শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২
চিন্ময় কর্মকান্ডের দায় নেবে না সংগঠনটি

প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত ইসকন নিষিদ্ধের দাবি

ঢাকা অফিস ও চট্টগ্রাম বু্যরো
  ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত ইসকন নিষিদ্ধের দাবি
চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ- ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন মহল। একই সঙ্গে সংগঠনটির বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। হাইকোর্ট বলেছেন, কর্তৃপক্ষের তৎপরতা যেন জারি থাকে। তবে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর দায় নেবে না সংগঠনটি। এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে চিন্ময় বহিষ্কৃত। তার বক্তব্য ও কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানের নয়। এদিকে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনের ঘটনায় আরও আটজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার দিনভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে সহিংসতার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ছবি থেকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। অন্যদিকে, হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো চট্টগ্রামে আদালতে কর্মবিরতি পালন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। পাশাপাশি বন্ধ ছিল ৭৪টি আদালতের কার্যক্রম। চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার আদালত এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তার অনুসারীরা। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হন সাইফুল ইসলাম আলিফ। সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সারাদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে উগ্র সংগঠন ইসকন সদস্যদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোনো আইনজীবী অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মারা গেলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর ফ্যাসিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসীরা দেশি-বিদেশি দোসরদের নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন সদস্যরা সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আইনজীবীরা যেন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে তার পেশা পরিচালনা করতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি জোরাল দাবি জানাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতেও জোরাল দাবি জানাচ্ছে, যোগ করেন মাহফুজুর রহমান মিলন। অন্যদিকে, আলিফ হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম আদালতে কর্মবিরতি পালন করে জেলা আইনজীবী সমিতি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আইনজীবীরা উপস্থিত না থাকায় বন্ধ ছিল চট্টগ্রামের ৭৪টি আদালতের কার্যক্রম। একই সঙ্গে আইনজীবী সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি কালোব্যাজ ধারণ করেছেন আইনজীবীরা। সকাল থেকে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নগরের লালদিঘীর পাড়, কোতোয়ালি মোড় ঘুরে আদালত এলাকায় এসে আইনজীবীরা সমাবেশ করেন। এ সময় তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন। আলিফ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ইসকন নিষিদ্ধ করতে স্স্নোগান দেন আইনজীবীরা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে আলটিমেটাম দিয়ে আইনজীবী নেতারা বলেন, 'ঘটনার পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এত বড় ঘটনা হতো না। এটি পুলিশের ব্যর্থতা। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে আপনি পদে থাকতে পারবেন না।' চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, 'সমিতির সিদ্ধান্তে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে গতকালও দ্বিতীয় দিনের মতো আদালতে কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা। এ কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।' চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, 'চট্টগ্রাম আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় দিনের মতো মামলার শুনানি হয় নাই।' চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বলেন, 'আদালতে কোনো শুনানি হয়নি।' চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-৭ এর বেঞ্চ সহকারী মো. কফিল উদ্দীন বলেন, 'আমাদের ট্রাইবু্যনালেও শুনানি হয়নি।' এদিকে, ইসকনকে উগ্র সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে তিনটি ইসলামী দল। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে 'সমমনা ইসলামী দলসমূহ'র ব্যানারে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি। সংবাদ সম্মেলনে সমমনা ইসলামী দলসমূহের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী। তিনি বলেন, 'দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে, ছাত্র-জনতার বিপস্নবকে ব্যর্থ করতে বহুবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে ইসকন নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ইসকনের বিরুদ্ধে বলা মানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বলা নয়। হিন্দু ভাইবোনদের সতর্ক হতে হবে, যাতে ইসকনের পাতা ফাঁদে কেউ পা না দেয়।' এ সময় সমমনা ইসলামী দলগুলোর পক্ষে তিনি তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- ১. উগ্র সংগঠন ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা। ২. অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যাকান্ডসহ ইসকন সংঘটিত সব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার করা। ৩. সাম্প্রদায়িক উসকানি বা দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চালনাকারীদের দ্রম্নত আইনের আওতায় আনা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মওলানা ইউসুফ আশ্রাফ, নেজামে ইসলামী পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মওলানা আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ। আজ হেফাজতের বিক্ষোভ চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সকালে জামিয়া রাহমিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ সময় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর সভাপতি মওলানা জুনায়েদ আল হাবিব। বৈঠকে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি এবং চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মওলানা মাহফুজুল হক, মওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মওলানা মামুনুল হক, মওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মওলানা জালালুদ্দীন প্রমুখ। কঠোর অবস্থানে সরকার হাইকোর্টে জানাল রাষ্ট্রপক্ষ এদিকে, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনায় সরকারের পদক্ষেপের কথা হাইকোর্টকে জানিয়েছে সরকার। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ওই প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আসাদ উদ্দিন আদালতকে বলেন, এ ঘটনায় সরকারের অবস্থান 'কঠোর'। এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে, একটিতে ১৩ জন, একটিতে ১৪ জন এবং আরেকটিতে ৪৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিসিটিভি ভিডিও দেখে আরও ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ তৎপর আছে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। এরপর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যাতে জানমালের ক্ষতি না হয়, যাতে জনগণের উদ্বেগ না থাকে। এরপর আবেদনকারী আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান ইসকনের নিষিদ্ধের পক্ষে বললে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক আবার রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বলেন এবং তার (আবেদনকারী) দুঃশ্চিন্তা দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তবে ইসকনের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো আদেশ আদালত এদিন দেননি। