শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়

ট্রাইবু্যনালের কাঠগড়ায় সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৩ জন

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জুলাই-আগস্টে নিপীড়নের পটভূমি পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষ করার জন্য দুই মাস সময় প্রয়োজন

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে হাজির করা হয় বাঁ থেকে শাজাহান খান, সালমান এফ রহমান, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, কামাল মজুমদার ও মোহাম্মদ ফারুক খান বাঁ দিক থেকে আনিসুল হক, সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ডা. দীপু মনি, জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম -ফোকাস বাংলা
শেখ হাসিনা সরকারের গড়া যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছিল, সোমবার জুলাই-আগস্ট 'গণহত্যার' অভিযোগে সে ট্রাইবু্যনালের কাঠগড়ায়ই দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৩ জন। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের 'গণহত্যার' মামলায় ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল। পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৩ জনকে 'গণহত্যার' মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন এ আদালত। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবু্যনাল সোমবার এ আদেশ দেন। ট্রাইবু্যনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইবু্যনাল। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সোমবার আদালতকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জুলাই-আগস্টে নিপীড়নের পটভূমি পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষ করার জন্য দুই মাস সময় প্রয়োজন। পরে ট্রাইবু্যনাল এক মাস সময় দিয়ে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। বাকি যে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ১৪ জনকে ট্রাইবু্যনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে সকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে আনা হয়। আর সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ট্রাইবু্যনালে হাজির করা হয়। অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় আরেক সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে এদিন আদালতে হাজির করা হয়নি। প্রসিকিউশনের আবেদনে ওই ১৩ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইবু্যনাল। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন-পীড়নকে 'গণহত্যা' বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে 'গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের' অর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইবু্যনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইবু্যনাল। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইবু্যনাল পরোয়ানা জারি করেছেন, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার দুই ভাতিজা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রয়েছেন। পরোয়ানা জারি হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধেও। শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জাফর ইকবালের নামেও জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এ ছাড়া সাবেক আইজিপি আবদুলস্নাহ আল মামুন,র্ যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপস্নব কুমার সরকার, অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, 'প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।'