্রহণ করেন। পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভারতের কড়া সমালোচনা করেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির বিক্ষোভ: একই ইসু্যতে শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মিছিল বের করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে অংশগ্রহণ করেন রাজধানীর বিভিন্ন থানার নাগরিক কমিটির সদস্যরা। মিছিলে তারা ভারতকে সতর্ক করে বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে থাকেন। তারা স্স্নোগানে বলেন- 'দিলিস্ন না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা; জবাব দে জবাব দে, হাইকমিশনে হামলা কেন; গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি' ইত্যাদি।
মিছিলের শুরুতে কমিটির বক্তারা বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা সহ্য করতে পারে না। এরই ধারাবাহিকতায় আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। ভারতের অধিকাংশ গণমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে অভিযোগ করে বক্তারা প্রতিটি সীমান্ত-হত্যার বিচার এবং ভারতের সঙ্গে করা দুই দেশের অসম চুক্তিগুলো বাতিলের দাবি জানান।
কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'ভারতকে দুঃখ প্রকাশ করলে হবে না। জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ভারতের আপামর জনতার সঙ্গে আমাদের কোনো বিভেদ নাই। আমরা মানুষ হিসেবে তাদের সঙ্গে মিশতে চাই। এরজন্য তাদেরও প্রমাণ করতে হবে, তাদের উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে।'
সমাপনী বক্তব্যে কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দেশের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।
ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ: এদিকে, হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বরিশালে দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর বিএনপি। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবারও দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। বাংলাদেশ মিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানান বিএনপি নেতারা। এ সময় সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তারা। এছাড়া সরকারি বিএম কলেজ ও সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ মিছিল করে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
খুলনায় কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয় থেকে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর বিএনপি। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে নানা অপপ্রচার চলছে। এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভারতকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাবনায় বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতের উগ্রবাদীরা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির জন্য আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসন মেনে নেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।
বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুমিলস্না মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। সকাল সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কের বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেয় কুমিলস্না দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশীদ ইয়াছিন।
এ ছাড়াও, নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। এ সময় বক্তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান।
এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মশাল মিছিল করেছে গণঅধিকার পরিষদ ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মশাল মিছিলটি চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে মইজ্জ্যারটেক চত্বরে এসে শেষ হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা ও উপজেলা নেতারা।
এদিকে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাতে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে মুরাদপুরে যান বিক্ষোভকারীরা।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এমদাদুল হাসান, শ্রমিক অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মো. সেলিম, যুব অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সহ-সভাপতি ইসুফুল আলম রুকন, কর্ণফুলী উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান মির্জা, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু তাহের তসলিম প্রমুখ।
এদিকে সোমবার রাতে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে 'সাম্প্রদায়িক উস্কানির' অভিযোগ তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সংগঠনটির চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির অভিযোগ, 'ভারতীয়রা আমাদের কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করছে। তারা আমাদের মাতৃভূমি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।'