মায়ের কোলে ফিরেছে ৮ মাসের সেই শিশুটি

মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার এক নারী গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
এই সেই শিশু আরিসা জান্নাত জাইফা, যাকে গত ১৫ নভেম্বর আজিমপুরের বাসা থেকে ডাকাতরা অপহরণ করে নিয়ে যায় -ফাইল ছবি
ঢাকার আজিমপুরের একটি বাসায় ডাকাতির পর মালামালের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া আট মাস বয়সি সেই কন্যা শিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছের্ যাব। অপহরণের আলোচিত ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এক নারী বাহিনীটির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর গভীর রাতের্ যাব-১০ এর একটি বিশেষ দল সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে সেখানকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফাতেমা আক্তার শাপলা (২৭) নামে এক নারীকে। তার স্বামীর নাম মো. সেলিম হোসেন। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায়।র্ যাবের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শাপলা শিশু অপহরণের ঘটনা স্বীকার করেন। এমনকি শিশুটিকে কোথায় রাখা হয়েছে তাও জানিয়ে দেন। পরে অপহৃত কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার শিশুটিকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করের্ যাব। র্ যাব-১০ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে আরও জানান, উদ্ধার হওয়া শিশু জাইফার মা ফারজানা আক্তার। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করেন। তার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবারটি আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ৩ বছর যাবৎ বাস করছেন। গ্রেপ্তার শাপলাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ের্ যাব জানায়, অপহরণের এক সপ্তাহ আগে শিশুটির মায়ের সঙ্গে গ্রেপ্তার শাপলার যাতায়াতের সূত্র ধরে পরিচয় হয়। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিচয়ের সময় শাপলা নিজের নাম রাইসা বলে জানায়। তার বাড়ি নওগাঁ জেলায় বলেও মিথ্যা তথ্য দেন। শাপলা অবিবাহিত। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সচিবালয়ের পরিবহণ পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেন। সেই সুবাদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যানবাহনে \হযাতায়াতের সূত্র ধরে দু'জনের পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে শাপলা জানায়, তিনি যেহেতু অবিবাহিত তাই তার থাকার জন্য একটি সাবলেট বাসা ভাড়া পাওয়া গেলে খুব উপকার হয়। এজন্য শাপলা জাইফার মা ফারজানার সহযোগিতা চান। শাপলা জাইফার মাকে বলেন, 'আপনার বাসার যদি একটি রুম আমার কাছে ভাড়া দেন, তাহলে আমি পড়াশুনাও করতে পারব, পাশাপাশি আপনার মেয়েকে দেখাশুনাও করতে পারব।' শাপলার পাতা ফাঁদে পা দেন ফারজানা। পরে শাপলাকে একটি রুম সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। গত ১৪ নভেম্বর বিকালে শাপলা বাসায় এসে ফারজানাকে ভাড়া বাবদ অগ্রিম ২ হাজার টাকা দিয়ে যান। সেই সঙ্গে রাতে ওই বাসায় থাকেন। পরদিন সকালে শাপলা শিশুটির মাকে জানান, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে আসছে। পরদিন শুক্রবার ১৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শাপলা তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে ৩ জনকে বাসায় নিয়ে যান। বাসায় ঢুকে কথাবার্তার একপর্যায়ে শাপলা ও তার সঙ্গে থাকা তিনজন অস্ত্রের মুখে ফারজানা ও স্বামীকে জিম্মি করে ফেলেন। ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। র্ যাব কর্মকর্তা আরও জানান, ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা ফারজানার বাসায় থাকা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুটে নেয়। যাওয়ার সময় আচমকা জাইফাকে মুখ ছেপে ধরে কোলে তুলে নেয়। এ সময় শিশুর মাতা চিৎকার করার চেষ্টা করলে তাদের অপহরণকারীরা চড়-থাপ্পড় মারে। অপহরণকারীরা শিশুসহ মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে জাইফার মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। কারণ শাপলার কাছে জাইফার মায়ের মোবাইল নম্বর ছিল। এমন ঘটনার পর পরই সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবের্ যাব অভিযান শুরু করে। শেষ পর্যন্ত জাইফাকে উদ্ধার করের্ যাব। র্ যাব কর্মকর্তা তাপস কর্মকর্তা বলছেন, গ্রেপ্তার শাপলা একজন গৃহিণী। তিনি ২০১০ সালে তার পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় বসবাস শুরু করেন। ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকার একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। তবে পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি। ২০২৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। প্রায় ৪ মাস যাবৎ ঢাকার মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় একটি বাড়িতে তার স্বামীর নিজস্ব ফ্লাটে বসবাস করছেন।