রিমান্ড শুনানির সময় কামরুলকে 'সালাম', নাজিরের কার্যালয় ভাঙচুর

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রিমান্ড শুনানির সময় সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময়ের জেরে ঢাকা মহানগর আদালতের নাজির শাহ মো. মামুনের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বেলা ১টার পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয়তলায় ওই কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি প্রসিকিউশন ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুলের সঙ্গে নাজির মামুনের কুশল বিনিময়ের ঘটনা নিয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনকে অবহিত করেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। পরে বিচারক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এদিকে নাজির মামুনের বিষয়ে ব্যবস্থা চেয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মারজিয়া হীরা নামে একজন আইনজীবী। সেখানে বলা হয়, সকালে কামরুল ইসলামের রিমান্ড শুনানির সময় তার ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিত ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতের লাল সালুর ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন মহানগর আদালতের নাজির মামুন আসামি কামরুল ইসলামকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেন। আসামির ছেলেকে আদালতের ভেতরে প্রবেশের বিষয়ে সহযোগিতা করেন। নাজির ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আসামি কামরুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগিতা করেছিলেন। ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজির শাহ মো. মামুন বলেন, 'আমি অফিসে নেই, কাজে বাইরে আসছি। শুনেছি আমার অফিসে ভাঙচুর করা হয়েছে। কে বা কারা কী কারণে মামলা করেছে কিছু জানি না।' কামরুলের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সহযোগিতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'মহানগর আদালতে কামরুল ইসলাম যখন আসতেন, তখন আমার অফিসে বসতেন। এভাবে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। 'আজকে সকালে একটি কাজে সিএমএম আদালতে যাই। তখন হঠাৎ সাবেক মন্ত্রী কামরুলের সঙ্গে দেখা হয়। তখন তিনি আমাকে ডেকে বলেন, 'এই নাজির কেমন আছ?' তখন আমি বলেছি, জি স্যার, আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন? পরে আমি কাজ শেষে চলে এসেছি। আর তার ছেলেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তার সঙ্গে আমার পরিচয় নেই।' প্রত্যক্ষদর্শী নেজারত শাখার অফিস সহায়ক মিজানুর রহমান জানান, দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে কিছু আইনজীবী গিয়ে নাজিরের অফিসে ভাঙচুর করে। নাজির তখন অফিসে ছিলেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, 'আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে নাজিরের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমার ফোর্স সেখানে গেছে। তারা রিপোর্ট দিলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, 'আমি একটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য নেপালে রয়েছি। এ বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত কিছু জানি না।' সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলামকে সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। কামরুল ৮ দিনের রিমান্ডে এদিকে, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলামকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। কামরুলকে এদিন আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে নিউ মার্কেট থানার এসআই জাহাঙ্গীর আরিফ। শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত ১৯ জুলাই নীলক্ষেতে ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালায়। সে সময় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। 'ঘটনার সঙ্গে কামরুল ইসলাম সরাসরি জড়িত। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা ধানমন্ডিসহ আশপাশের এলাকায় সে সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তার সরাসরি ইন্ধনে গুলি চালানো হয়। আমি তার ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করছি।' আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহিন এ সময় অভিযোগ অস্বীকার করে কামরুলকে নির্দোষ দাবি করেন এবং তার জামিন চান। এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দিদার হোসেন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এবং জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি আদালত কামরুলকে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।