বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে শহীদদের নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হবে।
সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি দলের এই ভাবনার কথা জানান। আমরা বিএনপি পরিবার নামে সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়।
তারেক রহমান বলেন, 'ভবিষ্যতে ইনশাআলস্নাহ বিএনপি সরকার গঠনে সক্ষম হলে যারা শহীদ হয়েছেন, সারাদেশে স্বৈরাচারকে বিদায় করার জন্য যারা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এরকম প্রতিটি মানুষের নামে রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন এলাকায় সেটি থানা পর্যায় হোক, জেলা পর্যায় হোক, বিভাগ পর্যায় হোক, ঢাকা শহরে হোক বিভিন্ন স্থানে এই শহীদদের নামে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো নামকরণ করার একটি প্রস্তাবনা আমাদের আছে।'
তিনি বলেন, 'যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কতটুকু আমরা পারব জানি না; তবে আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা থাকবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার, যাতে তারা কিছুটা হলেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।'
তারেক রহমান বলেন, 'এখানে আমরা আজকে ১০ জন মানুষকে হুইলচেয়ার দিচ্ছি। আন্দোলনের বাইরেও সামাজিকভাবে বহু মানুষ আছেন, যারা বিভিন্নভাবে জন্ম অবস্থায় হোক অথবা বিভিন্ন কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেউ যদি পঙ্গু হয়ে থাকেন সেই পরিবারের ওপরে এটি বেশ বোঝা হয়ে যায়। আমার ব্যক্তিগতভাবে ইচ্ছা এসব মানুষকে সুস্থ করার ব্যবস্থা করা। বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে সরকারের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে আমাদের একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকবে সমগ্র দেশে সে যে পরিবারের সদস্য হোক, সচ্ছল ও অসচ্ছল হোক সব পরিবারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে সেই পঙ্গু মানুষগুলো নিজেরা যতটুকু সম্ভব স্বাবলম্বী হতে পারে।'
এজন্য দেশের অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বানও জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, 'আমরা সবাই যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে যেরকম বাংলাদেশ কল্পনা করি সেই বাংলাদেশের সূচনা করতে সক্ষম হবো বলে আমি বিশ্বাস করি।'
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কোথাও কোনো ঘাপলা আছে। এ সরকারের কারো মধ্যে কোনো মাস্টার পস্ন্যান আছে কিনা এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।'
বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই বক্তব্যে আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চার বছর লাগতে পারে সংস্কার করতে। কিন্তু কেন?'
রিজভী বলেন, 'অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের লড়াই। বাক স্বাধীনতার জন্য লড়াই। আমাদের আশা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে গণতন্ত্রের প্রতীক, গণতন্ত্রের মডেল। তা না করে এই যে প্রলম্বিত করা, এই প্রলম্বিত করা আমার মনে হচ্ছে কোথাও কোনো জটিলতা হচ্ছে। গণতন্ত্র চর্চা ও গণতন্ত্রের বিকাশ কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে। তা না হলে তিনি কেন এ কথা বলছেন? এত লম্বা সময়ের কথা বলছেন। এ সরকারের মধ্যেই কোথাও কোনো ঘাপলা আছে। এ সরকারের মধ্যেই কারো মাস্টার পস্ন্যানে আছে কিনা এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।'
রিজভী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা বলেছিল মালয়েশিয়ায় তারেক রহমানের নামে ইন্ডাস্ট্রি আছে, কারখানা আছে। এগুলো প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে মানুষদের বিভ্রান্তি করত আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, 'কাজের মধ্যে যদি ন্যায্যতা থাকে, তাহলে সেই কাজ সফল হয়। আর কাজের মধ্যে যদি অন্যায় অবিচার থাকে তাহলে সেই কাজ কখনো সফল হয় না। আমরা বিএনপির পরিবার ন্যায্যতার সঙ্গে মানবসেবায় তৃণমূল পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি।'
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিলস্নাত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন বকুল, মাহমুদুর রহমান সুমন, বিএনপি নেতা ড. এম এ মুহিত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে রুহুল কবির রিজভী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানে পক্ষে থেকে হুইলচেয়ার পঙ্গুদের মধ্যে বিতরণ করেন।