গ্রাহকের কাছে বিদু্যৎ 'বেচতে পারবে' বেসরকারি বিদু্যৎকেন্দ্র

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বেসরকারি বিদু্যৎ কেন্দ্র সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিদু্যৎ বিক্রি করবে- এমন একটি বিধান করতে যাচ্ছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। চাইলে সরকারও এসব কেন্দ্র থেকে বিদু্যৎ কিনতে পারবে। শনিবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত র্'যাপিড ট্রান্সিজশন টু রিনিউয়্যাবলস; রোল অব ডমেস্টিক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস' শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। উপদেষ্টা জানান, এই পরিকল্পনা থেকেই বেসরকারি বিদু্যৎকেন্দ্রে থেকে সরকারের বিদু্যৎ কেনা সংক্রান্ত ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার বা আইপিপি নীতিমালা বাতিল করা হচ্ছে। উপদেষ্টা বলেন, "এখন বেসরকারি বিদু্যৎকেন্দ্র থেকে শুধু সরকার বিদু্যৎ কিনবে না। বিদু্যৎকেন্দ্রগুলো নিজেই গ্রাহক খুঁজে বের করবে। আমরা সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের সুযোগ দেব ভাড়ার বিনিময়ে।" বিদুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ও শিল্প এলাকায় সঞ্চালন লাইনও প্রয়োজনে সরকার নির্মাণ করে দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, "এজন্য আইপিপি নীতিমালা বাদ দিয়ে 'মার্চেন্ট পাওয়ার পলিসি (এমপিসি)' এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খুব শিগগির তা প্রকাশ করা হবে।" বিদু্যতের সব কাজ দরপত্রে সরকার প্রতিযোগিতাপূর্ণ পদ্ধতিতে সব সেবা ও পণ্য কিনতে চায় জানিয়ে ফাওজুল বলেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে টেন্ডার দেওয়া হবে। যাদের সক্ষমতা থাকবে তারাই অংশ নেবেন। উপযুক্ত হলে কাজ পাবেন। 'সরকারি টেন্ডার পেতে কোনো মন্ত্রী, তাদের আত্মীয়, সচিব, আমলা, সরকারি অফিসারদের চেনা লাগবে না। সরকারকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে চাই।' ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রম্নত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। আইনটি 'দুর্নীতি করার জন্য' তৈরি হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ''এই আইনে সরাসরি যাকে খুশি, তাকেই সরকারি কাজ দেওয়া যায়। এভাবেই 'দুর্নীতি হয়েছে'। আইনটিতে বিদু্যৎখাতের ব্যবসায়ী ও মন্ত্রী ও আমলাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।'' নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন সম্প্রসারণে সরকারি জমি দেওয়ার কথাও বলেন জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ করে রেলওয়ের প্রচুর জমি রয়েছে। শত শত বিঘা জমি পড়ে আছে। অনেক বিদু্যৎকেন্দ্রকে জমি দেওয়া হয়েছে। সেসব জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে। বর্তমানে বিদু্যতের চাহিদা ও উৎপাদনের হিসাবে পোশাক খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি লাগবে আড়াই থেকে সাত হাজার মেগাওয়াট। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়া গত্যন্তর নেই বলেও মনে করেন ফাওজুল। বিশাল এই সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'সম্পত্তির বিপরীতে জমানাত রেখে এ খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকগুলো মুনাফা নিশ্চিত করতে পারবে ঋণও আদায় হবে। \হতৈরি পোশাক খাতের ক্রেতারাও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দিচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা বলেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতের বড় ক্রেতাদের একটি এইচএনএম জানিয়েছে আগামীতে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত বিদু্যতের অন্তত ১৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসতে হবে। শিল্প স্থাপনেও সরকারি জমি প্রস্তুত করে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যাতে উদ্যোক্তারা এসেই 'পস্নাগ অ্যান্ড পেস্ন' পদ্ধতিতে কারখানা চালু করতে পারেন।" খেলাপি ঋণ নিয়েও কথা বলেন জ্বালানি উপদেষ্টা। বলেন, "হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও বেক্সিমকো, এস আলম গ্রম্নপের হিসাবে টাকা নেই। সব ফাঁকা, সব সংখ্যা মাত্র। ব্যাংকগুলো ব্যালেন্সশিট নির্ভর ঋণ দিয়েছে বেশি। তাও দিয়েছে, মুখ চিনে। এ কারণে এখন খেলাপি ঋণ প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা হয়েছে। সম্পত্তি জামানত নির্ভর ছিল না এসব ঋণ।" সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ব্যাংকের অর্থায়ন যৎসামান্য। এখানে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। "বড় ধরনের ঋণের ব্যবস্থা করা যায় সিন্ডিকেট ঋণের মাধ্যমে। এখাতে বিনিয়োগ করে আসছে এমন ১৮টি বিদেশি অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও সরকার ও ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা নিতে পারেন।" ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উলস্নাহ মৃধার সভাপতিত্বে সেমিনারে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশানুর রহমান, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক বা ক্লিন এর চিফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী, সেন্টার ফর এনভায়নমেন্টাল অ্যান্ড পার্টিসিপটরি রিসার্চ- সিইপিআর এর চেয়ারপারসন গৌরাঙ্গ নন্দী।