সংঘাতের ঘটনায় তিন মামলা

আইনজীবী সাইফুলের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল, দাফন সম্পন্ন

হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ৩৩ জন গ্রেপ্তার :ঢাকা-চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার দাবি হাসনাত-সারজিসের ইসকন নিষিদ্ধে রিট, রাষ্ট্রের প্রতিবেদন চান আদালত চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অফিসের নথিপত্রে আগুন

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চট্টগ্রাম বু্যরো
ইসকন অনুসারীদের হামলায় নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজায় ঢল নামে লাখো মানুষের। ছবিটি বুধবার চট্টগ্রাম আদালত চত্বর থেকে তোলা -স্টার মেইল
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে সংঘর্ষে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ৪ দফা নামাজে জানাজা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে প্রথম এবং সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা দেড়টায় নিউ মার্কেট মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জানাজা। পরে বিকাল ৪টায় লোহাগাড়ার চুনতি ফারেঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে সবশেষ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে। আবেগাপস্নুত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ- ইসকনকে 'সন্ত্রাসী' সংগঠন অ্যাখা দিয়ে এটি নিষিদ্ধ এবং আলিফ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তারা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ- ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত। অন্যদিকে, আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো আদালত বর্জনসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। দোয়া মাহফিল আয়োজনসহ নেওয়া হয়েছে ৫টি সিদ্ধান্ত। এছাড়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভের সময় ইসকন সদস্যদের সহায়তা করার অভিযোগে চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের (মুন্সি সমিতি) নথিপত্রে আগুন দিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জানাজায় লাখো মানুষের ঢল সরেজমিন দেখা গেছে, বুধবার সকাল ৯টার পর নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জড়ো হতে থাকে ওয়াসা মোড়ের জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে। অনেককে ট্রাক-বাসে করে জেলা-উপজেলা থেকে আসতেও দেখা গেছে। ১১টা বাজতেই জনস্রোত তৈরি হয় জানাজার নামাজ ঘিরে। জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ অংশ নেন। তিনি ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরীসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা থেকে এসে জানাজায় যোগ দেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুলস্নাহ। এ সময় শাহজাহান চৌধুরী বলেন, 'কোনো বক্তব্য নাই আর। শুধু প্রশাসনের ভাইদেরকে বলতে চাই, গত ১৫ দিন ধরেই আমি বলে আসতেছিলাম; এই চিন্ময় দাস উসকানিমূলক সমাবেশ প্রেস ক্লাবের সামনে করেছে, চেরাগির পাহাড়ে করেছে, লালদীঘির ময়দানে করেছে। আমি বলেছি এরা বেড়ে যাচ্ছে। তাদের আর কোনো কর্মসূচি করতে দেবেন না। কিন্তু কেউ আমার কথার পাত্তা দেননি।' সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে প্রথম জানাজা শেষে উপস্থিত আইনজীবীরা অবিলম্বে আলিফের খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবি জানান। এছাড়া ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি তোলেন তারা। কেউ কেউ সহকর্মী আলিফের স্মৃতিচারণ করে আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন। কান্নায় ভেঙে পড়েন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'আপনারা জানেন আমাদের প্রিয় ভাই আলিফ নৃশংসভাবে খুন হয়েছে। তাই আইনজীবী সমিতির পক্ষ হতে আজকে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।' আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা লড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আসামিদের পক্ষে আইনজীবী লড়লে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাব আমাদের ভূমিকা কী হবে।' হত্যাকান্ডে জড়িত গ্রেপ্তার ৩০ ঢাকা-চট্টগ্রামে বিক্ষোভ চট্টগ্রামে এপিপি সাইফুল ইসলাম হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে অন্তত ছয়জনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরের পাথরঘাটা মেথর পট্টি, আন্দরকিলস্না, হাজারি গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের নিশ্চিত করেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক ফেসবুক পোস্টে উলেস্নখ করা হয়, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে অন্তত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের শনাক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতভর যৌথ বাহিনীর অভিযান ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মঙ্গলবার আদালতপাড়ায় তান্ডব এবং আইনজীবী নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হবে। মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে একটি আইনজীবীকে হত্যা ও আরেকটা পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলা। এদিকে, অতিদ্রম্নত সময়ের মধ্যে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুলস্নাহ ও সারজিস আলম। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস মোড়ে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি করেন তারা। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুলস্নাহ বলেন, 'আমরা ভুলে যাই নাই আওয়ামী লীগের সহায়তায় এই ইসকন কীভাবে গত ১৬ বছর পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠে আজকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে স্বৈরাচারের সঙ্গী হয়ে ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেবো।' দেশে সকল ধর্মের সহাবস্থান থাকবে জানিয়ে কেন্দ্রিয় এই সমন্বয়ক আরও বলেন, 'আমরা সবার অধিকার রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করবে, সেসব উগ্রবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশে কোনো জায়গা দেওয়া হবে না।' সারজিস আলম বলেন, 'যে রক্তের বন্যা বইয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই চিন্ময়রা উসকানি দেয়; সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে খুনি হাসিনা উসকানি দেয়; সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে জঙ্গি ইসকনরা উসকানি দেয়; সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতের কিছু প্রেতাত্মা উসকানি দেয়। আমরা স্পষ্ট করে সব প্রেতাত্মাদের বলে দিতে চাই, আমরা ১৬ বছরের স্বৈরাচার খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়া করেছি। ছোটোখাট কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা।' সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, চট্টগ্রামের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখে। এদিকে, সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ঢাকায় মহানগর ও জজ কোর্টের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইনজীবীরা। বুধবার বেলা পৌনে ১টার দিকে কয়েকশ' আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রদক্ষিণ করে। পরে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বিরুদ্ধে আইনজীবীদের বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে দেখা গেছে। তারা ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে দেখা যায় তাদের। ইসকন নিষিদ্ধে রিট, রাষ্ট্রের প্রতিবেদন চায় আদালত এদিকে, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ- ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন করেন। চট্টগ্রাম ও রংপুরে জরুরি অবস্থা জারিরও আর্জি জানিয়েছেন তিনি। আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের মতামত জানতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে পাঠায় আদালত। পরে এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আদালতকে বলেছেন, এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। সরকার বিষয়টি 'গুরুত্বের সঙ্গে' দেখছে। এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। ইসকন প্রসঙ্গে তিনি আদালতকে বলেন, এ সংগঠন রেজিস্টার্ড কিনা, এ সংগঠন নিষিদ্ধ হবে কিনা, এ সংগঠনের বিরুদ্ধে কী কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়- সরকার সবকিছু দেখবে এবং আদালতে উপস্থাপন করবে। পরে আদালত বিকালের মধ্যে ইসকনের বিষয়ে জানাতে বললে অ্যাটর্নি জেনারেল এক দিন সময় চান। আদালত তখন বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে। আদালত বর্জনসহ ৬ সিদ্ধান্ত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো আদালত বর্জনসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। এ ছাড়াও জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজনসহ আরও পাঁচ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়? বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সদস্য লোহাগাড়া নিবাসী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে বিগত ২৬ নভেম্বর পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে উগ্রবাদী সংগঠন 'ইসকন' এর সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করেন। উক্ত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সমিতির জরুরি সভায় নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তসমূহ হলো- সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালোব্যাজ ধারণ করা, ২৮ নভেম্বর তারিখ চট্টগ্রামের সকল আদালতের কার্যক্রমে কর্মবিরতি, আইনজীবী আলিফের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বৃহস্পতিবার বাদ জোহর কোর্ট হিল জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন, একইদিনের অবকাশকালীন প্রীতি সমাবেশে বাতিল। এছাড়া আগামী ১ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় আইনজীবী দোয়েল ভবনের সম্মুখ থেকে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং সমিতির বার্ষিক ইনডোর গেমস স্থগিত থাকবে। চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অফিসের নথিপত্রে আগুন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভের সময় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের সদস্যদের (ইসকন) সহায়তা করার অভিযোগে চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের (মুন্সি সমিতি) নথিপত্রে আগুন দিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতের প্রবেশমুখে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার উল্টোপাশে ওই সমিতির অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর ইসকন সদস্যরা তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মুন্সি সমিতির সদস্যরা নিজেদের পোশাক এবং খাবার পানি বিক্ষোভকারীদের সরবরাহ করেছেন। এছাড়া তারা উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্টও দিয়েছেন ফেসবুকে। ফিরোজুল ইসলাম তালুকদার নামে এক বিক্ষুব্ধ আইনজীবী বলেন, 'এখান থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) মুন্সির পোশাক পরে গিয়ে ইসকনকে সাপোর্ট করা হয়েছে। তারা আইনজীবীদের অংশ। তারাতো এটা করতে পারে না। সাধারণ আইনজীবীরা এই নিয়ে ক্ষুব্ধ।' তিনি আরও বলেন, 'মুন্সিখানার নাম দিয়ে এখানে সকল অপকর্ম করা হয়। প্রায় ১৮শ' চেম্বার আছে আদালতে। তারা চেম্বারে না গিয়ে এখানে বসে থাকে। সকালে তাদেরকে ফোন করে স্যার বলে বলে চেম্বারে নিতে হয়। আমরা চেম্বারে যাই ৯টায়, তারা সাহেবের মতো ১০টা বা ১২টার দিকে আসে।' এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের মুন্সি সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি নাথ বলেন, 'আমাদের নথি, ব্যাংকের স্টেটমেন্ট, ডিপিএসের কাগজপত্র, সমিতির সদস্যদের হিসাবের বই আলমারি ভেঙে বের করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সমিতিতে কোনো বহিরাগত ঢোকেনি। আমাদের সংগঠনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সবাই আছে।' তিনি বলেন, 'সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও গতকাল (মঙ্গলবার) আমি উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু আমি কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। এখন আমরা চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।' চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, 'মুন্সি সমিতিতে আগুন দেওয়ার বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আপনারা সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখুন।' চট্টগ্রামে সংঘাতের ঘটনায় তিন মামলা এদিকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল ও কোতোয়ালি মোড়ে তিন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় মামলায় ৪৯ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাত ৬০০/৭০০ জনকে, রঙ্গম সিনেমা হলের সামনের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উলেস্নখ করে ৩০০/৪০০ জনকে অজ্ঞাত এবং কোতোয়ালি মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে অজ্ঞাত আরও ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারেক আজিজ বলেন, 'গ্রেপ্তার ২৮ জনের মধ্যে আট জন আইনজীবী খুনের সঙ্গে সন্দিগ্ধ আসামি। তারা হত্যা মামলায়ও আসামি হবে।' তবে এসব মামলায় কাদেরকে আসামি করা হয়েছে এবং কাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। আইনজীবী খুনের ঘটনায় আলাদা মামলা হবে বলেও পুলিশ জানায়। এর আগে চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার আদালত এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তার অনুসারীরা। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হন সাইফুল ইসলাম আলিফ। আইনজীবীরা এ হত্যাকান্ডের জন্য ইসকন সমর্থকদের দায়ী করেছেন। সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।