হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসন নিয়ে সাফাই নয়
বরিশালে সারজিস আলম
প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
'খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের প্রশ্নে, তাদের পক্ষে কারও সাফাই গাওয়ার প্রশ্নই আসে না' বলে মন্তব্য করে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, 'আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও আমরা এটা করতে দেব না।'
শনিবার বেলা ১১টায় বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, 'খুনি হাসিনা সারা জীবন শুধু নিজের পরিবারের গান গাইতে গাইতে ক্ষমতাটাকে
আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছিলেন। যেখানে গেছেন, সেখানেই পরিবার নিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। তার পরিবারের ১৮ জন মানুষ, আর এই দুই হাজার জন মানুষ না! এদের খুন করার সময় তার বুকটা একটু কাঁপেনি। আজ আমার যে ভাই শহীদ হয়েছে, যে বোন শহীদ হয়েছে, সেই শহীদ পরিবারের বাবা-মা, ভাইবোনকে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা দেব?'
হাসিনা ১৯৭৫ সালের গল্প বলে ক্ষমতাকে সবসময় সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'তিনি যদি দরদ বোঝেন, তাহলে এ খুনগুলো কীভাবে করতে পারেন? যে রাজনৈতিক পস্ন্যাটফর্মকে সামনে রেখে তারা এ কাজগুলো করেছে তাদের কোনো অধিকারই নেই এই বাংলাদেশে চলার।'
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সবার কথা এখানে বলতে পারছি না। কিন্তু সবার আলাদা কষ্ট-ব্যথা আছে, এগুলো বলার মতো না। আবার সবাই বলতেও পারে না, সবাই প্রকাশ করতে পারে না। আমার অনেক বোন আছে, যাদের বিয়ে হওয়ার কয়েক দিন পর স্বামী হারিয়েছেন, তাদের সারা জীবন কীভাবে কাটবে? যে নবজাতক পৃথিবীতে আসার আগে জানতই না সে তার বাবার মুখ কোনো দিন দেখবে না, সে জানতই না কোনো দিন তার বাবা তাকে কোলে নিতে পারবে না, সে কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না, ওর কী দোষ ছিল?'
ভুলে যাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে সারজিস আলম বলেন, 'আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব ভুলে যাই, ওই ১৬ বছর ভুলে গেছি, আমরা ৩৬ দিন ভুলে গেছি, এখন আমরা নতুন কিছু নিয়ে পড়ে আছি। কিন্তু এই জবাব খুনি হাসিনাকে দিতে হবে, খুনি হাসিনার দোসরদের জবাব দিতে হবে। এই বিষয়গুলোর সমাধান ও একটি যৌক্তিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ দেশে তাদের পুনর্বাসনের কথা যারা বলে, খুনি হাসিনার মতো তারা আরেক ধরনের ক্ষমতাপিপাসু, লোভী।'
এ সময় তিনি বলেন, 'এ দেশে তাদের বিচার হওয়ার প্রশ্নে কথা হওয়া উচিত, তাদের পুনর্বাসনের প্রশ্নে, তাদের পক্ষে কারও সাফাই গাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা এটা আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও করতে দেব না।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরও বলেন, 'যার চলে গেছে সে-ই বোঝে, আমরা অনেকে কিছু করতে পারি, অর্থ সহযোগিতা করতে পারি, চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি, সম্মানী ভাতা দিতে পারলেও ওই মানুষটাকে কোনো দিনও ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না, এই ক্ষত কোনো দিনও পূরণ করা সম্ভব নয়। খুনি হাসিনা ও তাদের দোসরদের এর জবাব দিতে হবে, ইশরাত-আব্দুলস্নাহ-সামিউলরা কাকে বাবা বলে ডাকবে, কাদের কোলে বাবা বলে উঠবে, কারা দায়িত্ব নিয়ে তাদের বাবার মতো করে সারা জীবন আগলে ধরে রাখবে? শিশু সন্তানরা তার শহীদ বাবার রক্তাক্ত ভিডিওগুলো দেখছে। এই বয়সে তাদের কি এগুলো করার কথা ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে।'
এর আগে বরিশাল বিভাগের ৭৯টি শহীদ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।
আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তৃতায় সারজিস বলেন, 'জুলাই ফাউন্ডেশনের ?উদ্যোগে ?এ সহযোগিতা ?আজীবন চলতে থাকবে। বিশেষ করে, সরকারের কাছ থেকে প্রতিটি শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ?এবং পরিবারের একজন সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি রয়েছে। শহীদ পরিবারের মাঝ থেকে দাবি ?উঠেছে তাদের একটি সনদ দেওয়ার। যাতে যেকোনো সরকারের ?আমলে তারা যেন ?ওই সনদের ?আলোকে কিছুটা হলেও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন।' ?
এ দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরবেন বলে জানান তিনি।
এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাহিন সরকারসহ অন্যরা।
উপস্থিত ছিলেন- তিনজনের চিকিৎসক গ্রম্নপ। তারা নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা দেন। অনুষ্ঠানে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় নিহতদের স্বজন এবং আহতরা উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগের ছয় জেলায় ১৩৪ জন নিহতের সন্ধান পাওয়া গেলেও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ৭৯ জন যোগাযোগ করে তাদের তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শন করেন। বাকিদেরও একইভাবে স্ব-স্ব এলাকার সিভিল সার্জনের মাধ্যমে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।