শিক্ষা এবং ডিগ্রির মান উন্নয়নে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানে স্নাতক সম্মানে লিখিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুলস্নাহ্‌। এবার যারা এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে, তাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

শনিবার সকালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ৬টি কলেজের ছাত্র-শিক্ষক এবং স্থানীয় সুধীজনের অংশগ্রহণে গুণগত শিক্ষা এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে আয়োজিত সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন।

সমাবেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মান উন্নয়নে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংক উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস সংস্কারের রূপরেখা উলেস্নখ করেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সম্মান শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি এবং অন্যান্য সংক্ষিপ্ত টেকনিক্যাল কোর্সের প্রস্তাব করেন তিনি। ছাত্রছাত্রীদের আগামীতে স্নাতক সম্মান কোর্সের সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো একটি টেকনিক্যাল কোর্সে বাধ্যতামূলকভাবে পড়াশোনা করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কলেজ পর্যায়ে টেকনিক্যাল কোর্স পাঠদানে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

এ ছাড়াও তিনি ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে উপস্থিতির হার বাড়ানো, এসাইনমেন্ট এবং ইনকোর্সগুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং কলেজের লাইব্রেরিগুলোতে পর্যাপ্ত রেফারেন্স বইয়ের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণসহ দেশের সর্বস্তরের কলেজসমূহের ভৌত অবকাঠামো উন্নতিকল্পে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি ২০২৫ সালকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন এবং এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ করেন, এই মুহূর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে দ্রম্নতগতিতে থেমে থাকা পরীক্ষাগুলো আয়োজন করছে, এতে আগামী বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট প্রায় ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এ ব্যাপারে তিনি শিক্ষক-কর্মকর্তা, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা তাহমিনা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপাচার্য বলেন, 'জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিহত প্রতিটি শহীদ পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে অনুদান হিসেবে প্রদান করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যা ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।'

এই অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাছানাত আলী এবং বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মূসা, পিপিএম। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুলস্নাহ্‌। এরপর শান্তির পায়রা অবমুক্ত করে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক জোরদার ও সব কলেজ এবং অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ও কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

উপাচার্য বলেন, 'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ বীর আবু সাঈদ এবং বীর মুগ্ধর নামে ভবন এবং নতুন স্থাপনার নামকরণ করা হবে। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা মহিলা ডিগ্রি কলেজ চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বগুড়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মাণেরও ঘোষণা দেন তিনি।