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন বলেন, 'সরকার যেহেতু ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেখানে কোর্ট তো হস্তক্ষেপ করবে না। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা থাকলে তখন কোর্ট হস্তক্ষেপ করে।' সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুধবার এই বেঞ্চে ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে আবেদনটি করেন। চট্টগ্রাম ও রংপুরে জরুরি অবস্থা জারির আর্জিও তিনি জানান। আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের মতামত জানতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে পাঠান আদালত। পরে এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। চিন্ময়ের দায় নেবে না ইসকন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ইসকন বাংলাদেশের কেউ নন। তিনি ইসকন থেকে বহিষ্কৃত। তার বক্তব্য ও কার্যক্রমের দায় ইসকনের নয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর স্বামীবাগে ইসকন বাংলাদেশের আশ্রমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এসব কথা বলেন। ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বলেন, অনেক মাস আগেই প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস এবং চট্টগ্রামের পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকন বাংলাদেশ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং উলেস্নখ করা হয়, তাদের দ্বারা সংঘটিত কার্যক্রম ইসকনের নয়। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে ইসকন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটি ও শিশু সুরক্ষা দলের সদস্য হৃষীকেশ গৌরাঙ্গ দাস বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে কয়েকটি শিশু অভিযোগ করেছিল যে, তাদের সঙ্গে অসদাচরণ ও খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এটা জানার পর চিন্ময়কে চিঠি দেওয়া হয় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। তখন তদন্তের স্বার্থে তিন মাসের জন্য তাকে সংগঠন ও পুন্ডরিক ধামের পদ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তবে তিনি তা মানেননি। সংগঠনের নির্দেশনাও শোনেননি। এ কারণে তাকে ইসকন বাংলাদেশ থেকে স্থায়ীভাবে গত জুলাইয়ে বহিষ্কার করা হয়। চিন্ময় কৃষ্ণের কার্যকলাপের জন্য ইসকন বাংলাদেশকে নিষিদ্ধের দাবি যুক্তিযুক্ত নয়। ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছড়ানোর এক ধারাবাহিক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষত চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মর্মান্তিক মৃতু্যর পর এই অপচেষ্টা চরমে পৌঁছেছে। এটা করা হচ্ছে অন্যায়ভাবে। চারু চন্দ্র দাস আরও বলেন, গত ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে ইসকন জানিয়ে দেয় যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তার বক্তব্য সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। ইসকন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে 'চলমান মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা'র সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সুনাম ক্ষুন্নের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখা ও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেকোনো প্রকার উসকানিমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা এবং সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাই একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান চারু চন্দ্র দাস। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ইসকন বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী সদস্য বিমলা প্রসাদ দাস ও চিন্ময় গদাধর দাস ব্রহ্মচারী। আইনজীবী হত্যায় গ্রেপ্তার আরও ৮ জন সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় সহিংসতা ও আইনজীবী খুনের ঘটনায় আরও আটজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ক্রাইম) রইছ উদ্দিন বৃহস্পতিবার বলেন, 'বুধবার দিনভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে সহিংসতার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ছবি থেকে শনাক্ত করা হয়েছে।' মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ; এ পর্যন্ত মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। মামলা না হলেও তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ছবি দেখে শনাক্ত করা দুইজনের মধ্যে একজন নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার রাজীব ভট্টাচার্য, অন্যজনের নাম আমান দাশ। ভিডিওতে হেলমেট পরে ধারাল অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ানোদের মধ্যে যাদের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে বলে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিনের ভাষ্য। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রুমিত দাশ, গগন দাশ, সুমিত দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, মনু মেথর, আমান দাশ ও রাজীব ভট্টাচার্য পুলিশের ওপর হামলার মামলার আসামি। পাশাপাশি তারা হত্যাকান্ডেও জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। 'ছবিতে থাকা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী' সংঘর্ষের মধ্যে ধারাল অস্ত্র হাতে মাথায় হেলমেট পরা যাদের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে একজনকে শুভ কান্তি দাশ নামে চিহ্নিত করেছে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুভ দাশকে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। যা বললেন মমতা ব্যানার্জি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, 'কোনো ধর্মের ওপরই আঘাত আসুক, আমি চাই না। এখানে ইসকনের যিনি আছেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এটা যেহেতু অন্য একটি দেশের বিষয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ইসু্যতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের পাশেই আছি।' বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন। এর আগে তার দলের একজন সংসদ সদস্য, মি. সৌগত রায় দিলিস্নর সংসদ ভবনে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছিলেন, 'খুবই দুঃখজনক ঘটনা, চিন্তার বিষয়। হিন্দুদের ওপর এই অত্যাচার হওয়া উচিত নয়। আমি এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই।' তবে তৃণমূল কংগ্রেসের দল-নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা ও তার পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে এই প্রথম মন্তব্য শোনা গেল। গত দুইদিন ধরেই বিজেপির নেতা-নেত্রীরা প্রশ্ন তুলছিলেন যে, পার্শ্ববর্তী দেশে যখন, তাদের কথায়, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চলছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই কেন! এর আগে কংগ্রেস নেত্রী ও সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধরাও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করব, যাতে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয় এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোরালভাবে তুলে ধরা হয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে