রাবার বুলেট ছুড়ছেন নিরাপত্তাকর্মী
পাকিস্তানের জেলবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকে সোমবার ইসলামাবাদের পথে নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সেই বিক্ষোভ মিছিল ক্রমে সংঘর্ষের আকার নিয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বহু মানুষ আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী। পরিস্থিতি এমনই যে, বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে পাক-সেনা। পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
এদিকে, পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ সফল করতে মরিয়া ইমরান খানের দল। যেকোনো মূল্যে তারা ইসলামাবাদের
ডি-চকে পৌঁছাতে চায়। অন্যদিকে তাদের থামিয়ে দিতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
অন্যদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদের আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি ইসলামাবাদের ডি-চক এলাকায় বিক্ষোভ করার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তাই ডি-চকের পরিবর্তে সাংজানি এলাকায় বিক্ষোভ করার চেষ্টা বুশরা বিবির এই অনড় অবস্থানের কারণে কার্যত ভেস্তে গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিক্ষোভস্থল বদলাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছেন দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা আলী আমিন গান্দাপুর ও ওমর আইয়ুব।
ইসলামাবাদ অভিমুখী জনস্রোতে অংশ নিয়েছেন বুশরা নিজেও। সূত্র জানিয়েছে, বুশরার গাড়িতে গিয়ে দেখা করে বিক্ষোভস্থল বদলে ফেলতে তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন আলী আমিন গান্দাপুর ও ওমর আইয়ুব। কিন্তু বুশরা রাজি হননি।
অনড় বুশরা জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারের বাধা সত্ত্বেও পূর্বঘোষণা অনুযায়ী তিনি ইসলামাবাদের সুরক্ষিত ডি-চক এলাকাতেই বিক্ষোভ করতে চান।
সূত্রের খবর, ইসলামাবাদে বিক্ষোভস্থল বদলে ফেলতে আলী আমিন গান্দাপুর, ওমর আইয়ুবসহ পিটিআইয়ের নেতারা রাজি ছিলেন। এমনকি বুশরার স্বামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা কারাবন্দি ইমরান খান এতে সম্মতি দিয়েছিলেন বলে সূত্র মারফত জানা গেছে।
কিন্তু বুশরার আপসহীনতার কারণে আপাতত এই প্রচেষ্টা আটকে গেছে। বুশরা পিটিআই সমর্থকদের ডি-চক এলাকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এর আগে বুশরা বিবি বলেছিলেন, 'খানকে (ইমরান খান) ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আমরা এখানে এসেছি। ইমরান খানকে নিয়েই ফিরব।'
এদিকে, পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক বাধার মুখেও কিছু পিটিআই কর্মী এরই মধ্যে ডি-চকে পৌঁছে গেছে। সরকার ও বিরোধী দলটির মধ্যে আলোচনায়ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
মূলত রোববার (২৪ নভেম্বর) দলটির নেতাকর্মীরা রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করে। তবে সরকারি বাধায় তা থমকে যায়। পরে (২৫ নভেম্বর) ইসলামাবাদের দিকে ফের যাত্রা শুরু করে তারা।
এর আগে আদিয়ালা কারাগার থেকে এক বিবৃতিতে ইমরান খান বলেছেন, ইসলামাবাদে যে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে তা স্থগিত করা হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত তার মুক্তির ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে না।
ইমরান বলেন, আমার দলের নেতাদের মাধ্যমে সমাবেশ বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে নেতাদের মুক্তির বিষয়ে কোনো কথা বলা হচ্ছে না।
এর আগে, সব বাধা উপেক্ষা করে সোমবার ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে পিটিআই নেতাকর্মীদের গাড়িবহর। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজার জনকে।
পিটিআই নেতাকর্মীদের ঠেকাতে ইসলামাবাদের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত। কার্গো কনটেইনার দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ডি-চকের প্রবেশপথ।
নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে মঙ্গলবার উত্তাল ইসলামাবাদে সংবিধানের ২৪৫ ধারা সক্রিয় করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এত কিছুর পরও উত্তাল পাকিস্তানে আজ চার নিরাপত্তা সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি বলেন, ইসলামাবাদের 'রেড জোনে' প্রবেশ করলে ইমরানের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হবে।