মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

অভিযোগ গঠনে ত্রম্নটির কারণেই এই রায়

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অভিযোগ গঠনে ত্রম্নটির কারণেই এই রায়

দুই দশক আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার মামলায় হাইকোর্টের রায়ে আসামিদের সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে অভিযোগ গঠনে ত্রম্নটির কারণ দেখিয়ে। আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রায় দেয়।

জজ আদালত এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃতু্যদন্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছিল।

সেই দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল মঞ্জুর করার পাশাপাশি মৃতু্যদন্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।

জজ আদালতে দন্ডিত ৪৯ আসামির মধ্যে যারা আপিল করেছেন তাদের পাশাপাশি যারা করেননি সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, মুফতি আব্দুল হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে যে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল সেই অভিযোগপত্রই ছিল 'অবৈধ'।

এ ছাড়া কোনো সাক্ষী কোনো

আসামিকে গ্রেনেড ছুড়তে দেখেননি, তাই শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া যায় না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে কোর্ট।

রায়ের পর আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির বলেন, 'মুফতি হান্নানের দুইবার কনফেশন নেওয়া হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত রায় দেয়। উপমহাদেশের চারশ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় কনফেশনের ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি। এবার আমরা এর সাক্ষী হলাম।'

আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, 'এ মামলায় দুইবার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এক আসামির দ্বিতীয়বার কনফেশন (ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি) নিয়ে পরে আরেকটি চার্জশিট দেওয়া হয়, যেটা আইনে গ্রহণযোগ্য নয়। আদালতে আমরা এটা বলেছি, আদালত সেটা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া সাক্ষীরা কোনো আসামিকে গ্রেনেড ছুড়তে দেখেননি। তাই সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এ রকম একটি মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সবাই ব্যথিত। কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো যে কাউকে আসামি করে সাজা দেওয়া যায় না। এ রায়ে তাই প্রমাণ হয়েছে।'

রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানান, 'এখানে মূল বিষয়টি আরম্ভ হয়েছে জনসভার পারমিশন নিয়ে। জনসভার পারমিশন সরকার দিয়েছিলেন পাশের একটি মাঠে। সরকারকে পরবর্তী পর্যায়ে না জানিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ওই স্থান পরিবর্তন করে এ রাস্তার মধ্যে নিয়ে আসেন। এটা ছিল তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে সরকারি দলকে একটা বেকায়দায় ফেলাবার জন্য তিনি এ কাজটি করেছিলেন। সেজন্য এ যে গ্রেনেড হামলাটা হয়েছিল, আমাদের বিশ্বাস-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ গ্রেনেড হামলটা তখন হয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম কোথাও ছিল না। সাবসিকোয়েন্টলি আব্দুল কাহার আকন্দকে দিয়ে এ মামলার মধ্যে তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করেন। তাকে সম্পৃক্ত করে এ মামলায় সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।'

জয়নুল আবেদীন বলেন, 'আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করেছে, দেখেছে যে সাক্ষ্যে, যে চার্জশিটে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে, এমনকি মৃতু্যদন্ড দেওয়া হয়েছে- এ মৃতু্যদন্ড টিকতে পারে না। ডাইরেক্ট কোনো এভিডেন্স না থাকলে কাউকে মৃতু্যদন্ড দেওয়া যায় না, সেখানে আজীবন সাজাও দেওয়া যায় না।'

এ আইনজীবীর ভাষ্য, 'সমস্ত দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে আদালত মনে করেছে এ মামলায় যারা আপিল করেছে এবং যারা আপিল করতে পারেনি প্রত্যেককেই খালাস দেওয়া প্রয়োজন। এ মামলাটিকে সারা বছর আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। তারা চেয়েছিল তারেক রহমানকে মামলা দিয়ে চিরজীবন তাকে বাইরে রাখবেন এবং এমনকি তাকে মৃতু্যদন্ড দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালত এরকম কোনো এভিডেন্স পায়নি যে তারেক রহমানকে মৃতু্যদন্ড দেবেন। আজকে এ জাজমেন্টের মাধ্যমে সবাই খালাস পেলেন।'

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, 'আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ট্রায়ালটা কনটিনিউ করা হয়। আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন, যারা এ মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত ছিলেন, আপিল করেছেন এবং যারা আপিল করেননি সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান সাহেব আজকের এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আজকে প্রমাণিত হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমান সাহেবকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল সে রায় আইনগতভাবে মোকাবিলার মাধ্যমে তিনি আজকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।'

কায়সার কামালের ভাষ্য, গত দুই দশক ধরে এই মামলাটি দেশের রাজনীতিকে 'ডমিনেট করেছিল'। তিনি বলেন, 'সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছিলেন তারেক রহমান সাহেব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে