২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার হাইকোর্টের রায়কে বিজয়ের মাসের 'ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সুসংবাদ হিসেবে দেখছে বিএনপি। পাশাপাশি এই রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছে দলটি।
দলটির নেতাদের দাবি, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত করেছিল। আদালতের ঐতিহাসিক এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক ছিল।
এদিকে হামলা মামলা থেকে তারেক রহমানের খালাস পাওয়ার খবরে রাজধানীতে আনন্দ মিছিল করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। লন্ডন থেকে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'এই রায়ে প্রমাণ হলো, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলায় তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করেছিল।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'তারেক রহমানের বিরুদ্ধে
আনা মামলার অভিযোগ থেকে তিনি আইনগতভাবে মোকাবিলা করে উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো যে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক ছিল।' এই রায়ে বিএনপি মহাসচিব শুকরিয়া আদায় করে সারাদেশের দলের নেতাকর্মীদেরও শুকরিয়া আদায়ের আহ্বান জানান।
এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে বিজয়ের মাসে ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির একটি সুসংবাদ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, 'আজকে বিজয়ের প্রথম দিনে একটি বিজয়ের খবর আপনাদের দিতে চাই। সেটা হলো, আপনাদের মনে আছে, ২১ আগস্ট একটা গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। সেই ঘটনার মামলায় যে তারেক রহমান জড়িত ছিলেন না, তাকেসহ সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে।'
আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, 'হাইকোর্টের এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আদালত থেকে কেউ ন্যায়বিচার পায়নি। দীর্ঘদিন পর বিচার বিভাগ ন্যায়বিচারের পথে হাঁটছে।'
এদিকে রোববার হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, '২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে এই মামলার ন্যায়বিচার হয়নি। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে- আওয়ামী লীগ কাহার আকন্দকে যেদিন নিয়ে এসে তদন্তকারী নিয়োগ করল, সেদিনই বোঝা গেছে, সরকারের একটি অশুভ মনোভাব রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে, জোর করে তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্য নেতাদের সাজা দেবে, শাস্তি দেবে- এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আমি বলব, আজকে ন্যায়বিচার হয়েছে, হাইকোর্ট যথার্থ বিচার করেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ন্যায়বিচারের জন্য যে সংগ্রাম করেছি, এর কিছুটা হলেও প্রতিফলন হয়েছে বলেও উলেস্নখ করেন রিজভী।'
নয়াপল্টনে আনন্দ মিছিল
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালাস পাওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। রোববার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল বের করেন তারা। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজারও নেতাকর্মী মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে নাইটএঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উলস্নাহ আমান, যুবদলের কামরুজ্জামান জুয়েল, এনামুল হক এনাম, শরিফ উদ্দিন জুয়েল প্রমুখ।
কুমিলস্নার মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল
মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে প্রার্থনা
অন্যদিকে রাজধানীতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ সব আসামি খালাস পাওয়ায় কুমিলস্নার মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল, মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে প্রার্থনা করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। রোববার রায়ের খবর শুনে কুমিলস্নার মুরাদনগরে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের এলাকায় মুহূর্তেই হাজার হাজার মানুষ আনন্দ মিছিল নিয়ে মুরাদনগর সদরে আসেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাজার হাজার সাধারণ মানুষও আনন্দ উলস্নাসে মেতে উঠেন। মুরাদনগরের প্রতিটি গ্রামগঞ্জে মিষ্টি বিতরণ করেন আপামর জনতা।?
এ ছাড়াও বিকাল ৪টায় মুরাদনগর ডি আর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শোকরানা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এ সময় উপজেলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন পর এই মামলায় খালাস পাওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও তাদের মন্দিরে প্রার্থনার আয়োজন করে। তারা উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করে।
এদিকে নেতাকর্মীরা দাবি জানান, যারা কায়কোবাদকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেশান্তরিত করেছে, তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই কাজী জুননুন বসরী বলেন, 'হামলা-মামলা-জুলুম-নির্যাতনের পরও এই মুরাদনগরের মানুষ যেভাবে আমার বড় ভাইয়ের পাশে ছিলেন, আমরাও আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি, আজীবন থাকব ইনশাআলস্নাহ। আমার দাদাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আজ ১৩ বছর পরিবার ও মুরাদনগরের মানুষ থেকে দূরে রেখেছে। তারা ভেবেছে, মুরাদনগর থেকে কায়কোবাদকে মুছে দেবে। কিন্তু রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ যেভাবে আনন্দ মিছিল নিয়ে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে পরিণত করেছে, এতে আজ প্রমাণিত হয়েছে, মুরাদনগরে কায়কোবাদ দাদার বিকল্প নেই।'
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভুইয়া বলেন, 'ফ্যাসিস্ট সরকার ও এর দোসর ইউসুফ আব্দুলস্নাহ হারুন মিথ্যা সাজানো মামলায় জড়িয়ে মুরাদনগরের আপামর জনতার হৃদয়ের মনি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে ১৩ বছর মুরাদনগরের মানুষ থেকে দূরে রেখেছে। আজ জনতার বিজয় হয়েছে। আমার নেতা খালাস পেয়েছে। আমাদের নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে যারা দূরে রাখল, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।'
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক সরকার মজিব বলেন, '৫ আগস্ট দেশ স্বাধীন হলেও আমাদের মনের ব্যথা যায়নি। আজ এই রায়ের মাধ্যমে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা পেলাম। আজ আমরা ৫ আগস্টের চেয়েও বেশি আনন্দিত।'
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মুরাদনগর উপজেলা সেক্রেটারি অরুপ নারায়ন পৌদ্দার পিংকু বলেন, 'মুরাদনগরের সব হিন্দুরা মিলে আমরা মানববন্ধন করেছিলাম, অবিলম্বে কায়কোবাদ দাদার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে। ভগবান আমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। দাদা মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছে। আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে আনন্দ উদ্যাপন ও ভূরিভোজ করছি।'
আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও দোয়ার আয়োজনকে ঘিরে লাখ লাখ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় মুরাদনগর উপজেলা সদর।
আজকের আনন্দকে ঘিরে আলেম ওলামা ও সাধারণ মানুষদের জন্য ১০টি গরু ও মন্দিরে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছে মুরাদনগরের আনন্দিত জনতা।