শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে সম্প্রীতির ডাক

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে সম্প্রীতির ডাক
চট্টগ্রামে ইসকন অনুসারীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বুধবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দোয়া ও সম্প্রীতি সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন -স্টার মেইল

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন 'গায়ে পড়ে' দেশের মানুষের মধ্যে 'বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা' চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলিফ হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে আয়োজিত শোক ও সম্প্রীতি সমাবেশে এমন অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা।

জুলাই-আগস্টের অভু্যত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি বলছে, আওয়ামী লীগ ও দলটির দোসরদের 'মদদে' ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দেশের 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে প্রোপাগান্ডা' চালাচ্ছে।

সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, 'গতকালকে (মঙ্গলবার) ইসকনের পক্ষ থেকে যেভাবে গায়ে পড়ে এখানে হামলা চালানো হয়, ঝগড়া লাগানোর মতো। বাংলাদেশের মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে শান্তিপ্রিয়, শুধু শুধু গিয়ে ঝগড়া পছন্দ করি না। কিন্তু দিনের পর দিন একটা সংখ্যালঘু তত্ত্ব দিয়ে মানুষকে উসকে দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ এই তত্ত্ব পছন্দ করে না, খায় না।'

তিনি অভিযোগ করেন, 'ভারত চায় বাংলাদেশের মধ্যে একটা কথিত ইসলামি বিপস্নব দেখাইতে, যেটার মাধ্যমে সে ভারতে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। ভারতীয় মিডিয়াগুলো দেখাতে চায় বাংলাদেশে একটা ইসলামি বিপস্নব হয়েছে এবং এ দেশের মুসলমানরা এখন সব হিন্দুকে বিপদে ফেলবে।'

চট্টগ্রামে ইসকন পরিচালিত মন্দির পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে মঙ্গলবার তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের হাকিম আদালত।

ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতন

সম্প্রদায়ের লোকজন। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বিকাল পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিক্ষোভের পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।

সে সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করেন। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ঢিলে আদালত মসজিদ কমপেস্নক্সের দ্বিতীয় তলার কাচ ভেঙে যায়।

এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও জামিন না দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সেখানে বলা হয়, 'উগ্রবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন হামলার পরে এই ঘটনা ঘটল। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটের পাশাপাশি প্রতিমা ও মন্দিরে চুরি, ভাঙচুর ও অবমাননার কিছু নথিবদ্ধ ঘটনাও রয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে, তখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত দাবি উত্থাপনকারী একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা দুর্ভাগ্যজনক।'

ওই বিবৃতিকে 'ভিত্তিহীন' হিসেবে তুলে ধরে কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, 'বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি কেবল তথ্যের ভুল উপস্থাপনই নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার যে মেজাজ, সেটারও পরিপন্থি।'

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

তিনি বলেন, '৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছিল সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ দেখিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী একটা আলোড়ন তৈরি করবে, তখনও আমাদের দেশের মানুষ মন্দির পাহারা দিয়েছে, সনাতন ভাই-বোনদের এলাকা পাহারা দিয়েছে। দেশের মানুষ ধর্মের নামে রাজনীতি চায় না, ওই কমিউনাল রাজনীতি এ দেশের মানুষ আর চায় না।'

ফাতেমা বলেন, 'শহীদ সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের বাবা তার ছেলে লাশের সামনে দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেছেন। কত বড় মন এ দেশের মানুষের।'

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাসিরের লোক ইসকনের পেছনে 'কলকাঠি নাড়ছে' অভিযোগ করে ফাতেমা 'আওয়ামী লীগের দোসরদের' গ্রেপ্তার করে গণহত্যার বিচার শুরুর দাবি জানান।

মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, 'শেখ হাসিনা তার দোসর মোদিকে নিয়ে বাংলার মাটির দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এ দেশের মানচিত্রের দিকে দিলিস্ন থেকে যে হাত বাড়ানো হবে, সেই হাত ভেঙে গুটিয়ে রেখে দেওয়া হবে। ইসকন লীগের রূপে হোক, আনসার লীগের রূপে হোক, যেই রূপেই হোক, সে হাত ভেঙে দেওয়ার জন্য এ দেশের মানুষ প্রস্তুত।'

এ দেশে শত শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'একজনকে হত্যা করে আপনারা যদি ভেবে থাকেন হিন্দু-মুসলিমদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করাবেন, তাহলে তা আপনাদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।'

সমাবেশে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে তার রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম, সিনথিয়া জারিন আয়েশা, আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন ইসলামসহ অন্যান্য সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে