বিপস্নবোত্তর নতুন বাংলাদেশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'এই নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সব মানুষকে একটি বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা।'
বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপস্নবের মধ্য দিয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এই নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সব মানুষকে একটি বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। পরিবারে মতভেদ থাকবে, বাগবিতন্ডা হবে। কিন্তু আমরা কেউ কারও শত্রম্ন হবো না।'
তিনি বলেন, 'কাউকে তার মতের জন্য শত্রম্ন মনে করব না। কাউকে ধর্মের কারণে শত্রম্ন মনে করব না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারো ওপরে না এবং কেউ কারো নিচে না- এই ধারণা আমরা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'বৈষম্যহীন,
\হশোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, আমি তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা এখন থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এই দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সব ক্ষমতার উৎস হয়। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়।'
সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ বন্ধুত্ব বজায় রাখবে জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক সম্মান, আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা।'
তিনি বলেন, 'জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক শান্তি ও অর্থনীতি সুসংহতকরণে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। তাই, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।'
তরুণদের সৃজনশীলতার বিকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের তরুণ সমাজ সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও যেন মেধার ভিত্তিতে নিজ নিজ সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখতে পারে আমাদের সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।'
এর আগে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিন বাহিনী প্রধান।
আমরা গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা
সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'বেগম খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত।'
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'আজকে আমরা বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান এবং সম্মানিত যে, বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পান নাই।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আজকে সুযোগ পেয়েছেন, আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত। আমরা এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আমরা তার আশু রোগ মুক্তি কামনা করছি এবং এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।'
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও
প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
এর আগে সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। প্রতি বছর দিনটি সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
দিবসটি উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন এবং সরকার প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে পৌঁছালে তিন বাহিনীর প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান।
রাষ্ট্রপতি শিখা অনির্বাণের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে রাষ্ট্রপতি শিখা অনির্বাণ চত্বরে রাখা পরিদর্শন বইয়ে সই করেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সকাল সোয়া ৮টার দিকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় গার্ড অব অনার দেয়। প্রধান উপদেষ্টাও পরে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
পরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ শেষে দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি শেষে তিন বাহিনী প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। বরাবরের মতোই সেনাকুঞ্জের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।