বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

বাড়ি যেতে পারছে না নুহা-নাবা

কেবিন ভাড়া ২২ লাখ টাকা দাবি
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাড়ি যেতে পারছে না নুহা-নাবা
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা হওয়া জোড়া শিশু নুহা ও নাবা -ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা হওয়া জোড়া শিশু নুহা-নাবা'র বাড়ি যাওয়া হলো না এখনও। তাদের বাড়ি যাওয়ার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালের বকেয়া কেবিন ভাড়া। হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ও শিশু সার্জারি বিভাগ থেকে ৭ দিন আগে ছুটি দিলেও কেবিন ভাড়ার আইনি জটিলতায় পড়েছে নুহা-নাবার পিতামাতা।

তাদের দাবি, 'বিএসএমএমইউয়ের প্রশাসন থেকে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। কোন জায়গায় গেলে, সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে সেই জায়গাটা এখনো পাইনি। ১২-১৫ দিন ধরে হাসপাতালের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছি কিন্তু কোনো সঠিক পথ দেখছি না।'

নুহা-নাবার পিতামাতা বলেছেন, নুহা-নাবার চিকিৎসা খরচ মেটানোর কথা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। উনার পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন এসে একটি অপারেশন বাকি রেখে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় আগের প্রশাসন যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে। সেখানে নতুন প্রশাসন কেবিনের ভাড়া ভাড়া বাবদ প্রায় সোয়া ২২ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এত টাকা কোনো মতেই পরিশোধ করা সম্ভব না।

নুহা-নাবার বাবা আলমগীর হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, '৩১ মাসে এই শিশু দুটির চিকিৎসা করতে গিয়ে কাজকর্ম হারিয়ে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছি। বাড়ির জমিজমা বিক্রি করে, বন্ধক দিয়ে খরচ করার পরও পাঁচ লাখ টাকা দেনা হয়েছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জনের কাছ টাকা তুলে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। এখন হাসপাতাল থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলছে, কেবিন ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করলে মামলা করবেন। এই মানসিক চাপে পাগল হয়ে যাচ্ছি। এমন হলে পরিবারসহ আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।'

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, নহা-নাবার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়মিত

পরিশোধ করা হচ্ছে। তাদের জটিল অপারেশন হওয়ায় খাবারে প্রয়োজনীয় নিউট্রেশন মেটানোর জন্য অতিরিক্ত খাবারও সরবরাহ করা হয়েছে। কেবিন ভাড়ার বিষয়টা ধাপে ধাপে করা হলে সমস্যা আগেই মিটে যেত। এখন কেউ এ বিষয়টা দায়িত্ব নিয়ে করছে না। কারণ সবাই এখন গা বাঁচিয়ে কাজ করছে। কেউ নতুন করে কোনো ঝামেলায় পড়তে চাইছে না।'

বিএসএমএমইউয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে কেউ একজন দায়িত্ব নিয়ে যদি 'একাডেমিক স্টাডি' হিসেবে উলেস্নখ করে বিশেষ বিবেচনায় উপস্থাপন করেন তাহলে এটা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেন না।

হাসপাতালের পরিচালক ব্র্রিগে. জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, আমার দপ্তরে কোনো ফাইল আসলে সেটা আটকে থাকে না। যত দ্রম্নত পারি ছেড়ে দেই। নুহা-নাবার কেবিন ভাড়ার বিষয়ে ফাইল এখন আমার কাছে আসেনি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়েছি। আগে যারা নুহা-নাবার কাজগুলো করত তারা এখন কাজ করতে পাচ্ছে না। নতুন যারা কাজ করছে তারা এর কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পাচ্ছে না।'

নুহা-নাবার মা নাসরিন আক্তার অভিযোগ করে যায়যায়দিনকে বলেন, সবশেষে শিশু বিভাগ থেকে নুহার অপারেশন হয়েছে। প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তায় অপারেশনের পরে চিকিৎসক নার্সদের সঠিক কোনো গাইড লাইন পায়নি। আমাদের আগের অভিজ্ঞতা থেকে ড্রেসিং করেছি। এখন তো ছুটি হয়ে গেছে। আমাদের কেবিনে কোনো চিকিৎসক আসে না। অপারেশনের জায়গা এখনো শুকায়নি, ঘা আছে।'

নুহা-নাবার বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, 'শিশু দুটির প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা এখন পেট ফুটো করে করা আছে। প্রস্রাব ও মলমূত্র একটি ব্যাগে জমা হয়। আরেকটি অপারেশনের মাধ্যমে এই প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই অপারেশনটা কি আমরা এখান থেকে পাব কিনা সেটার সম্ভাবনাও কমে গেছে। যেখানে আগের সমস্যার সমাধান করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। তাহলে তিন মাস পরে আরেকটি অপারেশন হবে সেটা কীভাবে আশা করি।'

জানা যায়, ৩১ মাস আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নুহা নাবার গত ১০ নভেম্বর হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ও শিশু সার্জারি বিভাগীয় প্রধানের সম্মতিক্রমে ছুটি হয়। এই দুই শিশুর আরও একটা করে অপারেশন বাকি আছে। তিন থেকে পাঁচ মাস পরে সেই অপারেশন করার কথা শিশু সার্জারি বিভাগের।

এ বিষয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেছিলেন, শিশু দুটির চিকিৎসা মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। ১০ নভেম্বর তাদের ছুটি হলেও তারা এখনো হাসপাতাল ছাড়তে পারেনি।

বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) গৌর কুমার মিত্র যায়যায়দিনকে বলেন, নুহা-নাবা'র যত ফাইল আমাদের কাছে এসেছে। আমরা যত দ্রম্নত সম্ভব তাদের টাকা দিয়েছি। কেবিনের ভাড়া মওকুফের একটি আবেদন আমাদের এখানে শিশু দুটির পিতা নিয়ে এসেছিল কিন্তু সেটা আমরা রাখতে পারিনি। কারণ টাকা মওকুফের কাজ আমাদের না।'

বিএসএমএমইউ ও নুহা-নাবার পরিবার সূত্রে জানা যায়, জোড়া লাগানো শিশু নুহা-নাবাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করাসহ সামগ্রিক চিকিৎসায় হাসপাতালের ব্যয় হয়েছে ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা। আর শিশু দুটির পরিবারের ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা। সব মিলে গত আড়াই বছরে শিশু দুটির চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে অর্ধকোটি টাকার বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে