অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতা জনগণ সহজভাবে নেবে না :তারেক

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শনিবার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন -স্টার মেইল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণ যা চায় তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এড্রেস করলে 'ওত পেতে থাকা স্বৈরাচার' এর কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। মাফিয়া সরকারের ১৫ বছরে তৈরি করা জঞ্জাল তিন মাসে দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার পরিচালনায় যদি অদক্ষতা পরিলক্ষিত হয় তাও জনগণ সহজভাবে মেনে নেবে না। শনিবার বিকালে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রমনায় জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। সকালে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। এই কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের ভোটে ফখরুল আলমকে সভাপতি ও রুহুল আমিন আকন্দকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তারেক রহমান বলেন, 'সরকারকে একেবারে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরা বসে নেই। সেটা দেশের ভেতরেই হোক বা দেশের বাইরে হোক, প্রশাসনের ভেতরে হোক বা দেশের বাইরে হোক। এরা ওৎ পেতে আছে কীভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়া যায়। আমরা মনে করি, সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থা নিবিড় থাকলে তাদের (পলাতক স্বৈরাচার) ষড়যন্ত্রের ডাল-পালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। জনগণ যা চাইছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সেগুলোকে এড্রেস করে তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো সুযোগ পাবে না, তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।' বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সমস্যা কোনোটাই টেকসই হবে না। একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে ভোট প্রয়োগের অধিকার। জনগণ ভোট প্রয়োগের যদি সুযোগ যদি না পায় তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের যে সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব সেই সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হয় না।' তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ আশা করে তারা স্বচ্ছ পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট দিতে সক্ষম হবে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বাসযোগ্য এবং সুনির্দিষ্ট আস্থা পেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।' সরকারের অগ্রাধিকার তালিকা প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, 'ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে আহতরা হাসপাতাল থেকে রাজপথে বেরিয়ে এসেছে এটি সমগ্র দেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের জন্য লজ্জাকর দৃশ্য। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে জুলাই-আগস্টের গণঅভু্যত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কোনো সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার লিস্টে নেই? এছাড়া জিনিসপত্র জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার পদক্ষেপটি সরকারের প্রায়োরিটি লিস্টের মধ্যে কত নম্বরে আছে?' তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল কাজ হয়তো সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা কিন্তু আমাদের সকলের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের ব্যর্থতা। এদেরকে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যদি ব্যর্থ করে দেওয়া যায় তাহলে গণতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেওয়া যাবে, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ যারা গণতন্ত্রকে ভালোবাসে, যারা গণতন্ত্র প্রাকটিস করতে চায় তাদেরকে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে, এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।' তিনি বলেন, 'এরকম একটা পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্তে মনে হয় তারা জনআকাঙ্ক্ষার বোধ হয় ভ্রম্নক্ষেপ করতে চাইছে না। বরং তারা যেটা ভালো মনে করছে সেটাই হয়তো চাপিয়ে দিতে চাইছে।' তারেক রহমান বলেন, 'এই অপ্রাপ্তি থাকার পরেও জনগণ কিন্তু এখনো এই সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চায়, তারা আস্থা হারাতে চাইছে না। তবে একটা প্রশ্ন উঠছে সরকার কি উল্টো জনগণের সঙ্গে আস্থা রাখতে চায়? কারণ জনগণের সঙ্গে সরকারের আস্থার সম্পর্ক নিবিড় থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের ঢাল-পালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না।' বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার দলের সমর্থনের কথা উলেস্নখ করে বলেন, 'আমরা আশা করছি, সরকার যেসব মৌলিক সমস্যা আছে সেই সমস্যাগুলোর সংস্কার সাধন করে একটি উপযুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেবে। তারা কাজ করছেন, কাজ করে চলেছে, আমরা তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছি।' তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে যেসব অন্তরায় রয়েছে সেগুলো এই সরকরকে দূর করতে হবে। এর বেশি কিছু করতে গেলে সময় যত বেশি যাবে তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। আমি কথাটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সমস্যাগুলো আছে এগুলো দ্রম্নত সম্পন্ন করতে হবে। আমি আশা করবো নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা এগুলো সংস্কার করেই অতিদ্রম্নত নির্বাচনে যাওয়াটাই হবে এদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণের।' \হজেটেবের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনারসহ টেক্সটাইল প্রকৌশলী নেতারা বক্তব্য রাখেন।