পাঁচ ঘণ্টা পর রেল চলাচল স্বাভাবিক

জুরাইনে রিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ টিয়ারশেল

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর জুরাইনে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শুক্রবার দুপুরের দিকে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রেললাইন অবরোধের জেরে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও জানা গেছে। ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো চালকরা রাস্তায় নামেন। বেলা ১১টার দিকে জুরাইন এলাকার সড়ক ও রেললাইন অবরোধ করেন তারা। এতে ওই লাইনে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের রেললাইন ছেড়ে দিতে বলার হ ছবি পৃষ্ঠা : ১৬ এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান চালকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে চালকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিক্ষোভকারীরা সরে গেলে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে ওই লাইনের ট্রেন ছেড়ে যায় বলে কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'রিকশাচালকরা রেললাইনে অবস্থান নিলে আমাদের পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও নারায়ণগঞ্জমুখী সব ট্রেন বন্ধ রাখতে হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস পাওয়ায় বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর থেকে প্রথম ট্রেন ছেড়ে যায়।' স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে রেলপথ অবরোধ করে রাখেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকরা। পরে সেখান থেকে সড়কে চলে আসেন তারা। এতে ট্রেনের পাশাপাশি সড়কে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে অবরোধে আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন মালিকরা। এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অবরোধের কারণে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার নামের একটি ট্রেন সেখানে আটকা পড়ে। আর নকশীকাঁথা কমিউটার নামে একটি ট্রেন ঢাকা ছাড়তে পারছে না। চালকদের অবরোধে আপাতত ঢাক-নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা সেতু রেল চলাচল বন্ধ থাকে। দুপুর ১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সরিয়ে দিতে এলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সড়ক থেকে পিছু হটে অবরোধকারীরা। স্বাভাবিক হয় সড়কে যান চলাচল। শ্যামপুর থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'রিকশাচালকদের অবরোধ চলাকালে দুপুর ১টার দিকে পুলিশ তাদের সড়ক ছেড়ে দিতে বললে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রিকশাচালকরা বিক্ষিপ্তভাবে ওই এলাকায় অবস্থান করলেও একপর্যায়ে সরে যায়। এরপর সড়কে যান ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।' পুলিশ জানায়, রেললাইনের আশপাশে তলস্নাশি চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলনে ছদ্মবেশে তৃতীয়পক্ষ প্রবেশ করেছে কিনা তা জানতে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে হাইকোর্ট। আদালত বলেন, 'ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এটা পুরোপুরি অবৈধ।' রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বুধবার এক বিবৃতিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এর পরদিনই বুধবার ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ মিরপুর, মালীবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, নাখালপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বিক্ষোভ দেখান। এর আগে গত মে মাসে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা ও গ্যারেজ মালিকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংক্ষুব্ধ চালকদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে 'জীবিকার' বিষয়টি বিবেচনায় এনে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করবে পারবে বলে ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা কত :ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের প্রকৃত হিসাব সরকারের কোনো দপ্তরে নেই। তবে বিআরটিএ, যাত্রী অধিকার সংগঠন, পুলিশ ও অন্যান্য অংশীজনের হিসাবে ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত তিন চাকার অবৈধ যানবাহন এখন ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আছে প্রায় ৫০ লাখ। আর ঢাকায় আছে ১০ লাখের মতো। কেউ কেউ মনে করেন, ঢাকায় ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত রিকশার সংখ্যা ১৫ লাখের কম হবে না। তিন চাকার যানবাহনগুলোর কাঠামোগত ও যান্ত্রিক ত্রম্নটি রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান। তিনি বলেন, 'নানা ত্রম্নটিযুক্ত এসব যানের চলাচল নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এসব যানবাহনের সঙ্গে যেসব মানুষ যুক্ত এবং যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে হুট করে বন্ধ করা যাবে না।' তিনি মনে করেন, কারিগরিভাবে এগুলোর উন্নয়ন করা যেতে পারে। কোন কোন সড়কে, কী পরিমাণ চলতে দেওয়া হবে, এর একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকা দরকার।