নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
এএমএম নাসির উদ্দীন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একইসঙ্গে আরও চার কমিশনারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমিশনার হিসেবে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ। সিইসি হিসেবে বিএনপি যে দু'জনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে এএমএম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান এএমএম নাসির উদ্দীন। তিনি বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সিইসি পদে বিএনপির দেওয়া তালিকায় আরেকটি নাম ছিল-শফিকুল ইসলাম। বিএনপি চলতি মাসের শুরুতে অনুসন্ধান কমিটির কাছে এ তালিকা দিয়েছিল। বিএনপির মিত্র দলগুলোর বেশির ভাগের তালিকাতেও এ দুই নাম ছিল। সার্চ কমিটির প্রস্তাব করা নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এই পাঁচজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বেছে নেন। নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাসির উদ্দীন বলেন, "অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করব ইনশাআলস্নাহ। এ দায়িত্ব যখন আসছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে- সবার সহযোগিতা নিয়ে।" ৭১ বছর বয়সি নাসির উদ্দীন আরও বলেন, "সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে অফিসিয়াল রিয়েকশন দেওয়া যাবে। এ দায়িত্ব যখন এসেছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে। তিনি বলেন, 'পার্টিকুলারলি, বিশাল একটা অভু্যত্থানের পরে এত প্রাণহানি, রক্ত দেওয়ার পরে এত লোক পঙ্গু হলো, আহত হলো; এরপর তারা ভোটের অধিকোরের জন্য এতদিন ধরে, ১৮ বছর ধরে যুদ্ধ করছে। তাদের রক্তের সঙ্গে তো আমরা বেঈমানি করতে পারব না।' অবাধ নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন নাসির উদ্দীন, যিনি অন্তর্র্বর্তী সরকারের গঠন করা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি বলেন, 'একটা ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশনের জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তা করব ইনশাআলস্নাহ।' দেড় মাস ধরে শূন্য থাকা নির্বাচন কমিশনের অধিকারীরা কবে শপথ নেবেন, সেই তারিখ এখনো জানানো হয়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। সেই কমিশনে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। তাদের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সেই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তার আট মাসের মাথায় গণ-অভু্যত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সিইসির শূন্য পদ পূরণ করতে যাওয়া নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করে তিনি পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। পরে বিসিএস ৭৯ ব্যাচে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। নাসির উদ্দীন ২০০৪ সালে তথ্য সচিব, এরপর জ্বালানি সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। যারা ছিলেন সিইসি দেশে এর আগে ১৩ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ৩১ জন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অধিকাংশই নাসির উদ্দীনের মতো অবসরপ্রাপ্ত আমলা। এবার নিয়ে টানা পঞ্চমবার সিইসি পদে নিয়োগ পেলেন সাবেক সচিব, যার শুরু হয়েছিল এটিএম শামসুল ?হুদার মাধ্যমে। শামসুল হুদার আগের কমিশনে একজন বিচারক থাকলেও তার আগে আবার ছিলেন আমলা। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতিরা। এরপর ইসিতে শুরু হয় সাবেক আমলাদের নেতৃত্ব। মাঝখানে ২০০৫ সালে এক বছর সাত মাস একজন বিচারপতি ছাড়া গত প্রায় তিন দশক সাবেক আমলারাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কাজী হাবিবুল আউয়াল: ২৭ ফেব্রম্নয়ারি ২০২২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ কে এম নূরুল হুদা: ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রম্নয়ারি ২০২২ কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ: ৯ ফেব্রম্নয়ারি ২০১২ থেকে ৯ ফেব্রম্নয়ারি ২০১৭ এ টি এম শামসুল হুদা: ৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৭ থেকে ৫ ফেব্রম্নয়ারি বিচারপতি এম এ আজিজ: ২৩ মে ২০০৫ থেকে ২১ জানুয়ারি ২০০৭ এম এ সাইদ: ২৩ মে ২০০০ থেকে ২২ মে ২০০৫ মোহাম্মদ আবু হেনা: ৯ এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে ৮ মে ২০০০ বিচারপতি এ কে এম সাদেক: ২৭ এপ্রিল ১৯৯৫ থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৯৬ বিচারপতি আব্দুর রউফ: ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৫ বিচারপতি সুলতান হোসেন খান: ১৭ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৯০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯০ বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মাসউদ: ১৭ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৮৫ থেকে ১৭ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৯০ বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম: ৮ জুলাই ১৯৭৭ থেকে ১৭ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৮৫ বিচারপতি মো. ইদ্রিস: ৭ জুলাই ১৯৭২ থেকে ৭ জুলাই ১৯৭৭ সিইসির দায়িত্বে বিচারপতিদের মধ্যে মো. ইদ্রিস ও এটিএম মাসউদ এবং সাবেক আমলাদের মধে?্য এম এ সাঈদ, শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও নূরুল হুদা পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন।